খন্দকার মোশাররফ : বিএনপিকে নির্যাতন করে দমিয়ে রাখা যাবে না

আগের সংবাদ

দুই সংকটে তৈরি পোশাক খাত : সংকট কাটলে ৮ বছরে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের আশা

পরের সংবাদ

পিৎজা হাটের বিজ্ঞাপন মডেল মিখাইল গর্বাচেভ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অখণ্ড সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল সের্গেয়েভিচ গর্বাচেভকে ‘হিরো’ হিসেবে দেখার সুযোগ আছে, ‘ভিলেন’ হিসেবে দেখতেও কোনো সমস্যা নেই। উভয়পক্ষেই শক্তিশালী যুক্তি দাঁড় করানো হচ্ছে। বিপরীতধর্মী এই মূল্যায়নের কারণ মূল্যায়নকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক আনুগত্য ও আবেগময় সম্পৃক্ততার ধরনের ভিন্নতা। আমি হালকা বিষয় দিয়েই শুরু করতে চাই- সদ্য প্রয়াত (৩০ আগস্ট ২০২২) মিখাইল গর্বাচেভ বিজ্ঞজনের প্রশংসায় ধন্য কিংবা গালমন্দ ধিক্কারে বিপর্যস্ত যাই হোন আমার কাছে তিনি খুব আকর্ষণীয় এবং রসবোধসম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন। ১৯৯৫ সালে আমার বিলেতবাসকালে বিবিসির কোনো চ্যানেলে প্রচারিত তার একটি লাইভ সাক্ষাৎকার দেখার সুযোগ হয়েছিল। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী তাকে জিজ্ঞেস করেন- সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার সম্পর্কে তার দেশবাসীর মূল্যায়ন কেমন ছিল? উপমহাদেশীয় কেউ হলে নিজের সম্পর্কে গোটা দশেক সুপারলেটিভ ডিগ্রির বিশেষণ ব্যবহার করে বলতেন, তারা আমার জন্য পাগল ছিল, তারা আমার জন্য জীবন দিয়ে দিতেও প্রস্তুত ছিল, তাদের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক, আমিই ছিলাম তাদের শতবর্ষের শ্রেষ্ঠ নেতা, আমিই তাদের মুক্তিদাতা।
কিন্তু মিখাইল গর্বাচেভ হাসিমুখে তার দোভাষীর মাধ্যমে যা শোনালেন তার মোদ্দাকথাটা ভোলার নয়। গর্বাচেভ বললেন, ‘সে সময় অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল, প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল না। সবকিছু লাইন ধরে কিনতে হয়। একজন সোভিয়েত নাগরিক গাড়িতে তেল নিতে পাম্পের দুই কিলোমিটার দূরে লম্বা লাইনের শেষ প্রান্তে দাঁড়ালেন, তিনি দুধ কিনতে যাবেন, দেখেন বিশাল লাইন, একটু ভদকা পান করবেন, সেখানেও ভীষণ লম্বা লাইন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ি গিয়ে বন্দুক নিয়ে এলেন, হতভাগাটাকেই গুলি করে মারবেন।’
কোন হতভাগা?
মিখাইল গর্বাচেভ।
বেশ তাহলে এই লাইনের শেষে গিয়ে দাঁড়ান। অন্যরাও পিস্তল নিয়ে তাকে মারতে এসেছেন। ভীষণ হতাশ হয়ে সেই সোভিয়েত নাগরিক দেখলেন সশস্ত্র মানুষের লাইনটিই সবচেয়ে বড়, তিন কিলোমিটার হবে।
নিজেকে নিয়ে ঠাট্টা করতে উঁচু দরের মানুষ হতে হয়। গর্বাচেভের পক্ষেই নিজের সম্পর্কে এমন একটি কৌতুকরত পরিচিতি গণমাধ্যমে দেওয়া সম্ভব।
