একদিনে ২৭৮ করোনা রোগী শনাক্ত

আগের সংবাদ

দেশীয় কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব : বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতি ও পরিবেশ, বিশ্বে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে

পরের সংবাদ

কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে হবে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পুরান ঢাকায় এযাবত বড় তিনটি দুর্ঘটনার পরও কর্তাব্যক্তিদের সম্বিৎ ফেরেনি। শত মানুষের প্রাণহানিকেও তারা সম্ভবত বেশি কিছু মনে করছেন না। হয়তো এ কারণে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি জনপদ থেকে কেমিক্যাল গোডাউনগুলো সরানো হচ্ছে না। ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাসহ ৫টি সংস্থা অভিযান চালিয়ে পুরান ঢাকায় ১ হাজার ৯২৪টি কেমিক্যাল গোডাউনের তালিকা তৈরি করে। বাসাবাড়িতে গড়ে ওঠা এসব গোডাউন কেমিক্যালভর্তি ড্রামে ঠাসা। ড্রামগুলো যেন একেকটি ভয়াবহ বোমা। এসব বোমার সঙ্গেই বসবাস পুরান ঢাকাবাসীর। মিটফোর্ড, চকবাজার, আরমানিটোলা, ইসলামবাগে এসব অতি ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক ও বিস্ফোরক দ্রব্যের কারখানা, গোডাউন ও দোকান রয়েছে। নিমতলী বা চুড়িহাট্টার মতো বিপর্যয় না চাইলে রাসায়নিক গুদামগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো হেলাফেলা করা উচিত নয়।
শুধু নজরদারি ও সতর্কতার অভাবে কেমিক্যাল গোডাউনে ঘটছে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ধ্বংস হচ্ছে অমূল্য সম্পদ। এর বড় কারণ, কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই অবাধে চলছে কেমিক্যাল ব্যবসা। শুধু তাই নয়, কম দামি কেমিক্যালের ছাড়পত্র নিয়ে আমদানি করা হচ্ছে বিপজ্জনক সব দাহ্যপদার্থ। এসবের বেচাকেনাও চলছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনার পর কিছুদিন এ নিয়ে চলে বেশ দৌড়ঝাঁপ। কিন্তু ক’দিন গেলেই যে যার মতো করে দায়িত্ব শেষ করে। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর রাসায়নিকের ব্যবসা ও এর মজুতকরণ নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি হলেও সেটির বাস্তবায়ন নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। আমরা মনে করি, সরকারের নীতিমালা ও প্রত্যক্ষ নজরদারির বাইরে দেশের কোনো স্থানেই কেমিক্যাল ব্যবসার সুযোগ থাকা উচিত নয়। কারণ রাজধানী ঢাকা তো বটেই, আমাদের গোটা দেশটিই জনবহুল। জেলা-উপজেলা সদরেও যদি উচ্চমাত্রার দাহ্যপদার্থ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রেও বিপুল হতাহতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ অবস্থায় দাহ্য রাসায়নিকের ব্যবসা, পরিবহন ও গুদামজাতের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার বিকল্প নেই। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে ১২৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আর গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় আরেক আগুনে মৃত্যু ঘটে ৭১ জনের। কেমিক্যাল ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ে এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে আরো মারাত্মক ঘটনা ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কর্তৃপক্ষের উচিত এখনই কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ কেনাবেচা, পরিবহন ও মজুত-সংক্রান্ত কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া।
পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন সরিয়ে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বারবার বলা হয়েছে। তাতে কোনো ফল হচ্ছে না। বিভিন্ন উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও সেগুলো কেবল সভা ও সেমিনার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে আটকে রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে, পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন সংখ্যাও বাড়ছে। বাড়িওয়ালারা বাড়ি করেই বেশি ভাড়ার আশায় নিচতলা যেন কেমিক্যালের গোডাউনের জন্যই রেখে দেয়। জানমালের জন্য ভয়ংকর পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো বাড়িওয়ালা যাতে কেমিক্যাল কারখানা বা গোডাউন ভাড়া দিতে না পারে, এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেসব ব্যবসায়ী বিনা লাইসেন্সে প্রাণঘাতী কেমিক্যালের ব্যবসা করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আর কে চৌধুরী
মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ; সদস্য, এফবিসিসিআই।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়