চট্টগ্রাম অফিস : কিছুদিন আগেও সন্ত্রাসী-ভূমিদস্যুদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদের প্রতিবাদে বিক্ষোভের পাশাপাশি সংঘর্ষে জড়াচ্ছে সেখানকার অবৈধ বাসিন্দারা। এ নিয়ে দফায় দফায় প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে তাদের। মামলার আসামিও হতে হয়েছে। প্রশাসনের বাধার মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়া অবৈধ বসতি গড়া এসব বাসিন্দা এবার ঢাকায় যাচ্ছিলেন প্রতিবাদী মানববন্ধন করতে। তবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেশি দূর এগুতে পারেনি তারা। সীতাকুণ্ড থানা এলাকা পার হতেই পুলিশের হাতে আটক হতে হয়েছে মানববন্ধনের উদ্দেশে ঢাকার পথে রওনা হওয়া ৬৩ বাসিন্দাকে। এদিকে, গতকাল সন্ধ্যায় জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দারা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে এলে পুলিশ সেখান থেকে ১২ জনকে আটক করে।
শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দুটি বাস ভাড়া করে ঢাকা যাওয়ার পথে ৬৩ বাসিন্দাকে সীতাকুন্ড থানা এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে ২২ জনকে ‘অপরাধী’ হিসেবে শনাক্ত করেছে পুলিশ। জঙ্গল সলিমপুরের বিভিন্ন ঘটনার তিনটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল রবিবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। কোনো ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততা পাওয়া না যাওয়ায় বাকি ৪১ জনকে ছেড়ে দিয়েছে।
সীতাকুন্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, জঙ্গল সলিমপুর থেকে কিছু সন্ত্রাসী দুটি বাসে করে ঢাকা যাচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে শান্তি পরিবহন ও পাহাড়িকা পরিবহনের দুটি বাস থেকে সর্বমোট ৬৩ জনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সাম্প্রতিক সময়ে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করার উদ্দেশে ঢাকা যাচ্ছিল বলে জানায়। সম্প্রতি সরকারের উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ ও প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ২২ জন অপরাধী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থাকায় বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগ বয়ষ্ক মানুষ। মূল অপরাধীরা এদের নিয়ে যাচ্ছিল মানুষের সহানুভূতি আদায়ের উদ্দেশ্যে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী জঙ্গল সলিমপুরে আটকে রাখা বাসিন্দাদের নিরাপদে বের করে আনতে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সেখানকার বাসিন্দা সন্ত্রাসীরা। এ সময় প্রশাসনের ওপর তারা ককটেল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এর আগে, গত ৩০ আগস্ট জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধ বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়। একইসঙ্গে নিজ দায়িত্বে মালামাল সরিয়ে জায়গা খালি না করলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ করা হবে বলে আল্টিমেটাম দেয় জেলা প্রশাসন।
প্রসঙ্গত গত ৭ আগস্ট সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরের পাহাড়, টিলা, বনভূমি এবং এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাকল্পে হাইকোর্ট এক নির্দেশনা দেন। এতে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সব স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বৈধ জমির মালিকদের মালিকানা নিশ্চিত করতে বলা হয়। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সেখানে খাসজমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং বৈধ ভূমির মালিকদের ২০ আগস্টের মধ্যে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি যারা অবৈধ উপায়ে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে কেটে বসত ঘর বা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন তাদের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে অবশ্যই এলাকা ছেড়ে যেতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।