হাজারীবাগের বিস্ফোরণ : পা হারানো দিলীপসহ শঙ্কাজনক অবস্থায় ২

আগের সংবাদ

পাঁচ কারণে বাড়ছে ডেঙ্গু!

পরের সংবাদ

জাতির স্বপ্নদিশারি নেত্রীর জন্মদিনে অভিনন্দন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাতির ভরসাস্থল জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। বছরের পর বছর যিনি দেশের ছোট-বড় সব সমস্যার চমৎকার ও নিখুঁত সমাধান দিয়ে চলেছেন, তার নাম শেখ হাসিনা। তিনি জাতির স্বপ্নদিশারি একই সঙ্গে অন্যতম প্রভাবশালী বিশ্বনেতাও। উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখান। স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ ও কৌশল শেখান। জাতির পিতা ও বঙ্গমাতার বড় সন্তান। তিনিই আমাদের নেত্রী, পরম বন্ধু শেখ হাসিনা।
দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সেই কালরাতে শাহাদাতবরণ করেন মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শহীদ শেখ কামাল, শহীদ শেখ জামাল, বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শহীদ শেখ রাসেল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শহীদ শেখ নাসেরসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্য। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেদিন বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার দুই কন্যা বেঁচে আছেন এটি বাঙালি জাতির জন্য সৌভাগ্য। তার সুফল জাতি আজ ভোগ করছে।
আমরা সবাই জানি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পর থেকেই বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে। সেই অপচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। মোট ২১/২২ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এর আগে ১৯৭৫ সালের পর তাদের বাংলাদেশে আসতে দেয়া হয়নি। ’৮১ সালের ১৭ মে নেত্রী যখন দেশে ফিরে আসেন সেদিন ছিল প্রবল বর্ষণ ও ঝড়।
তার মধ্যেও লাখ লাখ মানুষ বিমানবন্দর থেকে শুরু করে দীর্ঘ রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানান। আমার বয়সের অনেকেই সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। নব প্রজন্মের বই পড়া বা কারো কাছ থেকে শোনা ছাড়া সেদিনের ঘটনা জানার উপায় নেই।
সে সময়ের স্বৈরশাসক বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়নি। নেত্রীকে বঙ্গবন্ধুসহ শহীদদের জন্য রাস্তায় বসে মিলাদ ও দোয়া পড়তে হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা ’৮১ সাল থেকে দেশে গণতন্ত্র ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করেন। আজ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ মধ্য আয়ের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে এবং উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ। আজকে দেশ যে অবস্থানে আছে, এখানে পৌঁছানো এত সহজ ছিল না। বহু চড়াই-উতরাই পার হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এ গর্বের জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। এজন্য তার অদম্য সাহস, মনোবল, প্রজ্ঞা ও মানবদরদি বিরাট মনই তাকে সাহায্য করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপেও আমরা দেখেছি, দেশের মানুষের কাছে তিনি কত বেশি জনপ্রিয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি কথা প্রায় সময় বলেন, ‘জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করাই আমার মূল দায়িত্ব। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমার অন্যতম কাজ।’ এ কাজটি তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন। আমরা যদি লক্ষ্য করি, তিনি আশ্রয়হীনদের পর্যায়ক্রমে গৃহ তৈরি করে দিচ্ছেন। বৃদ্ধদের অবসর ভাতা দিচ্ছেন। অর্থাৎ মানুষের কল্যাণে যা যা দরকার সবই তো তিনি করছেন। স্বাস্থ্যসেবা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন।
বৈশ্বিক বিপর্যয় করোনার সময় দেখলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে টিকা সংগ্রহ করেছেন। সরকার টিকা ক্রয় করেছে কিছু অনুদানও পেয়েছে। কিন্তু জনগণকে বিনামূল্যে টিকা দেয়া হয়েছে। টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। অথচ তখন আমরা দেখলাম বিরোধী দলের যেখানে সরকারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া দরকার। সেখানে তাদের দায়িত্বশীল কেউ কেউ বলেছে, টিকা মানুষ মারার জন্য আনা হয়েছে।
এ কথা বলার পর সাধারণ মানুষের বিভ্রান্ত হওয়াই স্বাভাবিক। ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা আনার পরই এ কথাটি বলা হলো। যিনি বলেছেন, তিনি কিন্তু টিকা নিয়েছেন। অথচ তার দায়িত্ব ছিল এটি বলা যে, আমি ভুল বলেছিলাম, আমি টিকা নিয়েছি। আপনারাও নেন, তা বলেননি। এ জায়গাটিই শঠতা। এ কাজ করে তারা অভ্যস্ত।
করোনার সময় আমরা অনেক মূল্যবান জীবন হারিয়েছি। নামি-দামি মানুষ হারিয়েছি। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বহু নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। কারণ তারাই তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সাধ্যমতো সাহায্য-সহায়তা করেছেন। অন্যরা শুধু কথাই বলেছেন। সম্প্রতি আমরা দেখলাম করোনার টিকা নেয়ায় বিশ্বে ১ কোটি ৪০ লাখ লোকের জীবন রক্ষা পেয়েছে। আমরাও তো আছি এর মধ্যে।