রুশ অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা যেমন আমেরিকান গোঁড়া খ্রিস্টানদেরও একটি অংশ মিখাইল গর্বাচেভকে শয়তান মনে করতেন। প্রেসিডেন্ট রিগানের সঙ্গে গর্বাচেভের বৈঠক নির্ধারিত হলে গোঁড়া আমেরিকান খ্রিস্টানরা তাদের প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে দেয়ার জন্য বার্তা পাঠিয়েছেন, তিনি একজন শয়তানের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। শয়তান মাত্রই অ্যান্টিখ্রিস্ট বা খ্রিস্টবিরোধী। প্রমাণ হিসেবে গর্বাচেভের মাথার স্থায়ী দাগটার কথা বলা হয় এবং প্রামাণ্য দলিল হিসেবে উপস্থাপন করা হয় বাইবেলের রেভেলেশন গ্রন্থের ১২:৩-৪-এ সেইন্ট জন-এর ব্যাখ্যা : দেখুন, গ্রেড রেড ড্রাগন…এবং তার লেজ নক্ষত্রের তৃতীয় অংশ অঙ্কন করে পৃথিবীতে বসিয়ে দেয়- গর্বাচেভ যে প্রকৃতই খ্রিস্টবিরোধী তা নিশ্চিত করতে শয়তান মাতৃগর্ভে তাকে চিহ্নিত করে দিয়েছে। গর্বাচেভ হচ্ছেন শয়তানের হাতিয়ার। ‘অ্যা সাইন্টিফিক অ্যাপ্রোচ টু খ্রিশ্চিয়ানিটি’ গ্রন্থের লেখক রবার্ট ডব্লিউ ফেইড বলেছেন বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মাথায় এই চিহ্ন তিনি ধারণ করে আছেন। তার মাথার দাগের ওপর চোখ পড়লে কথিত এই বিজ্ঞান গ্রন্থের লেখক প্রকৌশলী রবার্ট ফেইড বলেন এটা কোনো সাধারণ দাগ নয়, এটি শয়তান অঙ্কিত জন্মদাগ। তিনি গর্বাচেভের মাথায় লাল ড্রাগন এবং নিচের দিকে নেমে আসা লেজ দেখতে পান। নিউ টেস্টামেন্টে যীশুখ্রিস্টের পুনরুত্থানের আগে কপালে দাগাঙ্কিত শয়তান একনায়কের আগমনের কথা বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিগান বুঝতে পারছেন না, প্রকৃতপক্ষে গর্বাচেভ ধ্বংসাত্মক মানুষ। প্রেসিডেন্টকে সতর্ক থাকতে হবে।
গর্বাচেভের ক্ষমতাসীন অবস্থায় যখন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে খান খান হয়ে গেল রুশ অর্থোডক্স খ্রিস্টানরাও হাতেনাতে প্রমাণ পেলেন এতদিন তারা শয়তানের রাজত্বে বসবাস করছিলেন।
এ দাগটি আসলে কেবলই জন্মদাগ। এ নিয়ে মিখাইল গর্বাচেভ কখনো বিব্রত ছিলেন না, ক্যাপ পরে বা পরচুলা ব্যবহার করে কখনো এই দাগ ঢেকে রাখার চেষ্টাও করেননি কিংবা কসমেটিক সার্জারি করে এটা অপসারণ করতে চেয়েছেন এমনও শোনা যায়নি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটি হচ্ছে ‘পোর্ট ওয়াইন স্টেইন’- লাল মদ বর্ণের দাগ, সাধারণত জন্ম থেকে দাগটা হয়ে থাকে, মাথায় ও গলায় দেখা যায়। এটা বিপজ্জনক কিছু নয়, ত্বকের নিচে রক্তনালীর নিয়মবহির্ভূত বৃদ্ধি থেকে এটা হয়ে থাকে, এটাকে স্ট্রবেরি হেমানজিওমাসও বলা হয়ে থাকে। পোর্ট ওয়াইন স্টেইন সাধারণত থেকে যায়, কখনো আংশিক বিলীনও হতে পারে; সাধারণত কার্সিনোজেনিক বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী নয়। লেজার থেরাপির সাহায্যে দাগ ক্ষেত্রবিশেষে অপসারণ করা যায়। গর্বাচেভ তার টেকো মাথার এই পোর্ট ওয়াইন স্টেইন নিয়ে মোটেও বিচলিত ছিলেন না, তবে এ দাগ গোঁড়া ধার্মিক খ্রিস্টানদের বিচলিত করেছে। সাম্রাজ্য ভেঙে যাওয়ার পর তারা আরো নিশ্চিত হয়েছেন।
মিখাইল গর্বাচেভের একটি স্মরণীয় উক্তির উদ্ধৃতি দিতেই হয় : ‘বাজার ধনতন্ত্রের কোনো আবিষ্কার নয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাজার ছিল। বাজার সভ্যতার আবিষ্কার।’ সভ্যতার সূচনা থেকে বাজারের সৃষ্টি- ‘বাজার মানুষের কল্যাণের ধারণাকে উন্নততর করে- এর সঙ্গে সমাজতন্ত্রের কোনো বিরোধী নেই’- এই কথাও গর্বাচেভের। সোজা কথা বাজার তাকে ভালোই আকৃষ্ট করেছিল আর সেই আকর্ষণের চৌম্বক শক্তি তাকে বাজারের মডেলে পরিণত করেছিল।
