একদিনে ২৭৮ করোনা রোগী শনাক্ত

আগের সংবাদ

দেশীয় কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব : বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতি ও পরিবেশ, বিশ্বে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে

পরের সংবাদ

নির্মূল কমিটির নাগরিক সমাবেশ : মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছে বাঘা যতীনের আত্মদান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, বাঘা যতীন, সূর্যসেন আর প্রীতিলতারা স্বাধীনতার বেদীমূলে নিজেদের জীবন দিয়ে ভারতবর্ষে যে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন তার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি বাংলাদেশে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসব্যাপী যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে অংশগ্রহণকারী শতকরা ৯০ ভাগ ছিলেন বয়সে তরুণ, স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গের প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন তারা। বিজয়ের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, সূর্যসেনরা স্বাধীনতার যে সংগ্রাম আরম্ভ করেছিলেন, আমরা তা সম্পন্ন করেছি। গতকাল শনিবার স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ বাঘা যতীনের ১০৭তম মৃত্যুবার্ষিকী একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নাগরিক সমাবেশে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজনরা।
বাঘা যতীনের জন্মস্থান কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া গ্রামে কয়া মহাবিদ্যালয়ে ‘বাঘা যতীন থিয়েটার, কয়া’র সহযোগিতায় নির্মূল কমিটি কুমারখালী শাখার আয়োজনে নাগরিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটি কুমারখালীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম আবুল মনছুর মজনু। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরা হোসেন মেরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা কাজী মুকুল, কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল, কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুন-অর-রশীদ, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলি হোসেন, কুমারখালী নাগরিক পরিষদের সভাপতি আকরাম হোসেন প্রমুখ। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী

নওফেল বলেন, বিপ্লবী বাঘা যতীন তিনি স্বাধীনতা চেয়েছিলেন, ঔপনিবেশ দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙতে চেয়েছিলেন, মানুষকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। বিশ্বাসঘাতকদের কারণে তার অকালপ্রয়াণ ঘটে। দুই বাংলার মধ্যে যে অকাট্য ইতিহাস তা নতুন প্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। এই ইতিহাসই প্রজন্মকে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি থেকে রক্ষা করবে।
সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, এই উপমহাদেশ বিপ্লবীদের চারণক্ষেত্র। মাস্টারদা সূর্যসেন থেকে শুরু করে বাঘা যতীনের পর বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি একটি দেশের সূচনা করে তাকে উন্নয়নের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করছিলেন ঠিক তখন স্বাধীনতাবিরোধীরা ও দেশবিরোধীরা তাকে পরিবারসহ হত্যা করে উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে দেয়। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী সেই অপশক্তি এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। তারা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পথও রুদ্ধ করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন বাংলাদেশ সারাবিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন পঁচাত্তরের সেই অপশক্তি উঠেপড়ে লেগেছে। এই অপশক্তির ষড়যন্ত্র আমরা যে কোনো মূল্যে রুখে দেব।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বাঘা যতীন শুধু একটি নাম নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। বাঘা যতীন, মাস্টারদা সূর্যসেন ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো বিপ্লবীদের কাছ থেকে কীভাবে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তা বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ধর্মীয় মৌলবাদী পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এখনো সেই সাম্প্রদায়িক শক্তির ছায়া বাংলাদেশে রয়ে গেছে। তারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। এই মৌলবাদী অপশক্তিকে ধ্বংস করতে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য নিয়মতান্ত্রিক অহিংস আন্দোলন যেমন হয়েছে, তেমনি সহিংস সংঘাত ও খণ্ড খণ্ড যুদ্ধও হয়েছে। বাঘা যতীনের যুদ্ধ ও আত্মদান অনুপ্রাণিত করেছে লাহোরের ভগৎ সিং থেকে আরম্ভ করে চট্টগ্রামের সূর্যসেনদের। অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সম্মিলিত আত্মত্যাগ অনুপ্রাণিত করেছে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযোদ্ধারা যে গেরিলা যুদ্ধে অপরিসীম সাহস, দক্ষতা ও আত্মদানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ভারতবর্ষে তার সূচনা করেছেন ক্ষুদিরাম, বাঘা যতীন ও সূর্যসেনরা। বাঘা যতীনরা আমাদের শিখিয়েছেন মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদার জন্য কীভাবে লড়তে হয়, দেশের স্বাধীনতার জন্য কীভাবে জীবন বিলিয়ে দিতে হয়। স্বাধীনতার শত্রæদের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামের মন্ত্র আমরা শিখেছি ক্ষুদিরাম, বাঘা যতীন, সূর্যসেন, প্রীতিলতাদের কাছ থেকে। আমাদের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা সবসময় প্রেরণার অফুরন্ত উৎস হয়ে বিরাজ করবেন।
সমাবেশে বাঘা যতীনের নামে কয়া মহাবিদ্যালয়ের নামকরণ করার ব্যাপারে দাবি জানিয়েছেন নির্মূল কমিটি কুমারখালীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি এম আবুল মনছুর মজনু।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়