৪ বোন চুরি করেই পালাত অন্য জেলায়

আগের সংবাদ

সফরে প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী

পরের সংবাদ

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের প্রয়োজনীয়তা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাঙালি সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই দুর্গাপূজা নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় কিছু উগ্রবাদী মানুষ দুঃখজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্মরণ করা যেতে পারে গত বছর ২০২১ সালে সকালে কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন শরিফ অবমাননার কথিত অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তারা তোপের মুখে পড়ে, বাঁধে সংঘর্ষ। রংপুরের পীরগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুরে পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও সংঘর্ষ হয়, সেখানে প্রাণহানিও ঘটে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কর্ণফুলী উপজেলা, কক্সবাজারের পেকুয়া, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ও ফেনীতে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলা করা হয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার কিছু ঘাটতি ছিল বলেই হামলাকারীরা এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা করার সাহস পেয়েছিল। যারা হামলা করেছিল তাদের যদি অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে একটা নিদর্শন রাখা যেত খুবই ভালো হতো। অনেকেই ভুলে গেছি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত হয়েই ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সব ধর্মের মানুষের আত্মত্যাগ এবং ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ কয়েক দফা রায়ে বলেছে, যেহেতু ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে, স্বাভাবিকভাবে অর্পিত (শত্রæ) সম্পত্তি আইনের মৃত্যু ঘটেছে। সুতরাং এই মৃত আইনের আওতায় আর কোনো অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণার কার্যক্রম শুরু করা যাবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সামরিক সরকাররা এই আইনকে জীবন দিয়েছে বারবার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খুনিদের নেতা খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু ১১ সপ্তাহের মাথায় তাকে হটিয়ে পাল্টা ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। তিনি অর্পিত (শত্রæ) সম্পত্তি আইনকে সেই পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে কঠোরভাবে প্রয়োগ শুরু করেন। এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৮৪ সালে এক হিন্দু সমাবেশে ঘোষণা দেন, হিন্দুদের সম্পত্তি আর শত্রæ সম্পত্তির তালিকায় উঠবে না। কিন্তু এই ঘোষণা বাস্তবে কিছুই করা হয়নি বরং তার শাসনামলের শেষদিকে এসে বাবরী মসজিদ ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে দেন। উন্নয়ন আর সমৃদ্ধিতে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষের মানবতাবোধ এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা জন্য প্রয়োজনীয় কাজ পরিচালনা করাও সরকারের উচিত।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় তৈরি হয়নি। বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সবার আগে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় করার যে দাবি বিভিন্ন মহল থেকে করা হয়েছে তার অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা আছে। পাশাপাশি এ দেশে বসবাসরত হিন্দুদের যেন কোনোভাবেই আর বিভাজিত ও নির্যাতিত হতে না হয় তার জন্য আইনের সংস্কার করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি। অনেক দেবোত্তর সম্পত্তি বিভিন্ন ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তিগুলো যাতে দখলমুক্ত হয় তার জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ হওয়া দরকার। দুর্গোৎসবে তিনদিনের সরকারি ছুটির দাবি জানিয়ে আসলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন কোনো আশ্বাস আসেনি, যা খুবই দুঃখজনক। সপ্তমী থেকে নবমী অফিস খোলা থাকার কারণে লাখ লাখ সনাতনী সম্প্রদায় পূজায় বসে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারছে না। এই উৎসব বছরে একবার আসে। তাই সব সনাতনী একসঙ্গে পূজা উদযাপন করতে ইচ্ছুক। আমি সম্মানিত প্রধানমন্ত্রীকে বিনম্র অনুরোধ জানাব আপনি দয়া করে আমাদের প্রতি দৃষ্টি প্রদান করুন। একজন নাগরিক হিসেবে আমারও জানার প্রয়োজন আছে অর্পিত সম্পত্তি আইনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়জন হিন্দু তার জায়গা ফিরে পেয়েছে।
আশা করি সরকার দুর্গাপূজায় কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসহ সনাতনী সম্প্রদায়ের যৌক্তিক দাবি পূরণ করবেন। আইন প্রয়োগ কঠোর করে পূজা ও ধর্মীয় উৎসব নিরাপদ করার পাশাপাশি সমাজ ও রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা নির্মূল করা হবে। দেশের সমৃদ্ধি এবং উন্নতির পেছনে অন্যতম শক্তি হিসেবে কাজ করে সদিচ্ছা ও অসাম্প্রদায়িকতা। আমরা অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশকে আরো উঁচু আসনে দেখতে চাই। তাই চলুন ভেদাভেদ ভুলে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মিলিতভাবে দেশের জন্য কাজ করি।

লেখক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়