বাজারের ব্যাগে মিলল নবজাতকের লাশ

আগের সংবাদ

দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনে গুরুত্ব : অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মহাপরিকল্পনা > ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করার উদ্যোগ পেট্রোবাংলার

পরের সংবাদ

ড. শান্তনু মজুমদার, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : দুপক্ষই উপস্থিতি জানান দিতে চায়

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, দুই পক্ষই উপস্থিতি জানান দিতে চাচ্ছে। বিএনপি হয়ত মনে করছে, রাজপথে তাদের উপস্থিতি জানান দিতে না পারলে কর্মীদের মনোবল ধরে রাখা এবং সরকারকে শক্তিমত্তার ধারণা দেয়া- এই দুটির কোনোটাই হচ্ছে না। অন্যদিকে সরকার হয়ত মনে করছে, বিরোধী দলের যেমন আন্দোলন-সমাবেশের অধিকার আছে, তেমনি জনগণের জানমাল হেফাজতের দায়দায়িত্ব তাদের। আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর

পুরোপুরি অধিকার আছে জনগণের হেফাজত করার এবং আন্দোলনের নামে সহিংসতা মোকাবিলা করার। গতকাল শুক্রবার টেলিফোনে ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলে তিনি। সাক্ষাৎকারে চলমান রাজনৈতিক সংঘাত, এর কারণ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ নিয়ে কথা বলেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আন্দোলন করতে চাইলে করতে দাও, এমনকি আমার কার্যালয় ঘেরাও করতে এলেও দাও। এটি খুব কাক্সিক্ষত বার্তা ছিল। সরকারি দল এবং বিরোধী দল- প্রতিটি দলেরই অধিকার যেমন আছে; দায়দায়িত্বও তেমন আছে। উভয়পক্ষই এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছে কিনা এটি বিবেচ্য বিষয়। তৃণমূলের রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে তিনি বলেন, যারা মিছিলে নেমেছেন, তারা ক্ষোভ-বিক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে কোনোরকমের সহিংসতার উসকানি দিয়েছেন কিনা অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী কোনো ধরনের জিরো টলারেন্সের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিরোধী দলের পুরোপুরি সুযোগ আছে তাদের মত প্রকাশের। জনমত গঠনের। সভাসমাবেশ করার। কিন্তু এসব কথা বলে আমি বিরোধী দলের ওপর হামলাকে সমর্থন করছি না। আবার একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে আছে বলে সহিংসতা সৃষ্টি করবে এটিও সমর্থনযোগ্য নয়।
হঠাৎ কেন উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে তৃণমূলের রাজনীতি? এমন প্রশ্নের জবাবে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, এসব সমস্যা সিরিয়াস হয়েছে কারণ আমরা আলোচনা করি না। বিশেষ করে সুশীল সমাজ সাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমরা মাঝে মধ্যেই কিছু অদ্ভুত সমাধানের কথা ভাবী। সেটি ’৯০ এ ভেবেছি। এরপর ’৯২, ’৯৩ এ ভেবেছি। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল সেই আন্দোলনের নেতৃত্বও দিয়েছিল। সেটি হচ্ছে নির্বাচনকালে অনির্বাচিত সরকার। এটি আমি মনে করি, সামরিক শাসনের পরে দেশে যে গণতন্ত্রের শুভ সূচনা হয়েছিল, তার গোড়ায় গলদ। সেসব প্রতিষ্ঠান সামরিক শাসনের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়েছিল, সেগুলো সবল হওয়ার কোনো সুযোগ পায়নি। কারণ আমরা কোনো বিজ্ঞানসম্মত কথা বলিনি। আমরা আজগুবি কথা বলেছি। নিরপেক্ষ ব্যক্তি, ৯০ দিনের জন্য অনির্বাচিত ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছি। আর শহুরে সুশীল সমাজ এতে পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে।
তিনি বলেন, উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও গণতন্ত্র এখন হুমকির মুখে। তারা কীভাবে এর মোকাবিলা করছে? এখানে জ্ঞানী কথা কাজ করে না। কাজ করে প্রতিষ্ঠান। তাই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মজবুত করতে হয়। কিন্তু আমরা এখনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে পারিনি। যদিও সামরিক শাসনের আঘাতে ভেঙে যাওয়া গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড়ে তোলার সুযোগ ’৯১ সালে তৈরি হয়েছিল, আমরা তা কাজে লাগাতে পারিনি। বরং ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বিচিত্র একটি শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল, যার নাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার। গণতন্ত্রের ইতিহাসে যার নাম কেউ শোনেনি। রাষ্ট্র পরিচালিত হবে নির্বাচিতদের হাত ধরে। আজ ২০২২ সালে সহিংসতা হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল- এর কারণ হচ্ছে এসব। রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি- এটি মূল কারণ। আমাদের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। নির্বাচনে বিশ্বস্ততা বিরোধী দলের অধিকার। আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা রয়েছেন, জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব তাদের। এর যদি কেউ ব্যত্যয় ঘটায়- তখনই আমরা কথ বলতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এজন্য যখন সরকার পরিবর্তন হয় খেলাটা একই থাকে, শুধু দল পাল্টে যায়। এসব এখন গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়