ডাকসু নির্বাচন ঘিরে পদাবনতি : স্বপদে ফিরছেন ঢাবি শিক্ষক শবনম

আগের সংবাদ

ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ আরোহীর মৃত্যু, দায় কার : গেটম্যানের অনুপস্থিতি নাকি মাইক্রোবাস চালকের অবহেলা > গেটম্যান নাজিম আটক

পরের সংবাদ

পূজা উদযাপন পরিষদের গোলটেবিলে বিশিষ্টজনরা : অপশক্তি রুখতে গণজাগরণের তাগিদ

প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৯, ২০২২ , ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশকে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দেয়। তারা সমাজ ও রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। এই ধর্মান্ধতা ও ষড়যন্ত্রের শিকার শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই হয়েছেন এমনটা নয়, মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। সাম্প্রদায়িক এই শক্তিকে প্রতিহত করতে সংবিধানকে রাষ্ট্রধর্ম থেকে মুক্ত করে বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছেন বিশিষ্টজনরা। পাশাপাশি ধর্মান্ধ অপশক্তির বিরুদ্ধে গণজাগরণেরও সুপারিশ করেন তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি ও সুপারিশ করেন বিশিষ্টজনরা। পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান ও আবু সাঈদ খান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ। মূল বক্তব্য তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, যারা মনে করেন ধর্মান্ধ, ধর্মীয় অপশক্তি ও ধর্মব্যবসায়ীদের সঙ্গে আপস করলে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন। কারণ এদের উদ্দেশ্য হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উৎখাত করে দেশকে পাকিস্তান বানানো ও তালেবানী সরকার প্রতিষ্ঠা করা। ধর্মান্ধ শক্তির সঙ্গে আপস করা কোনোভাবেই উচিত হবে না। বরং তাদের প্রতিরোধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। তাদের প্রতিহত করতে না পারলে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
কোন পথে পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব সেই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের আস্থার জায়গাটা ধীরে ধীরে ¤øান হচ্ছে। সংবিধানকে ধর্মনিরপেক্ষ করতে হবে। আইনের শাসন প্রয়োগ করতে হবে, যাতে কোনো নাগরিক নিজ হাতে আইন তুলে নিতে না পারে। যদি নেয় তাহলে তাকে বিচারিক আওতায় আনতে হবে। সাম্প্রদায়িক ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন,

সবার আগে সংবিধানকে রাষ্ট্রধর্ম থেকে মুক্ত করতে হবে এবং বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। রাজনীতি হচ্ছে সব সমস্যার মূল জায়গা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক দানবের সৃষ্টি হয়েছে, তার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশকে পাকিস্তানি স্টাইলে ধর্মভিক্তিক রাষ্ট্র বানানো। এ থেকে মুক্তি পেতে বিশাল গণজাগরণের বিকল্প নেই।
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা ঘটনোর জন্য নতুন মাধ্যম বেছে নেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই সহিংস ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। এই সমস্যার রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার, অসাম্প্রদায়িক এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশের কথা বলি। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তা বিশ্বাস করি না। সামনে জাতীয় নির্বাচন। সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলব, যাদের মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের পূর্ব-পুরুষ কী করতেন সেসব খোঁজখবর নিয়ে মনোনয়ন দেয়া দরকার। কারণ মনন ও মানসিকতা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে হলে সংবিধানের পরিবর্তন জরুরি। সাম্প্রদায়িকতা একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। একে হাতিয়ার বানিয়ে দুর্বল ও সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। সমাজে ধর্মীয় আচরণ পালনের প্রতিযোগিতার নতুন যে দিকটি দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সম্মিলিত প্রতিরোধের জায়গা তৈরি করতে হবে।
অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সমাজের ভেতরে বড় ধরনের রূপান্তর হয়ে গেছে। সারাক্ষণ বঙ্গবন্ধুর কথা বলা হচ্ছে কিন্তু তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকেই আমরা হাজার মাইল দূরে। সংখ্যালঘু থেকে সংখ্যা শূন্য করার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের সংবিধান একটি সাম্প্রদায়িক সংবিধান। এই সংবিধান মুসলমানের সংবিধান। এখানে হিন্দু, আদিবাসী, নৃগোষ্ঠীর স্বার্থের কথা নাই। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দিতে হবে। সাংস্কৃতিকভাবে আফগানিস্তান এবং অর্থনৈতিকভাবে শ্রীলঙ্কা আমাদের ঘাড়ের ওপর শ্বাস ফেলছে। এই দুইয়ের মাঝখানে আমরা আছি।
আবু সাঈদ খান বলেন, পঁচাত্তরের পর থেকে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো আপসের রাজনীতি করছে। রাজনীতিকে সঠিকপথে আনতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিকে সম্মিলিতভাবে করজ করতে হবে। মানবিক চেতনার জায়গায় আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, আমারা বেদনার সঙ্গেই নিজেদের ‘সংখ্যালঘু’ বলি। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা রাষ্ট্রকেই দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সামাজিক দায়বদ্ধতার পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও দায়বদ্ধ হতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়