হাসপাতালে ভর্তি আরো ৩৮১ রোগী : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান মন্ত্রীর

আগের সংবাদ

মহা আড়ম্বরে সমাহিত মহারানি

পরের সংবাদ

আরাকান আর্মির ঘাড়ে দায় চাপাল মিয়ানমার > জাতিসংঘ ও আসিয়ানে জানাবে বাংলাদেশ : সীমান্তে গোলাবর্ষণ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের বারবার গোলাবর্ষণের ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে আখ্যা দিয়ে এর দায় আরাকান আর্মির উপর চাপাতে চাইছে দেশটি। শপয তাদের ঋঁংরভপশ সন্তুষ্ট নয় বাংলাদেশ। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে ২৩ সেপ্টেম্বর ভাষণ দিবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ভাষণে স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু গুরুত্ব পাবে। সেই সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তে গোলাবর্ষণের বিষয়টিও উঠতে পারে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ প্রসঙ্গে গতকাল বলেন, মিয়ানমারের বারবার গোলা বর্ষণের বিষয়টি জাতিসংঘে জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি দেখছেন। গতকাল সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সীমান্তে গোলাবর্ষণ ও হতাহতের ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে মোট চারবার তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। সবশেষ গতকাল রবিবার সকালে তাকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। মিয়ানমার অনুবিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক তলব করে দেশটির রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ের সঙ্গে প্রায় আধঘণ্টা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে বৈঠকে রাষ্ট্রদূতকে এককাপ চাও দেয়া হয়নি। আপ্যায়ন না করার অর্থ হচ্ছে- বাংলাদেশ এ বিষয়ে চরম অখুশি। মিয়ানমারের এমন আচরণ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানেও যাবে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, বান্দরবান সীমান্তে গোলাবর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার এর দায় ঠেলে দিয়েছে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির উপর। দেশটির দাবি, আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ চুরি করে বাংলাদেশে গুলি

করছে, যাতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়, বাংলাদেশ মিয়ানমারকে অবিশ্বাস করে। সীমান্তে গোলাবর্ষণের প্রতিবাদে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে গতকাল তলব করার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে তিনি এই ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খোরশেদ আলম গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। মিয়ানমারের দূতের বক্তব্য তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব জানান, অং কিউ মোয়ে দাবি করেছেন, এগুলো (গোলাবর্ষণ) আসলে একটা দুর্ঘটনা। রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, মিয়ানমার আর্মি বলছে আরাকান আর্মি তাদের গুলি-অস্ত্র চুরি করে বাংলাদেশে গুলি করছে। যাতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। বাংলাদেশ যাতে মিয়ানমারকে অবিশ্বাস করে। আসলে কে দায়িত্ব নেবে, তা নিরূপণ করা আসলে কঠিন। তারা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়েও গোলা পাঠিয়ে থাকতে পারে। তারা (মিয়ানমার) অনেক সময় এটাও বলে থাকে বা এমন দোষও দেয়, আরাকান আর্মি আমাদের এখান থেকে গিয়ে হামলা করে। ঢাকার উদ্বেগের বিষয়ে মিয়ানমারের দূত কী বলেছেন- এই বক্তব্য তুলে ধরে খোরশেদ আলম বলেন, রাষ্ট্রদূত আমাদের তেমন কিছু জানাননি। তিনি জানিয়েছেন, আমাদের এই বক্তব্যগুলো নেপিডোকে জানাবেন। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আপনাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় আপনারা সামলাবেন। এটা যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশের সীমান্তের এপারে ছড়িয়ে না পড়ে। এ বিষয়ে সতর্ক হবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা মিয়ানমারকেই নিতে হবে।
খোরশেদ আলম আরো বলেন, মিয়ানমারের কোনো গোলা যেন আমাদের দেশে না আসে, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। সেটা সেখার দায়িত্ব মিয়ানমারের। বাংলাদেশ সব সময়ই দায়িত্বশীল ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র। আমরা অনেক দিনই ধৈর্য ধরে এই বিষয় দেখে আসছি। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা দ্রুত আপনাদের সমস্যা সমাধান করুন। যাতে আমাদের এখানে আর রক্তারক্তি না হয়। আমাদের এখানে যেন কোনো প্রাণ আর না যায়। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে আমরা যে বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়েছি, তাতে কোনো দুর্বলতা নেই। যা অনেকেই নতজানু বলে থাকে তার কোনো কিছুই আমাদের বক্তব্যে নেই। সেই ধরনের কথাই আমরা বলছি, যা আমাদের শক্ত অবস্থানকেই তুলে ধরে।
এদিকে সীমান্তে মিয়ানমার সেনা মোতায়েন করলেও এপারে এখনো সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি দিয়েই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছে বাংলাদেশ। আপাতত এর বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, সব গোয়েন্দা সংস্থা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডকে সতর্ক করা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সচিব বলেন, অমরা আজ উচ্চপর্যায়ের একটা মিটিংও করেছি। বাংলাদেশের যত প্রকার এজেন্সি আছে, তাদের নিয়ে। আমরা বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে বলে দিয়েছি বর্ডারে সজাগ থাকতে। তারা তাদের প্রয়োজন মতো সদস্য যেখানে যতটুকু প্রয়োজন তা মোতায়েন করবে। এ ছাড়া কোস্টগার্ডকে বলেছি, সাগর দিয়েও যেন কোনো রোহিঙ্গা বা অন্য কারো কোনো অনুপ্রবেশ না ঘটে।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আসিয়ানের যে রাষ্ট্রদূতরা ঢাকায় আছেন তাদের ডেকে এই ঘটনার ব্র্রিফ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে তাদের আমরা জানাতে পারি। বারবার প্রতিবাদ জানিয়েও মিয়ানমারের সমস্য সমাধান করা যাচ্ছে না। মিয়ানমার এই বিষয়ে যে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। প্রতিবেশী হিসেবে আমরা চাই না এর পুনরাবৃত্তি ঘটুক। আমরা এভাবে এসব ঘটনা থেকে কীভাবে মিয়ানমারকে বিরত রাখা যায়, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়