রাজপথ বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় : কাদের

আগের সংবাদ

সাফ জয়ীদের লাগেজ ভাঙল কে

পরের সংবাদ

খাদ্যে ভেজাল ও প্রচলিত ভেজাল নির্ণয় কৌশল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খাদ্যে ভেজাল মেশানো হলো এমন একটি কাজ যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে খাবারে নিম্নমানের বস্তু মেশানো হয় অথবা কিছু মূল্যবান খাদ্য উপাদান অপসারণ করে খাদ্যের গুণগতমান কমিয়ে বিক্রি করা হয়। ভেজাল মেশানো খাদ্য বিপজ্জনক। কারণ এটা খাদ্যকে বিষাক্ত করে এবং স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভেজাল খাদ্য পরিমাণে বৃদ্ধি ও তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থেকেও বঞ্চিত করতে পারে। সাধারণত ভেজাল মেশানো হয়, এমন খাদ্যগুলো হলো দুগ্ধজাত খাদ্য, দানাদার শস্য, আটা, ডাল, বেসন, ভোজ্যতেল, মসলা (আস্ত এবং গুঁড়া), কফি, চা, মিষ্টান্ন (কনফেকশনারি), বেকিং পাউডার, অন্য পানীয়, ভিনিগার এবং কারি পাউডার।
বালি, মার্বেলকুচি, পাথর, মাটি, অন্যান্য ময়লা, কাঁচের মতো পদার্থ, চকের গুঁড়া, পানি, খনিজ তেল, ফর্মালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ক্ষতিকারক রঙ ইত্যাদি ভেজাল খাদ্যে অসৎ উদ্দেশ্যে মেশানো হয়। আবার রোগ ও পোকা দমনকারী ওষুধের অবশেষ, ইঁদুরের বর্জ্য, লার্ভা ঘটনাচক্রে খাদ্যে ভেজাল হিসেবে মেশানো হয়। সঙ্গে থাকে ধাতব দূষক অর্থাৎ পানির মধ্যে থাকা সীসা, দস্তার খেলনা, রঙ, রাসায়নিক কারখানার বর্জ্যপানি ইত্যাদি।
ওজন বৃদ্ধির জন্য সুজিতে মেশানো হয় লৌহচূর্ণ। একটি চুম্বক সুজির মধ্যে ঘুরালে লৌহকণা চুম্বকের গায়ে উঠে আসবে। ডালে ভেজাল হিসেবে মেশানো হয় লেড ক্রোমেট। ৫ গ্রাম ডাল ৫ গ্রাম পানির সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে নাড়াতে হবে। তারপর, কয়েক ফোঁটা হাইড্রোক্লোরিক এসিড যোগ করতে হবে। মেশানোর পর রঙ গোলাপি হলে বুঝতে হবে ডালে লেড ক্রোমেট আছে। গুড়ে মেশানো হয় মেটানিল ইয়োলো এবং চকের গুঁড়া। গুড়ের দ্রবণে কয়েক ফোঁটা হাইড্রোক্লোরিক এসিড যোগ করলে দ্রবণের রঙ ম্যাজেন্টা (লাল-নীল) হলে মেটানিল ইয়োলোর অস্তিত্ব থাকে এবং একটি টেস্ট টিউবে গুড় অল্প পরিমাণে দ্রবীভূত করতে হবে, চকের গুঁড়া থাকলে টেস্ট টিউবের তলায় থিতিয়ে পড়বে।
ঘি-মাখনে ভেজাল হিসেবে মেশানো হয় বনস্পতি (ডালডা জাতীয়)। ১ চা চামচ চিনি, ১০ মিলি হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্রবীভূত করতে হবে। তারপর ১০ মিলি ঘি গলিয়ে তার মধ্যে যোগ করে ১ মিনিট ভালোভাবে নাড়াতে হবে। মিশ্রণটি ১০ মিনিট ঝাঁকাতে হবে। মিশ্রণটিকে ১০ মিনিট রেখে দিলে জলীয় অংশ যদি লাল রঙ ধারণ করে তাহলে বুঝতে হবে বনস্পতি আছে। দুধে মেশানো হয় পানি এবং ফর্মালিন। ল্যাক্টোমিটারের সাহায্যে দুধের আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপতে হবে। সাধারণত দুধের আপেক্ষিক গুরুত্ব = ১.১০৩০ থেকে ১.০৩৪। আবার একটি টেস্ট টিউবে ১০ মিলি দুধ নিয়ে তাতে ৫ মিলি গাঢ় সালফিউরিক এসিড টেস্টটিউবের ভেতরের গা বেয়ে ধীরে ধীরে এমনভাবে ঢালতে হবে যেন টেস্ট টিউব না নড়ে। যদি দুটি তরলের সংযোগস্থলে নীল বা বেগুনি রঙের বলয় সৃষ্টি হয় তাহলে বুঝতে হবে দুধে ফর্মালিন মেশানো হয়েছে।
মরিচের গুঁড়ায় মেশানো হয় লাল রঙ ও কাঠের গুঁড়া। একটি পাত্রে পানি নিয়ে তার মধ্যে মরিচের গুঁড়া ছড়িয়ে দিলে কাঠের গুঁড়া ভেসে থাকবে এবং রঙ মেশানো থাকলে সেই রঙ ধারণ করবে। হলুদে মেশানো হয় মেটানিল ইয়োলো ও স্টার্চ। যখন হলুদের দ্রবণে গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এসিড মেশানো হয় তখন এটা ম্যাজেন্টা রঙে পরিণত হবে যদি হলুদের গুঁড়াতে মেটানিল ইয়োলো মেশানো থাকে। একটি আলুর টুকরাতে সামান্য লবণ ছিটিয়ে ১ মিনিট পর যদি এটি নীল বর্ণ ধারণ করে তবে বুঝতে হবে লবণে আয়োডিন যুক্ত করা আছে। নীল রঙ না হলে বুঝতে হবে লবণে আয়োডিন নেই।
প্রতিদিন বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ অনেক রকম অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করছে। খাদ্যের এই অনিরাপদ অবস্থা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভয়ানকভাবে প্রভাবিত করছে যা অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ক্যান্সার, কিডনি নষ্ট, ডায়রিয়াজনিত অপুষ্টি ইত্যাদির সৃষ্টি করছে। তাই নিরাপদ খাদ্য প্রয়োজন। তথ্যসূত্র : খাদ্যভিত্তিক পুষ্টি (বারটান)।

আছিয়া বেগম : প্রধান শিক্ষক, উত্তরসুর কুলচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়