২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

বিনম্র শ্রদ্ধা ড. আকবর আলি খান : বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সময়টা হয়তো হারানোর। একের পর এক শুধু হারিয়ে চলেছি। প্রস্থান হচ্ছে কিংবদন্তির, কখনো নক্ষত্রের। অন্তহীন পথে বিদায় নিচ্ছেন তারা। ৪ সেপ্টেম্বর হারিয়েছি সংগীত জগতের একজন কীর্তিমান মানুষ গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে। যিনি বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করতে রেখেছেন অসামান্য অবদান। তার সাফল্য, চলে যাওয়ার গল্প শোনাতে শোনাতে খসে পড়ল আরো একটি নক্ষত্র। বিদায় নিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভাবান একজন মানুষ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান। তিনি শুধু এ দেশ পরিচালনায় উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন না। একাধারে ছিলেন একজন গুণী লেখক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অর্থনীতিবিদ। এ দেশের ইতিহাসের সঙ্গে, দেশের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় একজন প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে তিনি সারাটা জীবন কাজ করে গেছেন। জীবনের শেষ বয়সেও একজন পূর্ণকালীন লেখক হিসেবে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন মানুষটি। তার প্রকাশিত ১৭টি গ্রন্থে লিখেছেন নানা বিষয়ে, নানা আঙ্গিকে। যা পাঠক হৃদয়েও বেশ সমাদৃত হয়েছে। তার লেখা সবশেষ আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘পুরনো সেই দিনের কথা’। যেখানেও তিনি বর্ণনা দিয়েছেন গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠা একজন কিশোরের সাধাসিধা জীবন থেকে পরবর্তী সময়ে দেশ, দশের প্রয়োজনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের কথা।
ড. আকবর আলি খানের জন্ম ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে। স্কুল জীবন পার করেছেন নিজ গ্রামেই। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। সেখান থেকে ১৯৬১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন ইতিহাস নিয়ে। ১৯৬৪ সালে তিনি ইতিহাসে স্নাতক এবং ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে তিনি ১৯৭৭ সালে কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পুনরায় স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ দেশের মুক্তির সংগ্রামে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম এই আকবর আলি খান। মুক্তিযুদ্ধের একজন অগ্রণী মানুষ ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল অনেক বেশি। তবে যখন মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি তখন অনেক সরকারি কর্মচারী লিখিত অনুমতি ছাড়া অস্ত্র জোগান দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন ড. আকবর আলি খান নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, খাদ্য ও অর্থ জোগান দেয়ার আদেশ প্রদান করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌঁছে দেন। ড. আকবর আলি খানের এসব কর্মকাণ্ডে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তার অনুপস্থিতিতে বিচার করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
এক বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন ছিল সদ্য চলে যাওয়া বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ড. আকবর আলি খানের। একটি সফল জীবন ছিল তার। কর্মমুখর, অনন্য এবং অতুলনীয়। স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সভাপতি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিবন্ধকতার মুখে পদত্যাগ করেন আকবর আলি খান। এরপর অবসরে যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে। সবশেষ কর্মজীবনে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। গত ৮ সেপ্টেম্বর স্পষ্টবাদী এই মানুষের চলে যাওয়ায় শুধু একটি যুগের অবসান ঘটল না, বরং সময়ের সাহসী কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হলো। আলোর প্রদীপ নিভে গেল। এর মধ্য দিয়ে জাতি বড় একটি নক্ষত্র হারাল। তবে তার কর্মজীবন, আদর্শ ছিল আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার। এ দেশের জন্য তার পরিশ্রম, অবদান ছিল অতুলনীয়। তার চিন্তা-চেতনার বাকি পথগুলো আমাদের নতুন প্রজন্মের দ্বারা বাস্তবায়িত হবে এমন প্রত্যাশা রইল। সবশেষ অকুণ্ঠ চিত্তে সত্য প্রকাশ করা এ কিংবদন্তির প্রয়াণে বিনম্র শ্রদ্ধা।

রিয়াদ হোসেন
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়