৪ বোন চুরি করেই পালাত অন্য জেলায়

আগের সংবাদ

সফরে প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী

পরের সংবাদ

ব্যবসায়ীদের দাবি : দাম বাড়িয়েও পোষাচ্ছে না

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বাজারে প্রায় সব পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। জ্বালানি তেল ও ডলার-দিরহামের মূল্যবৃদ্ধি, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণ দেখিয়ে কোম্পানিগুলো সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্টসহ টয়লেট্রিজ পণ্যের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। এর পরও তাদের লাভ হচ্ছে না বলে দাবি করছে। এদিকে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) দাবি, প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়াতে প্রতিনিয়ত চালাকি করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশে এসব পণ্যের দাম কমে না। তাই কারখানা পরিদর্শন করে দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা বের করার আশ্বাস দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
গতকাল বুধবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, লিকুইড ক্লিনার জাতীয় পণ্যের উৎপাদনকারীদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এত বেশি হারে দাম বৃদ্ধির যুক্তি কী, তা জানতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কোম্পানিগুলোকে তলব করে। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন ইউনিলিভারের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) জাহিদ মালিথা, পরিচালক শামিমা আখতার, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) মালিক মোহাম্মদ সাইদ, এসিআই-এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. পলাশ হোসেন, কল্লোল গ্রুপ অব কোম্পানিজের করপোরেট সেলস ম্যানেজার এস এম মহিউদ্দিন হোসেন, ক্যাবের সহ-সভাপতি কাজী আব্দুল হান্নানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান।
শুরুতেই সংস্থাটির মহাপরিচালক এসব কোম্পানির প্রতিনিধিদের বলেন, তেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। তবে প্রসাধনী পণ্যগুলোর দাম হিমালয়ের মতো আকাশের দিকে উঠেছে। ডলার বলেন, কাঁচামাল বলেন, এগুলোর দাম কমলে আর তারা কমাচ্ছেন না, আবার বাড়লে সেখান থেকে বাড়াচ্ছেন। কাঁচামালের দামের সঙ্গে পণ্যমূল্য বাড়লেও কাঁচামালের দাম কমলে কেন পণ্যমূল্য কমে না- এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
জবাবে প্রসাধনী কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলেন, তাদের উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামালের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এগুলোর দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি ডলার ও দিরহামের বিপরীতে টাকার দরপতনেও উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। আগের তুলনায় খরচ ৯৬ শতাংশ বেড়েছে দাবি করে প্রতিনিধিরা বলেন, তারা ভোক্তাদের স্বার্থের কথা ভেবে দাম কম বাড়িয়েছেন। এ কারণে তাদের লোকসান হচ্ছে।
ইউনিলিভারের কর্মকর্তা জাহিদ মালিথা বলেন, ভোক্তার স্বার্থ নিশ্চিত করলে ব্যবসা ভালো হবে। ইউনিলিভার আধা সরকারি কোম্পানি। সরকারের শেয়ার আছে ইউনিলিভারে। গত দুই বছরে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে এটা কি কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে না কি ‘কস্ট বেইজ’ তা আপনারা যাচাই করে দেখবেন। কাঁচামালের ৮০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বিশ্ব

বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়লে আমাদের ওপরও এর প্রভাব পড়ে। এ হিসাবে সব মিলিয়ে একটা পণ্যের দাম বেড়েছে ৯৬ শতাংশ। কিন্তু আমরা সেই অনুযায়ী দাম বাড়াইনি, আমরা কিন্তু লোকসানেই আছি।
গত এক বছরে মান ও প্রকারভেদে সাবান-শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। ৮০ টাকা থেকে ডাভ সাবান এখন ১৫০ টাকা। ২০০ গ্রাম ওজনের ইমপেরিয়াল লেদার সাবান (থাইল্যান্ড) ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯৫ টাকা। মানভেদে ৮০ টাকার গায়ে মাখার সাবান বেড়ে হয়েছে ১৩০-১৫০ টাকা। বডি স্প্রের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ৪০০ মিলিলিটারের যে নিভিয়া লোশনের দাম ছিল ৬২০ টাকা, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ টাকা। ৩২০ মিলির সানসিল্ক শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। আগে যেটা বিক্রি হত ৩৬০ টাকায়, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৪৬০ টাকা। ২০০ মিলির জিলেট শেভিং জেল ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩২৫ টাকা। দাম বেড়েছে গুঁড়া সাবানেরও। এক কেজি ওজনের গুঁড়া সাবান এখন ১৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০ টাকা। মানভেদে ২০০ গ্রাম ওজনের সব ব্র্যান্ডের টুথপেস্টের দাম ১০-২০ টাকা বেড়েছে।
তবে জাহিদ মালিথা বলেন, যে পরিমাণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে সেই অনুযায়ী আমরা দাম বাড়াইনি। যেমন টুথপেস্টের দাম গত দুই বছরে মাত্র ৬ শতাংশ বেড়েছে। ওয়াশিং পাউডার আর সাবানের দাম বেড়েছে।
স্কয়ার টয়লেট্রিজের পরিচালক (অপারেশন) মালিক মোহাম্মদ সাইদ বলেন, সবকিছুর দাম হুট করে বেড়ে যায়নি। দাম বেড়েছে ধীরে ধীরে। ৫০, ৬০, ৭০ থেকে ১০০ পর্যন্ত এভাবে দাম বেড়েছে। ভোক্তারা বিরক্ত হলে তারা অন্য ক্যাটাগরিতে চলে যাবে। রিস্ক নিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর এতে বিক্রির পরিমাণ কমছে। তিনি বলেন, যদি দাম (কাঁচামালের) কমার চিত্র দেখি, তাহলে আমরা দাম কমাব।
এসময় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সংগঠক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ডিটারজেন্টের কাঁচামাল সালফিউরিক অ্যাসিড ও সোডিয়াম সালফেট নামে এনে সোডিয়াম ক্লোরাইড বলে সাদা লবণ হিসেবে মার্কেটিং করছে। যে পণ্য বেশি বিক্রি হয় কোম্পানিগুলো সেগুলোর দামই বাড়াচ্ছে। অথচ যেটার দাম বাড়ালে অন্য কোম্পানির দখলে তা চলে যেতে পারে, তার দাম কিন্তু আপনারা বাড়ান না। কিন্তু যেই পণ্যের মনোপলি (একচেটিয়া বাণিজ্য) তৈরি করে ফেলেছেন, সেটার দাম বাড়াচ্ছেন।
এ সময় শিগগিরই পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কারখানা পরিদর্শন করে দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানের শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোক্তারা আপনাদের রঙিন বিজ্ঞাপন দেখতে চায় না। আপনারা পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ান, কমার সময় সেভাবে কমে না। তিনি বলেন, কয়েকটি দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা কোম্পানিগুলো পরিদর্শন করব, তাদের কস্ট অ্যানালাইসিস (ব্যয় বিশ্লেষণ) করব। আসলে কতটা দাম বাড়ানোর কথা ছিল, তারা কতটা বাড়িয়েছে সেটি দেখা হবে। কোনো ধরনের অস্বাভাবিক কিছু পেলে সেখানে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়