১৮ আগস্ট ১৯৯১ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হলেন। বেশি বাধা দিলে তিনি এবং তার স্ত্রী রাইসা নিহত হতেন, এটা গর্বাচেভেরই ভাষ্য। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে লিথুয়ানিয়া (১১ মার্চ ১৯৯০) এবং জর্জিয়া (৯ এপ্রিল ১৯৯১) স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং কার্যত সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যায়। ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ানায়েভ দায়িত্ব নিতে নিতেই ২০ আগস্ট বরিস ইয়েলেৎসিন প্রেসিডেন্সিয়াল ফরমান জারি করেন এবং ক্ষমতা নিয়ে নেন। বলা আবশ্যক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যে ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছে তার কেবল দুটি গর্বাচেভের সময়। আর সব ঘটেছে ইয়েলেৎসিনের সময় (এস্তোনিয়া ২০ আগস্ট; কিরগিজস্তান ২৪ আগস্ট; রাশিয়া ২৪ আগস্ট; বেলারুশ ২৫ আগস্ট; মলডোভা ২৭ আগস্ট; আজারবাইজান ৩০ আগস্ট; উজবেকিস্তান ১ সেপ্টেম্বর; লাটভিয়া ৬ সেপ্টেম্বর; তাজিকিস্তান ৯ সেপ্টেম্বর; তুর্কমেনিস্তান ২৭ অক্টোবর; ইউক্রেন ২৪ নভেম্বর; কাজাখস্তান ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯১)। পৃথিবীকে বিষ্মিত করে লৌহযবনিকার অন্তরালে পৃথিবীর দুই মহা পরাক্রমশালী দেশের একটি সোভিয়েত ইউনিয়নের চূড়ান্ত বিলুপ্তি ঘোষিত হয় ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯১। এই বিখণ্ডীকরণ নব্যস্বাধীন দেশগুলো অবশ্যই স্বাগত জানায়, স্বাগত জানায় পাশ্চাত্য। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান আগেই ঘটেছিল, এবার নিশ্চিত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন এশিয়া ও ইউরোপের মানচিত্রের বিশাল অংশজুড়ে ছিল। এখন সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্র হয়ে ভিন্ন ভিন্ন রঙে মানচিত্রে অবস্থান ১৫টি দেশ, এদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে শক্তিশালী রাশিয়া। ভাঙনের দায় অর্পণ করা হয়েছে মিখাইল গর্বাচেভের ওপর, পাশ্চাত্যের সঙ্গে তার ‘অতি রোমান্টিক’ সম্পর্কের ওপর, পাশ্চাত্য ধাঁচের গণতন্ত্রের ওপর এবং সর্বোপরি বাজারের ওপর।

সমাজতন্ত্রের সমাধির ওপর পিৎজা হাট, ম্যাকডোনাল্ডস
বিশ্বায়নের ভিন্ন নাম ম্যাকডোনাল্ডাইজেশন। ম্যাকডোনাল্ডাইজেশন নামের বইও বাজারে এসেছে- এতে দেখানো হয়েছে বাজার ধারণার পাশ্চাত্য সংস্করণ কেমন করে সমাজতন্ত্র সমাহিত করে গোটা পৃথিবীতেই ম্যাকডোনাল্ডস প্রতিষ্ঠা করতে পারে; জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অর্থনৈতিক শক্তিসম্পন্ন ভোক্তার হাতে বিগম্যাক তুলে দিতে পারে। ১৪ বছর লেগে থাকার পর মস্কোতে প্রথম ম্যাকডোনাল্ডস খোলার পরপরই পিৎজা হাটকেও শাখা খুলতে হবে। ১৯৯০ সালে প্রথম শাখা স্থাপিত হলো। একটু পিছিয়ে আছে পিৎজা হাট, নতুবা বিশ্বায়নের অন্য নাম হতে পারত ‘পিৎজা হাটাইজেশন’। বিজ্ঞাপনের জন্য চাই হাই প্রোফাইল মডেল। তখন পেপসিই পিৎজা হাটের মালিক। আর্থিক টানাটানিতে আছেন মিখাইল গর্বাচেভ। এমনিতে পেনশন কম, আর্থিক ধসে রুবলের দাম আরো পড়ে গেছে। তাছাড়া তিনি একটি গর্বাচেভ ফাউন্ডেশনও খুলেছেন। পেপসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কয়েক দফা মস্কো সফরে এলেন। দরকষাকষিতে আরো খানিকটা সময় চয়ে গেল। গর্বাচেভের স্ত্রী রাইসা বললেন, ‘পিৎজা হাটের বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রেসিডেন্টকে মানায় না।’
