এশিয়া কাপ : হংকংকে লজ্জায় ডুবিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আগের সংবাদ

বন্ধুত্ব সুসংহত করার প্রত্যয় : বাংলাদেশে চীনা বলয় ঠেকাতে চায় দিল্লি > পানিসহ সীমান্ত সুরক্ষায় সমাধান চায় ঢাকা

পরের সংবাদ

শিক্ষা অফিসের সহযোগিতার অভিযোগ : প্রতিবেশীর সন্তান দেখিয়ে ‘মাতৃত্বকালীন’ ছুটি!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে প্রতিবেশীর সন্তানকে নিজের দেখিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা। এ বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মুনিয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা সুলতানা, উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী ও হিসাবরক্ষক (বড়বাবু) আজিজার রহমান, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান নওশাদ আলীর যোগসাজশে এ ধরনের অনৈতিক ছুটিতে আছেন শিক্ষিকা আলেয়া।
জানা গেছে, বদলি নিয়ে ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মুনিয়ারহাট বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা আলেয়া সালমা। ২০১৯ সালে তৃতীয়বারের মতো বগুড়ার গাবতলী উপজেলা কাগইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফি আহমেদ স্বপনকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর থেকে তৃতীয় স্বামীর সঙ্গে বগুড়ায় বসবাস করছেন তিনি।
এদিকে করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে বিদ্যালয় খুললেও অনিয়মিত ছিলেন আলেয়া। গত ১৩ মার্চ গর্ভবতী না হয়েও সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন দেখিয়ে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করেন তিনি। ওই সময় তার কোলে এক নবজাতক ছিল। এছাড়া শারমীন নামে এক নারীও তার সঙ্গে ছিলেন।
এরপর চলতি বছরের ১৪ মার্চ থেকে তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। এই ছুটি চলবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যদিও গর্ভকালীন আলেয়ার শারীরিক কোনো পরিবর্তন বিদ্যালয়ের সহকর্মীদের কারও নজরে পড়েনি।
পরে জানা যায়, শিশুটি আলেয়ার বর্তমান স্বামীর প্রতিবেশী আনিছুর রহমান পাশা ও শারমীনের দ্বিতীয় সন্তান।
এ বিষয়ে শারমীন বলেন, ‘আলেয়া আমার আত্মীয়ের মতো। আমি সন্তানসহ তার সঙ্গে কুড়িগ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার বাচ্চাকে আলেয়ার বাচ্চা হিসেবে দেখানো হয়েছে কিনা সেটা আমি কীভাবে বুঝব? তিনি আরও বলেন, ‘আমার বড় মেয়ের নাম আফিফা। বয়স পাঁচ বছর। আর ছোট মেয়ের নাম আশফিয়া। গত মার্চ মাসে আশফিয়ার জন্ম হয়েছে।’
মুনিয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবক ফরিদুল ইসলাম, আব্দুল মমিন, ফরিদা বেগম বলেন, ‘মাঝে মধ্যে আলেয়া আপা স্কুলে আসতেন। আমাদের সঙ্গে দেখা হতো। তাকে দেখে কখনো সন্তানসম্ভাবা মনে হয়নি। মূলত ভুয়া সন্তান দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন তিনি। আর এসব কিছু করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক ও অফিসাররা।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়টির অন্য শিক্ষকরা জানান, নাগেশ্বরীতে থাকা অবস্থায় বিদ্যালয়ে আসতেন আলেয়া। তবে বগুড়া যাওয়ার পর তাকে আসতে দেখতাম না। সন্তান হওয়ার বিষয়টি তারা শুধু শুনেছেন, দেখেননি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আলেয়ার ঘরে প্রথম স্বামীর দুই সন্তান, দ্বিতীয় স্বামীর এক সন্তান রয়েছে। তৃতীয় (বর্তমান) স্বামীর ঘরে কোনো সন্তান না থাকলেও তিনি নিজেকে চার সন্তানের জননী হিসেবে দাবি করেন। তবে শিক্ষা অফিসে শুধুমাত্র প্রথম স্বামীর দুই সন্তানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা আছে। সর্বশেষ যে শিশুটিকে নিজের সন্তান দেখিয়ে আলেয়া ছুটি নিয়েছেন, সে সন্তান তার নয়। সে শিশুটি আলেয়ার বর্তমান স্বামীর প্রতিবেশী আনিছুর রহমান পাশা ও শারমীনের দ্বিতীয় সন্তান।
এ বিষয়ে শিক্ষিকা আলেয়া সালমা বলেন, ‘কি হয়েছে না হয়েছে সবাই জানেন, আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক, এ.টিও, সবাইকে ম্যানেজ করে আমি ছুটিতে আছি। শিক্ষা অফিসের বড়বাবু এসব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’
আলেয়া মোবাইলে আরও বলেন, ‘আপনারা নিউজ করে আমার কিছুই করতে পারবেন না। যতদিন আমার বদলি না হবে, ততদিন আমি ছুটি নিয়েই চলব। আমাদের সিস্টেম আছে। চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতা সরকারেরও নেই।’
প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা সুলতানা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষিকা আলেয়া সালমা নিয়মমাফিক ছুটিতে আছেন।’
এদিকে নাগেশ্বরী উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী ও হিসাবরক্ষক (বড়বাবু) আজিজার রহমান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু নোমান নওশাদ আলী বলেন, ‘আমি ডাক্তারের প্রত্যয়নপত্র, প্রধান শিক্ষকের সুপারিশ দেখে ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর তার মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুরের সুপারিশ করেছি। এখন কেউ যদি অন্যের বাচ্চাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়, তাহলে আমরা কী করব?’
নাগেশ্বরী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘শিক্ষিকা আলেয়ার সন্তানের বিষয়টি যদি মিথ্যা হয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়