আমি আগে উল্লেখ করেছি, শেখ হাসিনাকে অনেকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। একটি ঘটনার উল্লেখ করি, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ভাগ্যক্রমে গুলি তার গায়ে লাগেনি। সেদিন লক্ষ্য করলাম কী তীক্ষè উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহস শেখ হাসিনার! তার বহরে সাংবাদিকসহ অন্যদের গাড়িও ছিল। তিনি মাথা বের করে বললেন, বসে আছ কেন? গুলি করে সবগুলোর লাশ ফেলে দাও। বলার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তের মধ্যেই সন্ত্রাসীরা কিছু মোটরসাইকেলে এবং বাকিরা দৌড়ে পালিয়ে গেল। অথচ গাড়ি বহরে কারো কাছেই কোনো অস্ত্র ছিল না। কারো কাছে অস্ত্র নেই এ কথা তিনিও জানতেন। তারপরও গুণ্ডাদের তাড়ানোর জন্য ওই কথা বলেছেন। শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার প্রতিবাদে পরদিন ঢাকা শহরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল হয়।
আর একটি ঘটনার উল্লেখ করতে চাই। ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শপথ নেবে। শপথ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ যাবে কি না এ প্রশ্নে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা এসেছেন সুধাসদনে। দুপুর বেলা নেত্রী রান্না করছিলেন। গায়ে এপ্রোন। নেতারা বলছিলেন শপথ অনুষ্ঠানে গেলে স্বীকৃতি দেয়া হবে এবং নির্বাচন দেবে না। নেত্রী জিজ্ঞেস করেছিলেন, শপথ অনুষ্ঠানে না গেলে নির্বাচন দেবে এই নিশ্চয়তা কি দিতে পারেন? আরো জিজ্ঞেস করেছিলেন আমরা না গেলে বিএনপি কি যাবে না শপথ অনুষ্ঠানে? নেতারা বলেছিলেন বিএনপি যাবে না। পরে সিদ্ধান্ত হলো আওয়ামী লীগ শপথ অনুষ্ঠানে যাবে। আওয়ামী লীগ শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়ায় বিএনপি শপথ অনুষ্ঠানে যায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ শপথ অনুষ্ঠানে না গেলে বিএনপি শপথ অনুষ্ঠানে যেত। তাদের অনেকেই বঙ্গভবনের আশপাশে, রাজউক ভবনের পাশে গাড়িতে ছিলেন। শেষ মুহূর্তে দলের চেয়ারপারসনকে ডাকা হতো।
আওয়ামী লীগ শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়ায় তারা যায়নি। এখানেও নেত্রীর সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শিতাই সঠিক ছিল। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৬ জুলাই নেত্রীকে গ্রেপ্তার করে। নেত্রী গ্রেপ্তারের আগে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি বাণী লিখে যান। তা পরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও টিভিতে প্রচার হয়। আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো এবং দেশবাসী তার মুক্তির জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে।
দলের পক্ষ থেকে ২৫ লাখ লোকের স্বাক্ষরযুক্ত মুক্তির আহ্বান দেশ-বিদেশে প্রচার করা হয়। পরে ২০০৮ সালের ১১ জুন তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশ যান। বিদেশ থেকে দেশে ফিরতে তাকে বাধা দেয়া হয়। তাকে টিকেট দিতে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে নিষেধ করা হয়। নেত্রী তখন বলেছেন, ‘আমি আমার দেশের মানুষের কাছে ফিরবই। কেউ আটকাতে পারবে না।’ ওই সময় আমি একজন উপদেষ্টার সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেছি।
তিনি বলেছেন, আপনার নেত্রীকে বিদেশে থাকতে বলেন, আমরা মাথার মুকুট করে রাখব। দেশে আসলে আজীবন জেল খাটতে হবে। জেল থেকে জীবনেও মুক্তি পাবে না। তার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েও কোনো ব্যবস্থা নেননি। এই হলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা মহান নেতা শেখ হাসিনা।
ওই সময় একটি কথা প্রচলিত ছিল। মাইনাস টু। অর্থাৎ দুই নেত্রীকে বাদ দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে মাইনাস ওয়ান। অর্থাৎ যেভাবেই হোক শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরাতে হবে। একজনের কথা বললে দেখতে শুনতে খারাপ লাগে। তাই দুজনের কথা বলা। খেয়াল করলে আমরা লক্ষ্য করব একশ্রেণির গণমাধ্যম বিএনপির কোনো খারাপ কাজ খুব কষ্টে বললেও সঙ্গে আওয়ামী লীগও এক সময় এমন কাজ করেছে বলবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ২২ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকের বাড়িঘর লুটপাট করে বসতবাড়ি পুকুর বানিয়েছে। বাড়ির কোনো চিহ্ন রাখেনি।
সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের উৎসাহে ও সহযোগিতায় সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের পরও কোনো প্রতিশোধ নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, কোনো প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ নয়। জনগণের কল্যাণে কাজ কর। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনা ভোলা যায়? সরকারি মদত, সহযোগিতা ও পরিকল্পনায় শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়।
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ১৩, ১৪ ও ১৫ সালের যে অগ্নিসন্ত্রাস বিএনপি-জামায়াত জোট চালিয়েছে তা কল্পনার অতীত। আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস। রাস্তার গাছ কেটে সাবাড় করা। কী করেনি ওরা। জ্বালাও পোড়াও ধ্বংস- এই হচ্ছে ওদের মন্ত্র। এখনো তাই করছে। এই অপশক্তিকে প্রতিরোধ করা জরুরি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা আসলেই মহান। আজ তার জন্মদিনে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি জাতির স্বার্থে, আমাদের সবার স্বার্থে। জয়তু শেখ হাসিনা।

আবুল কালাম আজাদ : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়