২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

দাউদকান্দিতে অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি : দাউদকান্দিতে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ার। বৈধভাবে যেসব হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে তাতেও স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। সেখানে রয়েছে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব। অন্যদিকে অনভিজ্ঞ জনবল দিয়ে চালানো হচ্ছে সেবা কার্যক্রম। স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন বছরে দুই থেকে তিনবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কিছু জরিমানা করলেও পরবর্তী সময় মনিটরিং না থাকায় অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো দিব্যি বাণিজ্য করে যাচ্ছে। প্রকারান্তরে এদের হাতে জিম্মি হয়ে রোগীরা হচ্ছেন প্রতিনিয়ত প্রতারিত ও সর্বস্বান্ত। হাতেগোনা কয়েকটির অনুমোদন (লাইসেন্স) থাকলেও অধিকাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই।
জানা যায়, চলতি বছরের মে মাসে অবৈধ এবং নিয়মনীতি না মানা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু দাউদকান্দিতে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এ উপজেলায় প্রায় ৯০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক, ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ার থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তালিকায় রয়েছে ৬৭টি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তালিকানুযায়ী ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স থাকলেও হালনাগাদ নবায়নকৃত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ২১টি। ১৯টি প্রতিষ্ঠানের কোনো কাগজপত্রই নেই। তালিকার বাইরে ২৩ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে। দুইবারের অভিযানে দাউদকান্দিতে ৮টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হলেও কয়েকটি এখনো চলছে। কীভাবে চলছে এমন প্রশ্নে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান বলেন, কাগজপত্র না থাকায় আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন চলছে কিনা জানি না।
চটকদার নামে চলা এসব বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। তাদের অনেকেরই নেই রোগ নির্ণয়ের মানসম্মত যন্ত্রপাতি বা ল্যাব টেকনোলজিস্ট। ধার করা পার্টটাইম ডাক্তার দিয়ে চলছে জটিল অপারেশনসহ নানা চিকিৎসা।
সরজমিন ঘুরে জানা যায়, এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ সার্জন, গাইনি, অ্যানেসথেসিস্ট ডাক্তার না থাকার কারণে ভুল চিকিৎসায় প্রায়ই মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গৌরীপুর লাইফ হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খাদিজা আক্তার নামে এক প্রসূতির যমজ শিশু হলেও একটি সন্তান পেটে রেখেই সেলাই করে দেন ডাক্তার। এ ঘটনাটি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। আবার প্রসূতি ভর্তি হয়ে ৮ ঘণ্টা চিকিৎসা না পেয়ে মৃত সন্তান প্রসবের অভিযোগ রয়েছে দাউদকান্দি পৌর সদরের এলহাম হাসপাতালে। গৌরীপুর খিদমা হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের এবং রংধনু হসপিটালে প্রসূতির, দাউদকান্দি পৌরসদরের এলহাম ও ফ্যামিলি হাসপাতালে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন নেয়ার সময় কাগজে-কলমে ডাক্তার, ডিপ্লোমাধারী প্যাথলজিস্ট দেখানো হয়। অনুমোদন পাওয়ার পর বৈধ প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান করলে বা অভিযান চালালে আবেদনের সময় কাগজে-কলমে নেয়া তথ্যের মিল পাওয়া যাবে না। অনেক হাসপাতালের অনুমোদন থাকে ১০ শয্যার, সেখানে রাখা হয় ১৫ শয্যা। হাতুড়ে নার্স দিয়ে সেবা করা হয় রোগীদের। ভাড়া করা ডাক্তার দিয়ে চলে এসব বেসরকারি হাসপাতাল। সার্বক্ষণিক এমবিবিএস ডাক্তারের বদলে থাকেন ম্যানেজার মালিক।
দাউদকান্দি নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক পরিবেশবিদ মতিন সৈকত বলেন, কিছু অর্থলোভী এসব ক্লিনিকে অপচিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এসব ক্লিনিকে স্থায়ী চিকিৎসক ও নার্স নেই। নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন এসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও সেটা মানসম্মত নয়। রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা নেই জানার পরও শুধু টাকার লোভে ভর্তি করানো হয়। মাঝে মধ্যেই রোগীরা অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ হোসেন ভূইয়া বলেন, যাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে তাদেরই সমিতির সদস্য করা হয়েছে। এখানে সর্বাধিক ২৫-৩০টির মতো বৈধ, বাকিগুলো কীভাবে চলে জানি না। আর দাউদকান্দির মতো গাছাড়াভাব কোথাও দেখিনি, ফলে প্রতিবছরই এখানে কোনো কোনো হাসপাতালে দুর্ঘটনা ঘটে, এর জন্য আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত চলা অভিযানে দাউদকান্দিতে ৮টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং ৬টিকে জরিমানা করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন বলেন, আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। প্রথমত যাদের লাইসেন্স নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়