মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

নবজাগরণে জীবনের নবযাত্রা : র‌্যাবের পরীক্ষামূলক প্রকল্পে ৩৬ জনকে প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

আজিজুর রহমান জিদনী, কক্সবাজার থেকে : সমুদ্র পাড়ের মানুষ হওয়ায় পানির সঙ্গে আব্দুল হামিদের বোঝাপড়াটা ছোটবেলা থেকেই। পর্যটন নগরীতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে কফি ফেরি করলেও ঢেউয়ের সঙ্গে তার মিতালি জন্মগত। সাগর তাকে সবসময়ই টানে ভেসে বেড়াতে। এর মধ্যেই সাগরে সার্ফিং দেখে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে বেড়ানোর ইচ্ছাটা আরো প্রবল হয়ে উঠে। মোবাইলে ইন্টারনেট ঘেঁটে জানতে শুরু করেন এ বিষয়ক নানা খুঁটিনাটি। জানতে পারেন এখান থেকে আয় রোজগারও করা যায়, দেশবিদেশে অংশ নেয়া যায় নানা প্রতিযোগিতায়। তবে স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রশিক্ষণ ছাড়াও আর্থিক অসংগতিসহ কিছু বিষয়। কক্সবাজার মাদকপ্রবণ এলাকা হওয়ায় অর্থযোগাড়ে বিপথে যাওয়ার চিন্তাও আসে মাথায়। তবে এর মধ্যেই র‌্যাবের ‘নবদিগন্তের পথে’ প্রশিক্ষণ কর্মশালার কথা জানতে পারেন। পরে র‌্যাবের মাধ্যমে ১৫ দিনের সার্ফিং প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন স্বপ্নের পথে হাঁটা শুরু করেছেন আব্দুল হামিদ। এখন দেশের পক্ষ হয়ে সার্ফিং প্রতিযোগিতায় জাতীয় পতাকা তুলে ধরতে চান তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে শুধু আব্দুল হামিদই নয়, একই কথা জানান তার মতো আরো ৫টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া তরুণ-তরুণীরা। সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী করার প্রয়াস নিয়ে ‘নবজাগরণ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে র‌্যাব। এখানে অপরাধের ঝুঁকিতে থাকা ৩৬ তরুণ-তরুণীকে সাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কক্সবাজার থেকে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধ ঝুঁকিতে থাকা লোকদের চিহ্নিত করে এ প্রকল্পের আওতায় এনে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্যও উৎসাহিত করবে এ বাহিনী। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজার মাদকপ্রবণ এলাকা। এখানে অনেকেই নানা পরিস্থিতিতে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। আর নবজাগরণ হলো র‌্যাবের আর্লি ইন্টারভেনশন বা দ্রুত সমাধান প্রকল্প। এ প্রকল্পে যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা এখনো অপরাধে জড়াননি। তবে জড়ানোর ঝুঁকিতে ছিলেন। এ প্রকল্পের স্লোগান হলো ‘অপরাধকে না বলুন’। প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যটননির্ভর পেশা যেমন হোটেল-রেস্টুরেন্টে সার্ভিস বয়, ফটোগ্রাফার, টুরিস্ট গাইড, ড্রাইভিংকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পরিবারের নারী সদস্যদের দেয়া হচ্ছে সেলাই প্রশিক্ষণ।
এ কর্মশালার আওতায় সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেয়া আদিবাসী তরুণী লাম নু খাই মার্মা ভোরের কাগজকে জানান, নানাভাবে পিছিয়ে থাকলেও এ প্রশিক্ষণ তার জীবনে আশার আলো নিয়ে এসেছে। পাশাপাশি বিনামূল্যে দেয়া সেলাই মেশিন তাকে স্বাবলম্বী করেছে। তিনি এখন সুন্দর ও স্বনির্ভর জীবনযাপন করতে চান। হাউজ কিপিং প্রশিক্ষণ নিয়ে কক্সবাজারের অভিজাত হোটেলে লং বিচে কাজের সুযোগ পেয়েছেন সাবরিনা ইয়াসমিন সোনালী। এ তরুণী ভোরের কাগজকে বলেন, এ প্রশিক্ষণ তাকে আত্মনির্ভর করাসহ স্বাবলম্বী করেছে। তিনি কাজের পাশাপাশি কক্সবাজার সিটি কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকে পড়ছেন।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাই শুধু নয়, তাদের অভিভাবকরাও র‌্যাবের এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। কক্সবাজার হাজিপাড়া পাওয়ার হাউজের বাসিন্দা হেলাল দেওয়ান জানান, তার ছোট ভাই নুরুল আমিন মুন্না কিছুই করতেন না। মাদকপ্রবণ এলাকা হওয়ায় তাকে নিয়ে খুব আতঙ্কে থাকতেন সবাই। তবে র‌্যাবের দেয়া গাড়ি চালনা প্রশিক্ষণ তার ভাইকে সুযোগ করে দিয়েছে কাজ করার। অভিভাবক কামালও একই কথা জানান।
র‌্যাব মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পরীক্ষামূলক প্রকল্পে আমরা ৩৬ জনকে নির্বাচিত করেছি। প্রশিক্ষণের জন্য চার-পাঁচজন করে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। যাদের নির্বাচন করা হয়েছে, তারা অপরাধের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য আইকন হবেন।
তিনি আরো বলেন, যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের বয়স ২০-৩০ বছর। তারা কোনো উৎপাদনশীল কাজে জড়িত নন। কেউ স্কুল থেকে ঝরে পড়েছেন, কেউ বেকার, কেউ আবার অল্প শিক্ষিত। আবার কেউ ভবঘুরে টাইপের। কেউ ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করলেও মানসম্মতভাবে ছবি তুলতে পারেন না। উপার্জন বহুমুখী করতেই তাদের নবজাগরণের আওতায় আনা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়