৪ বোন চুরি করেই পালাত অন্য জেলায়

আগের সংবাদ

সফরে প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী

পরের সংবাদ

দিরাইয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু : বাঁচবে সময়, কমবে ভোগান্তি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জয়ন্ত কুমার সরকার, দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে : স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে অনেক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে বন্যার্ত লোকজন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর্থিক ও খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নেও কাজ করছেন অনেকে। তেমনই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) উত্তরণ। ক্রিশ্চিয়ান এইডের সহায়তায় কাঠের তৈরি সেতু বানিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাওর জনপদে নানাবিধ সমস্যার অন্যতম হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। গত বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে নাজুক হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নে দুটি কাঠের সেতু তৈরির কাজ শেষ করে চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার দুপুরে দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন ব্রিজ দুটি উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্তিত ছিলেন ৬নং করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ

চেয়ারম্যান লিটন চন্দ্র দাস, প্রকল্প পরিচালক ইশরাত জাহানসহ স্থানীয় ইউপি সদস্যরা।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কালনী নদীর কূল ঘেঁষে চাঁন্দপুর ও টুকদিরাইয়ের খালে নির্মিত হয়েছে ৫৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের কাঠের সেতু। অন্যদিকে একই পরিমাপে চাঁন্দপুর গ্রামের সঙ্গে রজনীগঞ্জ বাজার সড়কের জয়নগর অংশে আরেকটি সেতু নির্মিত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই সেতু দেখতে আশপাশের লোকজন জড়ো হচ্ছে প্রতিদিনই। সেতুর ওপর ছবি তুলছে এলাকার উৎসুক লোকজন। মাত্র ১৫ দিনে দৃষ্টিনন্দন সেতু দুটি তৈরি হওয়ায় অনেকের কাছেই নতুন ও ব্যতিক্রমী মনে হচ্ছে। সেতু দুটি নির্মাণে শুধুমাত্র কাঠ ব্যবহার হয়েছে। সেতু তৈরির মালামাল স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৫ লাখ টাকা। মাত্র ১৫ দিনে তৈরি হয়েছে সেতু দুটি। সেতুর পিলার হিসেবে ছোট ধরনের গাছের মূল ব্যবহার করা হয়েছে। পাটাতন হিসেবে দেয়া হয়েছে কাঠের তক্তা। শক্ত বাঁশ দিয়ে করা হয়েছে রেলিং নির্মাণ। হাওরের প্রতিটি খালেই বর্ষা মৌসুমে নৌকা চলাচল করে বিধায় সেদিক বিবেচনায় নিয়ে উচ্চতা দেয়া হয়েছে ১৬ ফুট।
এলাকাবাসী বলছেন, অধিক ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে উত্তরণের কাঠের সেতু খুব উপকারে আসবে। হাওর এলাকার প্রতিটি খাল ও গ্রামের সংযোগ স্থলে কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করতে পারলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং জনগণ উপকৃত হবে।
কাঠের সেতুর উপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত সংস্কৃতি ও সমাজকর্মী অরণ্য কিরণ বলেন, হাওরবাসীর জন্য এটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। প্রায় প্রতিটি জনপদেই এমন কিছু খাল ও নিচু জায়গা রয়েছে। এসব খালে বর্ষা ও বৃষ্টির দিনে চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয়। দিরাই ও অন্য এলাকায় এমন সেতু নির্মাণ করলে ভালো হবে। এতে নির্মাণ খরচ কমবে। প্রয়োজনে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সুয়োগও থাকবে।
চাঁন্দপুর গ্রামের তপু দাস বলেন, টুকচানপুর খালের উপর ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ায় অন্তত কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতে সময় ও ভোগান্তি কমলো। এছাড়া চানপুর, টুকদিরাই, নাসিরপুর মাটিয়াপুরসহ অন্য গ্রামের শিক্ষার্থীদের চলাচলে সুবিধা হলো। বর্ষা মৌসুমে এই খাল দিয়ে ট্রলার যাতায়াত করে। এছাড়া বারোমাসেই সাধারণ মানুষের চলাচলের অনুপযোগী ছিল এতদিন। এখন ব্রিজের নিচ দিয়ে ট্রলার, উপর দিয়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে। অরুন দাস বলেন, চানপুর গ্রামের দুই প্রান্তে দুটি ছোটখাল। বর্ষা মৌসুমে চলাচলে মারাত্মক অসুবিধায় পড়তে হয়। ব্রিজটি হওয়ায় অন্তত ১০ হাজার মানুষের নিশ্চিত চলাচলের ব্যবস্থা হলো।
কাঠের সেতু নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক ইশরাত জাহান বলেন, বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে উত্তরণ এগিয়ে এসেছে। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় আমরা স্থানীয় লেবার দিয়েই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করি। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হলে সেতু দুটি জনসাধারণের উপকারে আসবে।
এ প্রসঙ্গে করিমপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান লিটন চন্দ্র দাস বলেন, কাঠের সেতু দুটি করিমপুর ইউনিয়নবাসীসহ আশপাশের এলাকার জনসাধারণের চলাচলে সুবিধা হবে। বন্যার সময় টুকচানপুর খালটির ভাঙা অংশে অধিক গর্ত হয়ে গিয়েছিল। সেতু দিয়ে দুইপাড়কে একত্রিত করা হয়েছে। উত্তরণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ব্রিজ দুটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। এর সুফল পেলে অন্যান্য এলাকায়ও এমন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়