ফুটপাত থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

জ্বালানি তেলের দাম কমল : কেরোসিন ডিজেল পেট্রোল অকটেনের দাম কমেছে লিটারে ৫ টাকা, প্রজ্ঞাপন জারি

পরের সংবাদ

বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থায় বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা মানব জীবনের পরিপূর্ণতার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং ইসলামি শরিয়া ও রাষ্ট্রীয় বিধি মোতাবেক একটি পবিত্র আইনি বন্ধনও বটে। তবে বাল্যবিয়ে পরিবার, দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য মারাত্মক অভিশাপ। বিভিন্ন কারণে বাল্যবিয়ের প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত আছে। বাল্যবিয়ে নিরোধক আইন ব্রিটিশ ভারতে ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সালে প্রথম আইন হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। এই আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স ন্যূনতম ১৪ বছর এবং ছেলেদের ১৮ বছর নির্ধারণ করে আইন পাস করা হয়। ১৯৮৪ সালে এই আইনে পরিবর্তন এনে মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা হয় ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর। সর্বশেষ দেশে ২০১৭ সালে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল ২০১৭’ পাস হয়। অতঃপর দেশের ইসলামি চিন্তাবিদদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পুনরায় ২০২২ সালে ২০১৭ সালের বিবাহ আইন পরিবর্তন করে বিবাহযোগ্য কন্যার বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করেছে এবং বরের বয়স ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করেছে, তবুও বাল্যবিয়ে আশানুরূপ হারে কমেনি বা কমার কোনো লক্ষণ বাংলাদেশে নেই, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে।
যেসব কারণে বাল্যবিয়ের প্রতি বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলের মানুষ ঝুঁকে পড়ে, তার মধ্যে প্রধানত দারিদ্র্য, যৌতুক, সামাজিক প্রথা, বাল্যবিয়ে সমর্থনকারী আইন, মেয়ে সন্তানের সতীত্ব নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা, ধর্মীয় ও সামাজিক চাপ, অঞ্চলভিত্তিক রীতি, অবিবাহিত থাকার আশঙ্কা, নিরক্ষরতা, মেয়েদের উপার্জনে অক্ষম ভাবা এবং সর্বোপরি মেয়ে সন্তানকে মা-বাবার একটা দায় মনে করা। বাল্যবিয়ের কারণে ছেলে ও মেয়ে উভয়েই কম বয়সি হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা ও স্বাস্থ্যহানি ঘটে। বালিকা বধূদের অপুষ্টি, কম ওজনের ও বিকলাঙ্গ বাচ্চা প্রসব করতে দেখা যায়, যা পরবর্তী পর্যায়ে বিরাট অভিশাপ ও বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। অপরিপক্ব শারীরিক গঠনের কারণে একজন মা পরিপক্ব সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম, মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে বহুলাংশে। সংবিধানে বাল্যবিয়ে করার শাস্তির বিধান ধারা ৭-এ বলা হয়েছে- ‘যদি কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বর বা কনে যেই হোক না কেন বাল্যবিয়ে করে থাকে তবে তিনি সেই অপরাধে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন এবং এরই সঙ্গে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড পেতে পারেন।’ ব্র্যাকের এক জরিপে দেখা যায়, কোভিড-১৯ কালীন সময়ে প্রায় ৬১ শতাংশ বাল্যবিয়ে সারাদেশে সংঘটিত হয়েছে। বন্যা, ক্ষরা ও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে বাল্যবিয়ে প্রায়ই সংঘটিত হয় বা অভাবের তাড়নায় কন্যা শিশুকে বিয়ে দিয়ে অন্যের সংসারে পাঠিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ বলে মনে করা হয়।
আধুনিক যুগে এসেও মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। একজন কন্যাসন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করলে সে নিশ্চয় সমাজে আলোকিত মানুষ হয়ে বেড়ে উঠবে এবং সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন ও স্বনির্ভর হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। বাল্যবিয়ের বিষাক্ত থাবা থেকে মুক্তির অনন্য পথ হলো সামাজিক আন্দোলন, গ্রামীণ সমাজপতিদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন সময়ের দাবি। ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তির জন্য ধর্মগুরুদের যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য। শুধু বাল্যবিয়ে নিরোধক আইন থাকলে চলবে না, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেই ব্যাপারে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন, তাহলে বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া গ্রামে গ্রামে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা এবং সমষ্টিগতভাবে বাল্যবিয়ের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি পরিবারে মা-বাবাদের কন্যাসন্তানকে বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে ভাবতে হবে। ছেলে-মেয়ে উভয়কে সমতার ভিত্তিতে শিক্ষা দান করতে হবে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি, কুসংস্কারের অন্ধকারে আচ্ছন্ন সমাজের মানুষকে সুশিক্ষার আলো দিয়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে সমাজ থেকে বাল্যবিয়ের অভিশাপ দূর হবে বলে আশা করা যায়।

রবি রায়হান : কবি ও লেখক, ঢাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়