পল্টনে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য-হকার সংঘর্ষে আহত ৬

আগের সংবাদ

জোয়ারের পানিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি : কলাপাড়ার ৬০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই কাঁচা

পরের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : নতুন করে আরো ৮টি নদীর পানি ভাগাভাগি করতে আলোচনায় সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এই ৮টি নদী হচ্ছে- সোনাই, বরদাল, মহানন্দা, হাওড়া, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা ও ধলা। গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে বিষয়টি প্রথমবারের মতো উত্থাপন হয়। এরপর সদ্য সমাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরে তা উত্থাপিত হলে দুই দেশের মধ্যে এই ৮টি নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনায় রাজি হয় প্রতিবেশি দেশ দুটি। এরফলে এখন এই ৮টি নদীর পানির বিষয়ে কারিগরি দিক খতিয়ে দেখে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দুই দেশ নদীগুলোর পানি ভাগাভাগি নিয়ে চুক্তি করবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। নদীগুলো অনেকটা অপরিচিত হলেও তাদের গতিপথ ভারত থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশে এসে শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। এরমধ্যে ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি ভাগাভাগির চুক্তি হয়েছে। এর ২৫ বছর পর সম্প্রতি কুশিয়ারা নদী থেকে পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়। বাকি ৫২টি নদীর মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে দুধকুমার, ধরলা, গোমতি, মনু, খোয়াই ও মুহুরি নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা চলছে। এই ৬টি নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও আলোচনা অনেকটা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরে সোনাই, বরদাল, মহানন্দা, হাওড়া, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা ও ধলা- নদীগুলোর পানি ভাগাভাগির বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে আলোচনা শুরু হয়। সব মিলিয়ে ৫৪টি নদীর মধ্যে ২টির পানি চুক্তি হয়েছে। দুই দফায় ১৪টি নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চলছে। ১৪টি নদীর পানি ভাগাভাগির আলোচনা কবে শেষ হবে, তা আপাতত বলতে পারেনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত ঢাকা সফর করতে পারেন। এ সময় পানি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে বৈঠক হবে তাতে বেশ কিছু অগ্রগতি হবে।

