এসপি হলেন পুলিশের ৪৭ কর্মকর্তা

আগের সংবাদ

সাশ্রয়ের নামে নিম্নমানের বই! : ছাপানো শুরু হয়নি, বছরের প্রথমদিন সব শিক্ষার্থীর বই পাওয়া অনিশ্চিত

পরের সংবাদ

শিল্পকলা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি : জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সংস্কৃতি হতে পারে প্রধান অস্ত্র

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সংস্কৃতি প্রধান অস্ত্রের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা যেমন আমাদের বাহ্যিক ভালো-মন্দ, সুন্দর-অসুন্দর দেখে নিজেদের তৈরি করে থাকি, তেমনি আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ ও ঐতিহ্যও জানিয়ে দেয় জাতি হিসেবে আমরা কতটা উন্নত ও আধুনিক। দেশের যুবসমাজকে আধুনিক, দক্ষ ও সংস্কৃতিমনস্ক জনশক্তিতে পরিণত করতে হলে তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে শিল্পকলা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন। সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৯ ও ২০২০ সালে ১৮ গুণীজন এবং দুটি সংগঠনকে শিল্পকলা পদক দেয়া হয়। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে আয়োজিত পদক প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কালের বিবর্তনে সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সংস্কৃতিতেও এর ছোঁয়া লেগেছে। আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে প্রতিনিয়ত আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভিনদেশি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটছে। তাই বিদেশি বা আকর্ষণীয় হলেই সবকিছু লুফে নেয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যতটুকু সামঞ্জস্য ততটুকুই গ্রহণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয়, বিজাতীয় ও অপসংস্কৃতির সবকিছু বর্জন করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আগে প্রতিটি পরিবারেই সকাল বেলা সংগীতসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের চর্চা হত। কিন্তু নগরসভ্যতার ক্রমবিকাশ, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার আর শহুরে জীবনের ব্যস্ততায়

পারিবারিক পর্যায়ে সংস্কৃতির চর্চা ক্রমেই কমে আসছে।
তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষয় রোধে সংস্কৃতি হচ্ছে রক্ষাকবচ। সমাজ থেকে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ দূর করতে সংস্কৃতির বিকাশ খুবই জরুরি। গ্রাম থেকে শহর, নি¤œবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত প্রতিটি স্তরে সংস্কৃতির চর্চা যত বেশি হবে, সমাজও তত বেশি আলোকিত হবে। আলোকিত সমাজই পারে মানবিক সমাজ গড়তে, একটি দেশ ও জাতির কাক্সিক্ষত সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে।
ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে আর যুব স¤প্রদায় ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, গেমসসহ বিভিন্ন অ্যাপসের পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত- মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তাদের কাছে মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপই বিনোদন আর খেলাধুলার প্রধান সামগ্রী। এভাবে চলতে থাকলে তারা নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকেই একদিন ভুলে যাবে। তাদের সুস্থ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। সংস্কৃতির চর্চা তৃণমূল বিশেষ করে পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মাদক-জঙ্গিবাদ ঠেকাতে সংস্কৃতি চর্চার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য নতুন প্রজন্মের মাঝে সংস্কৃতি চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে।
দেশীয় সংস্কৃতি চর্চায় সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, মাদক-জঙ্গিবাদেরের বিরুদ্ধে শিল্পকলা একাডেমি দেশব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। এটি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। এটি সংস্কৃতি বিকাশেও অবদান রাখবে।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, গুণীজনদের স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা জানানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। শিল্পকলা একাডেমির এই পদক শিল্পী ও শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা, প্রসার ও বিকাশে কাজ করে যাচ্ছি।
২০১৯ সালে শিল্পকলা পদকপ্রাপ্তরা হলেন- নাট্যকলায় মাসুদ আলী খান, কণ্ঠসংগীতে হাসিনা মমতাজ, চারুকলায় আবদুল মান্নান, চলচ্চিত্রে অনুপম হায়াৎ, নৃত্যকলায় লুবনা মরিয়ম, লোকসংস্কৃতিতে শম্ভু আচার্য্য, যন্ত্রসঙ্গীতে মো. মনিরুজ্জামান, ফটোগ্রাফিতে এম এ তাহের, আবৃত্তিতে হাসান আরিফ, সৃজনশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে ছায়ানট।
২০২০ সালের পদকপ্রাপ্তরা হলেন- কণ্ঠসংগীতে মাহমুদুর রহমান বেণু, চারুকলায় শহিদ কবীর, যন্ত্রসংগীতে মো. সামসুর রহমান, ফটোগ্রাফিতে আ ন ম শফিকুল ইসলাম স্বপন, চলচ্চিত্রে শামীম আখতার, নাট্যকলায় মলয় ভৌমিক, আবৃত্তিতে ডালিয়া আহমেদ, লোকসংস্কৃতিতে শাহ আলম সরকার, নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ, সৃজনশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে দিনাজপুর নাট্য সমিতি। পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজনদের একটি করে স্বর্ণপদক, সনদপত্র ও এক লাখ টাকার চেক দেয়া হয়। আলোচনা সভা ও পদক প্রদান শেষে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের উপস্থপনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
২০১৩ সাল থেকে শিল্পকলা পদক দিয়ে আসছে শিল্পকলা একাডেমি। করোনা মহামারির কারণে ২০১৯ ও ২০২০ সালের পদক পিছিয়ে এ বছর দেয়া হল। কণ্ঠসংগীত, যন্ত্রসংগীত, নৃত্যকলা, নাট্যকলা, চারুকলা, আবৃত্তি, ফটোগ্রাফি, যাত্রাশিল্প, চলচ্চিত্র ও লোকসংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক গবেষণা এই ১০টি ক্ষেত্রে পদকটি দেয়া হয়ে থাকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়