গর্বাচেভ বললেন, টাকার তো দরকার। কাজেই যতটা সম্ভব কম কথা বলে, পারলে নিশ্চুপ থেকে কাজটা করবেন। ১৯৯৭’র নভেম্বরে মস্কোর রেড স্কয়ারে এবং বাইরের একটি পিৎজা হাট রেস্তোরাঁয় শুটিং সমাপ্ত হলো। ১৯৯৮-তে এটি মস্কো ছাড়া সারা পৃথিবীতেই এক মিনিটের সামান্য বেশি সময়ের বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচারিত হতে শুরু করল। মডেল হিসেবে তিনি মজুরি নিলেন ১ মিলিয়ন ডলার, এ নিয়ে বিতর্ক আছে, কমবেশি হতেও পারে। তুষারপাতের মধ্য দিয়ে নাতনিকে নিয়ে আসছেন গর্বাচেভ। ভিন্ন এক টেবিলে রেস্তোরাঁয় পিৎজা খেতে এসেছে একটি পরিবার। পরিবারের বাবা লক্ষ করলেন গর্বাচেভও রেস্তোরাঁয় আছেন। তিনি ক্ষুব্ধস্বরে বললেন, ‘তার জন্যই আজ অর্থনীতির এই হযবরল অবস্থা।’ কিন্তু বাবার কথার প্রতিবাদ করে ছেলে বলল, ‘তার জন্যই তো আমরা সুযোগ পেয়েছি।’ তার বিপরীতে একজন বললেন, ‘তার কারণেই আমাদের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা’। তার বিপরীতে বলা হলো, ‘তার কারণেই আমাদের স্বাধীনতা’। কেউ বলল, ‘সম্পূর্ণ হযবরল পরিস্থিতি’। কেউ বলল ‘আশা’। মা উপসংহার টানলেন, ‘তার জন্যই আমাদের অনেক অনেক কিছু, যেমন পিৎজা হাট’। এবার আর দ্বিমত রইল না, পরিবারের সকলে একমত। অমনি রেস্তোরাঁয় আগত সকল খদ্দের যার যার হাতে এক সøাইস পিৎজা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এই সাফল্যের জন্য মিখাইল গর্বাচেভকে অভিনন্দন জানালেন। তখন ক্যামেরার ফোকাস গর্বাচেভের ওপর, তিনিও বিমুগ্ধ। তারপর কণ্ঠস্বর ভেঙে আসে; পিৎজা হাটের গরম পিৎজার মতো অন্য কিছুই মানুষকে একত্র করতে পারে না। একটা সেøাগানও দেখা যায় : গুড ফ্রেন্ডস, গুড পিৎজা।
১৯৯৮’র জানুয়ারির প্রথম দিন বিজ্ঞাপনটি প্রচারিত হয়। এই বিজ্ঞাপনটি পিৎজা-পছন্দ মানুষকে এই বার্তা দেয় যে সাম্যবাদের চেয়ে ধনতন্ত্র বেশি ভালো। পিৎজা হাট ছাড়া আরও একটি বা দুটি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে গর্বাচেভ অংশগ্রহণ করেছেন। তিনিও সশরীরে এ কথাই বলতে চাচ্ছেন যে ধনবাদের গুঁতোয় সাম্যবাদ সমাজবাদ সব উপুড় হয়ে পড়ে গেছে- ধনবাদী ভোগবাদী বিধানই এখন ভরসা। ভোগবাদ মানুষের মর্যাদা ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর মানুষকেও ভোগ্যপণ্যের মডেলে পরিণত করে। পিৎজা হাট রাশিয়াতে খুব ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সব আউটলেট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত তারা গøাসনস্তের দেশ ছেড়ে যাবে। আর পুঁজিবাদের সালাম গর্বাচেভ পেতেই থাকবেন।
[একটি স্বীকারোক্তি : মিখাইল গর্বাচেভকে নিয়ে করা বিজ্ঞাপনটি যখন আমি প্রথম দেখি আমি ভেবেছি যে মানুষটি গর্বাচেভ সেজেছেন, বেশ ভালো অভিনয় জানেন। অনেক পরে জানতে পারি যে মানুষটি গর্বাচেভ সেজেছেন তিনিই আসল মিখাইল গর্বাচেভ।]

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়