জানতে চাইলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, ৫৪টির মধ্যে দুটি নদীর পানির সমস্যা সমাধান হয়েছে। দুধকুমার, ধরলা, গোমতি, মনু, খোয়াই ও মুহুরি নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা শেষ পর্যায়ে। এখন আমরা ভারতের কাছে জানতে চেয়েছি- এই ৬টি নদীর উজানে কোনো বাঁধ কিংবা অন্য কোনো দিকে পানির প্রবাহ নেয়া হয়েছে কিনা। ভারত এসব তথ্য জানানোর পর এই ৬টি নদীর পানি ভাগাভাগি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তবে তিনি এও বলেন, একসঙ্গে হয়ত ৬টি নদীর পানি ভাগাভাগি চুক্তি হবে না। দুটি করে চুক্তি হতে পারে। নতুন আরো ৮টি নদীর পানির বিষয়ে তিনি বলেন, সদ্য শেষ হওয়া জেআরসি বৈঠকে সোনাই, বরদাল, মহানন্দা, হাওড়া, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা ও ধলা নামের নদীগুলোর পানি ভাগাভাগি বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ভোরের কাগজকে বলেন, এই ছোট নদীগুলোর বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য দুই দেশের কাছেই নেই। কারণ বাংলাদেশ-ভারত কেউই তা খেয়ালও করে না। এরফলে এটি চাপা পড়েছিল। এখন আলোচনা শুরু হওয়ায় তা আবার সামনে এসেছে।
নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, সোনাই নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। তারপর এটি মাধবপুর উপজেলার খাস্তি নদীতে পড়েছে। মাধবপুর নদীবন্দর এই সোনাই নদীর তীরে। মহানন্দা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী, এর দৈর্ঘ্য ৩৬০ কিলোমিটার। হিমালয় পর্বতের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলায় উৎপত্তি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এটি বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা দিয়ে প্রবেশ করে তেতুলিয়া নাম ধারণ করে। এরপর তেতুলিয়া পুরাতন বাজার দিয়ে আবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করে, পরে মালদা জেলা হয়ে আবার বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের কাছে প্রবেশ করে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। বৃষ্টির জল এই নদীর প্রবাহের প্রধান উৎস। ফলে গরমকাল ও শীতকালে নদীর পানি কমে যায়, আর বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই কূল ছাপিয়ে বন্যা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আরেকটি অভিন্ন হাওড়া নদী। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি নদী। নদীটিতে সারাবছর পানিপ্রবাহ থাকে না। তবে জোয়ারভাটার প্রভাব আছে এই নদীতে। হাওড়া নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে আখাউড়া উপজেলার তিতাস নদীতে মিলিত হয়েছে। এই নদীর ত্রিপুরা অংশের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের মেঘালয়ের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলা এবং বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝর্ণাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। অবশ্য এক সময় সমগ্র নদীটি সিমসাং নামে পরিচিত ছিল। ৬৮৬ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ অত্রাঞ্চল দখল করে নেয়ার পর থেকে নদীটি সোমেশ্বরী নামে পরিচিতি পায়। মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারা বাজার হয়ে বাংলাদেশের রাণীখং পাহাড়ের কাছ দিয়ে সোমেশ্বরী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রাণীখং পাহাড়ের পাশ বেয়ে দক্ষিণ দিক বরাবর শিবগঞ্জ বাজারের কাছ দিয়ে সোমেশ্বরী নদী বরাবর পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। সেই পথে কুমুদগঞ্জ বাজার হয়ে কোনাপাড়া গ্রামের সামনে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাকলজোড়া, সিধলি, কলমাকান্দা, মধ্যনগর হয়ে ধনু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে সোমেশ্বরী। সোমেশ্বরীর মূলধারা তার উৎসস্থলে প্রায় বিলুপ্ত। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোন মৌসুমে পানি প্রবাহ থাকে না। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে পাহাড়িয়া ঢলে সোমেশ্বরী বরাবর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে নতুন গতিপথের সৃষ্টি করেছে। যা স্থানীয় ভাবে শিবগঞ্জ ঢালা নামে খ্যাত। বর্তমানে এ ধারাটি সোমেশ্বরীর মূল স্রোতধারা। এ স্রোতধারাটি চৈতালি হাওর হয়ে জারিয়া-ঝাঞ্জাইল বাজারের পশ্চিমদিক দিয়ে কংশ নদী সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে পাহাড়িয়া ঢলে আত্রাখালি নদী নামে সোমেশ্বরী নদীর একটি শাখার সৃষ্টি হয়। সুসং দুর্গাপুর বাজারের উত্তর দিক দিয়ে সোমেশ্বরী নদী থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে আত্রাখালী। কিছু দূর এগিয়ে সোমেশ্বরীর মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আত্রাখালি নদী এখন বেশ খরস্রোতা। আবার সা¤প্রতিক সময়ে ২০১৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর আত্রাখালি থেকে নয়া গাঙ নামের আরো একটি স্রোত ধারা উত্তর দিকে সৃষ্টি হয়েছে। আরো ভাটিতে সোমেশ্বরীর শাখা নদীর সৃষ্টি হয়েছে গুনাই, বালিয়া ও খারপাই।
যাদুকাটা নদী বা যদুকাটা নদী বা জাদুকাটা-রক্তি নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ জেলার একটি নদী। এই নদীতে সারাবছরই পানিপ্রবাহ থাকে। তবে সাধারণত স্বল্প বন্যায় নদীর দুকূল প্লাবিত হয়। যাদুকাটা নদী ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় হতে উৎপত্তি হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে তাহিরপুরের মধ্যে নদীটি প্রবেশ করে ঈষৎ দক্ষিণ-পূর্বমুখী হয়ে এঁকেবেঁকে পুনরায় বিশ্বম্ভরপুরে গিয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে জামালগঞ্জ উপজেলা শহরের কাছে নয়া সুরমা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই নদীর তীরে অবস্থিত আনোয়ারপুর ও দুর্লভপুর নদীবন্দর।
ধলা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি ভারতের মেঘালয় এবং বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলার একটি নদী। ধলা নদীতে জোয়ারভাটার প্রভাব নেই। ধলা নদী ভারতের আসাম-মেঘালয় রাজ্য থেকে আগত ডোবা চ্যানেল হতে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ দিয়ে প্রবেশ করে পিয়াইন নদীর মাধ্যমে সুরমা নদীতে মিশেছে। বরদাল নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার একটি নদী। এটি ভারতের আসামের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীটির প্রবাহপথে বড়লেখা উপজেলা অবস্থিত। নদীটি মূলত বড়লেখা ও বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং সেই কারণে বলা যায় এটি সিলেট জেলা ও মৌলভীবাজার জেলাকে পৃথক করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়