কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. স্বপন (২৬) নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত রবিবার অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব বলছে, ওই তরুণ মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ শিখে দ্রুতই বেশ দক্ষতা অর্জন করেন। একপর্যায়ে নিজেই মোবাইল ফোন তৈরি ও আইএমআই নম্বর পরিবর্তন করতেন। সেসব ফোন দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে চলে যেত সাধারণ গ্রাহক ও অপরাধীদের হাতে।
গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে মো. স্বপনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, একটি বেসরকারি অফিসে পিয়নের কাজ করতেন স্বপন। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তিতে আগ্রহ তার। এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন মেরামতের সূত্রে গুলিস্তান এলাকার একজন মেকানিকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সেই মেকানিকের মাধ্যমে স্বপন জানতে পারেন, মোবাইল মেরামতের ব্যবসা বেশ লাভজনক। তখন একটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে বিনা বেতনে কাজ শিখতে শুরু করেন। দ্রুতই বেশ দক্ষতা অর্জন করেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে আরো জানার জন্য অনলাইনে সার্চ করেন। একপর্যায়ে নিজেই মোবাইল ফোন তৈরি ও আইএমআই নম্বর পরিবর্তনের কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন দেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনে মোবাইল ফোন তৈরি শুরু করেন। স্বপন প্রতিদিন ৫০টি মোবাইল ফোন তৈরি করতে পারেন।
স্বপনের কারখানায় তৈরি হওয়া এসব মোবাইলে সিলার ও হিটার মেশিনের সহায়তায় মেড ইন চায়না, মেড ইন ভিয়েতনাম, মেড ইন ফিনল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নাম লিখে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল প্যাকেট মুড়িয়ে বিক্রি করা হতো। এসব মোবাইল বিটিআরসির ডেটাবেজে নিবন্ধিত না থাকায় বিক্রির পর অধিকাংশেরই কোনো না কোনো সমস্যা হতো। তাই গ্রাহকদের প্রচুর অভিযোগ আসত। বারবার ফোন নষ্ট হওয়ায় গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হতেন। তখন মোবাইল মেরামতের আশা ছেড়ে দিয়ে নষ্ট মোবাইলটি আর ফেরত নিতে আসতেন না গ্রাহকরা। তখন ওই মোবাইল মেরামত করে নতুন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হতো। এখন পর্যন্ত স্বপনের কারখানায় তৈরি ১০ হাজার মোবাইল ফোন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়েছে। এই মোবাইল বিক্রির ৩০ লাখ টাকার বেশি অর্থ দিয়ে নিজ গ্রামে জমি কিনেছেন তিনি। এ কারখানায় সাধারণ আকারের মোবাইলের পাশাপাশি বিশেষ আকৃতির ২.৫ ইঞ্চি মাপের মোবাইল ফোন তৈরি হতো। এসব মোবাইল দিয়ে কথা বলা ছাড়াও বিভিন্ন কাজ করা যায়। এই মোবাইল ফোনগুলো কোনো অপরাধী চক্র অথবা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে কিনা জানতে তদন্ত করছে র‌্যাব। আটক স্বপনের কারখানায় আরো কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) সহযোগিতায় স্বপনের কারখানায় র‌্যাবের অভিযানে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি মোবাইল ফোন, ৩ হাজার ৩৭০টি মোবাইলের নকল ব্যাটারি, ১২০টি হেডফোন, চার্জার ক্যাবল ৩৮৫টি, নকল মোবাইল চার্জার ১ হাজার ১৫৫টি, সিলার মেশিন, হিট গান, ৪৩টি মোবাইল ডিসপ্লে, ইলেকট্রিক সেন্সর ১০টি, ১৩টি আইএমইআই কাটার মেশিন জব্দ করা হয়। এছাড়া বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার ও ভুয়া বারকোড উদ্ধার করা হয়েছে।