ডাকসু নির্বাচন ঘিরে পদাবনতি : স্বপদে ফিরছেন ঢাবি শিক্ষক শবনম

আগের সংবাদ

ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ আরোহীর মৃত্যু, দায় কার : গেটম্যানের অনুপস্থিতি নাকি মাইক্রোবাস চালকের অবহেলা > গেটম্যান নাজিম আটক

পরের সংবাদ

নতুন করারোপ নেই : কেসিসির ৮৬১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৯, ২০২২ , ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ

বাবুল আকতার, খুলনা থেকে : খুলনা সিটি করপোরেশনের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৮৬১ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি নতুন কোনো করারোপ ছাড়াই ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ৪৫০ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও পেশ করেন।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯২ কোটি ১১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা এবং সরকারি বরাদ্দ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কেসিসির অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শেখ মো. গাউসুল আজমের সভাপতিত্বে বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) লস্কর তাজুল ইসলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং কোভিড সংক্রমণে মহানগরীতে মৃত্যুবরণকারীদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সিটি মেয়র বলেন, নগরবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখে মহানগরীতে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে উন্নয়নমুখী এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে এ বাজেটের দ্বারা নগরীর উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। পদ্মা সেতু নির্মাণ তার আন্তরিকতা ও সাফল্যের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রীর এ সদিচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুলনাকে একটি সুন্দর শহর বিনির্মাণে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি বলে তিনি উল্লেখ করেন। নির্বাচনী ইশতেহারের প্রসঙ্গ টেনে সিটি মেয়র বলেন, নগরবাসীকে যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলাম এ বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করছি। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নগরবাসীর সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে খুলনাকে একটি শান্তি ও স্বস্তির নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নিজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার এগিয়ে আসা সেই চেষ্টারই ফল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন, কেসিসির পক্ষ থেকে প্রায় ৮ হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেএমপির ট্রাফিক বিভাগের উদাসীনতার কারণে তার চেয়ে অনেক বেশি ইজিবাইক নগরীতে চলাচল করছে। ফলে ট্রাফিক সিস্টেমেও বিঘেœর সৃষ্টি হচ্ছে। বাজেটের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে সিটি মেয়র বলেন, ঘোষিত বাজেট একটি জনকল্যাণমুখী ও উন্নয়ন বাজেট। আগেকার মতো এ বাজেটেও নতুন কোনো করারোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌর কর আদায়, নবনির্মিত স্থাপনার ওপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্যের মাধ্যমে নিজস্ব আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া বাজেটে শহরের সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ স্বাস্থ্য খাত, বর্জ্য

ব্যবস্থাপনা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, পার্ক, ধর্মীয় উপাসনালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেসিসির বিভিন্ন দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ, মশক নিধন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নিয়মিত যে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলাসহ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন মান উন্নয়নে বস্তি এলাকায় পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট, ড্রেন, ল্যাট্রিন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এ বাজেটে।
বাজেট ঘোষণাকালে সিটি মেয়র আরো বলেন, স্ব-শাসিত একটি প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র সরকারি বা বিদেশি সাহায্য বা ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারে না। তাকে নিজস্ব আয়ের ওপর নির্ভর করে চলার চেষ্টা করতে হবে, যা আজ সময়ের দাবি। এজন্য প্রয়োজন সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকের পরিপূর্ণ আন্তরিক সহযোগিতা। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের যেমন দায়িত্ব রয়েছে নগরবাসীর নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা তেমনিভাবে নাগরিকদেরও কর্তব্য রয়েছে করপোরেশনকে তার কাজে সার্বিক সহযোগিতা করা।
বাজেট বর্ণনায় তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় এডিপিতে কেসিসির ৩টি প্রকল্পে ৪২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন প্রকল্প, খুলনা মহানগরীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প ও খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। তিনি বলেন, এ বছর উন্নয়ন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। নগরীর সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের জন্য সরকারের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জার্মান উন্নয়ন সংস্থাসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। সংস্থাগুলোর ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় চলমান রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব প্রকল্পে ১৮৬ কোটি ২০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা উন্নয়ন সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প-২, সিটি ওয়াইড ইনক্লুসিভ স্যানিটেশন এনগেজমেন্ট ইন খুলনা সিটি, এনগেজিং মাল্টি সেক্টরাল পার্টনার্স ফর ক্রিয়েটিং অপরচুনিটিজ ইমপ্রæভিং ওয়েলবিয়িং এন্ড রিলিজিং রাইটস অব দি আরবান পুওর প্রকল্প, লাইভস্টক ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন ও উন্নয়ন প্রকল্প, ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ওয়াটার অ্যাজ লিভারেজ নেদারল্যান্ড সরকার, ভারত সরকারের অর্থায়নে খুলনা শহরের বিভিন্ন এলকায় কৃষি মার্কেট, পার্ক, কম্পিউটার ল্যাব, ওয়াই-ফাই জোন নির্মাণ প্রকল্প, ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড, হেলদি সিটি খুলনা আন্ডার আরবান লিড প্রোগ্রাম-ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, ক্যাপেক্স মডেল ৯৬৫ কিলোওয়াট ফ্লোটিং এন্ড রুফটপ সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট আন্ডার সিটি করপোরেশন, থ্রি আর ইনটেটিভ পাইলট প্রোজেক্ট ফেজ-১, সাসটেইনেবল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং টু রিডিউস ইরিভারসেভেল পপুলেশন বাই প্লাস্টিক প্রজেক্ট, ইমপ্রæভ কো-অর্ডিনেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট ফাইন্যান্স, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট-২ এবং ক্লাইমেট চেঞ্জ এডাপটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প।
সিটি করপোরেশনের সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে এবং ব্যয় সংকোচন করে নগরীর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজস্ব খাত থেকে এ বাজেটে ৫৬ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি কেসিসির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নেয়ার জন্য নিয়মিত কর পরিশোধসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সর্বাত্মক সহায়তা করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, কেসিসির মেয়র প্যানেলের সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম (মুন্না), মো. আলী আকবর টিপু ও মেমরী সুফিয়া রহমান শুনুসহ কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতা, নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাংবাদিক ও কেসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়