সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীরীতি রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে সবাইকে

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০, এখনো নিখোঁজ অন্তত ২৭ : মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা

পরের সংবাদ

প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রধানমন্ত্রী : দেশবিরোধী অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সরকার ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যোগ্য জবাব দিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতার খুনিদের আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অর্থপাচারকারীসহ নানা অপরাধীরা এই অপপ্রচারের নেপথ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে সারাবিশ্বে চলার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে যে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছে তা সমুন্নত রাখার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান তিনি। নিউইয়র্কে তার অবস্থানকালীন হোটেল থেকে স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া ভার্চুয়াল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে এবং বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা ও সম্মান অর্জনের ধারাবাহিকতা রেখে মাথা উঁচু করে চলার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগকেই অপকর্মে জড়িত থাকার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বা অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সরকার এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে অন্যদের ছবক দিচ্ছেন- এমন ব্যক্তিদের চরিত্র ও অপকর্ম জনসমক্ষে তুলে ধরারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এদের কথায় কর্ণপাত করবেন না, বরং আমাদের উন্নয়নকে জনগণের সামনে তুলে ধরুন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে আপনার এলাকার কংগ্রেসম্যান, সিনেটর এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবহিত করুন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখুন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেটের আকারের তুলনামূলক চিত্র দেখে তাদের দ্বারা কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বিচার করতে পারবেন। বিএনপি আমলে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের চলমান অর্থবছরের বাজেট ছয় লাখ কোটি টাকার ওপরে।
মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প থেকে তাদের তহবিল প্রত্যাহারের বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে আসন্ন তীব্র খাদ্য সংকট সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে ভবিষ্যতে তা থেকে বাঁচতে সবাইকে আরো বেশি করে খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান জানান তিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যেহেতু একটি প্রকট খাদ্য সংকট আসন্ন, তাই দেশে আপনার স্বজনদের বলুন, বিভাজনের কারণে দেশের কোনো জমিই অনাবাদি রাখা যাবে না। এছাড়া বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটি ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।
এ সময় ভোট কারচুপি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি গুম, খুন এবং দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অস্ত্র বাণিজ্যসহ সব ধরনের অপকর্মের রাজনীতি চালু করা সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভোট কারচুপিতে বিএনপি চ্যাম্পিয়ন ছিল। তারা এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে

ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য রাজনীতিতে হত্যা, গুম, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং ঋণ খেলাপি সংস্কৃতির মতো সব খারাপ কাজের সূচনা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি জানান, তার দল সবসময় জনগণের অধিকার রক্ষায় বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ ক্যান্টনমেন্টে বন্দি অবস্থা থেকে জনগণের ভোটাধিকারের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ এখন আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও হত্যার সংস্কৃতির আশ্রয় নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনগণ কখনই তাদের কর্মকাণ্ডে সাড়া দেয় না। কারণ তারা হত্যা, দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অস্ত্র ব্যবসাসহ প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের মানুষকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের একজনও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। ইতোমধ্যে ১০ লাখ পরিবারকে বিনা খরচে বাড়ি দিয়েছি এবং জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য আয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন ভালো অবস্থায় আছে। তিনটি ব্যাংকসহ প্রবাসীদের সুবিধার্থে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সংকটকালে দেশের পাশে থাকার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজ দেশে আরো বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশন এবং উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কে এম শাখাওয়াত মুন জানান, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় সড়কপথে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসি এসে পৌঁছেছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে, প্রধানমন্ত্রী ১৫ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়ে যুক্তরাজ্য (ইউকে) সফর শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছান। নিউইয়র্কে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলায় ভাষণ দেন। ২০ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের এবং রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পাশাপাশি সরকার, রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নেন। আগামী ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়