৪ বোন চুরি করেই পালাত অন্য জেলায়

আগের সংবাদ

সফরে প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী

পরের সংবাদ

৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ : দৌলতপুরে বন্যায় ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস আর সেলিম, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) থেকে : দৌলতপুর উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়তে থাকায় ইতোমধ্যে পদ্মাপাড়ের অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে প্রায় ৩০০ বিঘা আবাদি জমি। ব্যাপক বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন উপজেলার নদীতীরবর্তী ৩টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। বন্যায় ৮টি প্রাইমারি স্কুুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। যদিও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আশার কথা শোনাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
উপজেলার চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর ও ফিলিপনগর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকায় প্রতিদিনই বন্যার পানি ঢুকে পড়ছে। তলিয়ে যাচ্ছে মাষকলাই, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের আবাদি ফসলের জমি। পদ্মার পানি বাড়তে থাকায় ইতোমধ্যে অন্তত ২০টি গ্রামের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গত দুদিনে বেশকিছু বাড়ির ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে- চিলমারী, বাজুমারা, চরচিলমারী, খারিজাথাক, আতারপাড়া, রামকৃষ্ণপুর, ঠোঁটারপাড়া, সোনাতলা, চরসোনাতলা গ্রামসহ স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ভুক্তভোগীরা জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের দিন কাটছে। তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটও দেখা দিতে শুরু করেছে। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগবালাই। এ ছাড়া গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি নিয়েও বিপাকে পড়েছেন দুর্গত এলাকার লোকজন। বাড়িঘরের চার পাশ পানিতে ডুবে থাকায় এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাতায়াতের জন্য ছোট-বড় নৌকা ও ডিঙি নৌকাই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বছর বন্যার আশঙ্কা না থাকায় বিভিন্ন মৌসুমী ফসল আবাদের জন্য অনেক চাষি জমি প্রস্তুত করেছিলেন। যা এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে অন্তত ৩০০ বিঘা আবাদি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে মাষকলাই, মরিচসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে।
চিলমারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ইকবাল আহমেদ জানান, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওই ইউনিয়নে নদী ভাঙনও দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদি জমি, কয়েকশ ঘরবাড়িসহ চরচিলমারী বিজিবি ক্যাম্প, জোতাশাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। বেশকিছু বসতঘরেও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, প্রতিদিন নদীতে গড়ে ১২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে পানি বেড়েছে অন্তত ৮২ সেন্টিমিটার। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমা হচ্ছে, ১৪ দশমিক ২৫ মিটার। গতকাল বুধবার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের ১৩ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার নিচ পর্যন্ত পানির প্রবাহ ছিল। বর্তমানে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তার ইউনিয়নের অন্তত ১৮টি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি। চলাচলের রাস্তাঘাটও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বা ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়গুলোতে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। একটি মাদ্রাসা ও তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেতে পারছে না।
এদিকে বুধবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিলমারী ইউনিয়নে বন্যাকবলিতদের মধ্যে সরকারি ত্রাণ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ১০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। এ সময় দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান, চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। চিলমারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় ইতোমধ্যে ১১ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। অন্য ইউনিয়নে সরজমিনে খোঁজখবর নেয়ার পর এ সস্পর্কে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়