হৃদরোগে এসপি দেওয়ান লালন আহমেদের মৃত্যু

আগের সংবাদ

ইসির সংলাপ শুরু আজ, যাচ্ছে না বিএনপি

পরের সংবাদ

লালবাগে অপরাধ অলিগলিতে

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫০টি থানা রয়েছে- যা ক্রাইম ডিভিশন হিসেবে ৮ ভাগে বিভক্ত। রাজধানীর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে অপরাধের ধরন অভিন্ন হলেও এলাকাভিত্তিক অপরাধে আছে ভিন্নতা। জমি দখল ও মাদক সমস্যা সর্বত্রই, আছে চাঁদাবাজিও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত ও বিশেষ অভিযানে কিছু অপরাধী ও ছিঁচকে সন্ত্রাসী ধরা পড়লেও কমছে না অপরাধের মাত্রা। জামিনে মুক্ত হয়ে অনেকে ফের অপরাধে জড়াচ্ছে। বিদেশে পলাতক এবং কারাবন্দি অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী এখনো অপরাধ জগতের কলকাঠি নাড়ছে। রাজধানীর ৮ বিভাগের অপরাধের রকমফের নিয়ে আমাদের ৮ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন।

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি বড় অংশসহ ৭টি থানা নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ জোন গঠিত। এর প্রতিটি অলিগলিতে অপরাধীদের পদচারণা। এলাকাভেদে আছে অপরাধের রকমফের। দিন ও রাতে চলে ভিন্ন ধরনের অপরাধ। চকবাজার, কোতোয়ালি, বংশাল, সূত্রাপুর, লালবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানা নিয়ে এই জোন গঠিত। এই জোনের আইনশৃঙ্খলার মাসিক অভ্যন্তরীণ সভায় আলোচ্য বিষয় প্রায় অভিন্ন ইস্যু। এর মধ্যে মাদক, নকল পণ্য তৈরি ও বিক্রি, অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, ভবন ও ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ মেলে হরহামেশা। আদালতপাড়ায় মামলার কজে অপরাধীদের নিয়মিত আসা-যাওয়া থাকায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রায় সবারই পুরান ঢাকায় শিষ্য রয়েছে। পেশাদার অপরাধীরাও দাপিয়ে বেড়ায় এই এলাকা। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, তারা সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে পরিচিত। সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে লালবাগ জোনের

উপপুলিশ কমিশনার মো. জসিম উদ্দিন মোল্যা ভোরের কাগজকে বলেন, সবমিলিয়ে এই জোনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি হলেও জড়িতরা ধরা পড়ছে। পুলিশের টহল ও অভিযান নিয়মিত চলছে।
গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের পুলিশ কমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেছেন, ভেজাল ও নকল পণ্যের অভিযোগে অনেক অভিযান চালানো হয়েছে। এতে সাফল্য এসেছে। আবার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, কামরাঙ্গীরচরে বখাটেদের আড্ডার অভিযোগ থাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। এতে অভিযোগ কমে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালবাগ ও কামরাঙ্গীরচরে আছে নকল পণ্য তৈরির শত শত কারখানা। কসমেটিকস থেকে শুরু করে সবধরনের প্রসাধন সামগ্রীর নকল কারখানা চলছে প্রকাশ্যে। অনেক বাসাবাড়িতে ছোট ছোট কারখানা চলছে। আছে সেমাই, চকোলেট ও মানহীন খাবার তৈরির কারখানাও। এসব প্রসাদন বিক্রি হয় চকবাজারে। ইসলামপুরে দেশি কাপড়ে বিদেশি সিল মেরে বিক্রির অভিযোগ পুরনো। কাপড়বাহী রিকশা নিয়ে চম্পট দেয়ার অভিযোগ ফাঁড়ি পুলিশের কাছে যায় প্রায়ই। ইসলামবাগ, কামালবাগ, শহীদবাগ, হাজারীবাগের অনেক গলিতে আছে নকল পণ্য তৈরির কারখানা। বাবুবাজার ব্রিজ থেকে নয়াবাজার মোড় পর্যন্ত দিনে টানাপার্টির বেজায় দাপট। সন্ধ্যার পর নবাববাড়িতে ইয়াবার বিকিকিনি বাড়ে। হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচরে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ লেগেই থাকে। কামরাঙ্গীরচরে মাদক বিক্রি এবং জমি সংক্রান্ত বিরোধ বেশি। মিটফোর্ড এলাকায় ভেজাল ও নকল ওষুধের ছড়াছড়ি। এখান থেকে সড়ক ও নৌপথে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ওষুধ নামের বিষ! অভিযানে ধরা পড়লেও থেমে নেই সংঘবদ্ধ চক্র। এ নিয়ে বিপত্তির শেষ নেই। লালবাগ, হাজারীবাগ ও বেড়িবাঁধ এলাকায় চলে নীরব চাঁদাবাজি। আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকায় চাঁদাবাজি ও বটতলা এলাকায় মাদক ব্যবসা রমরমা।
পুরান ঢাকা দেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ও অপরাধ প্রবণ এলাকা। এর অলিগলি ও অসংখ্য সংকীর্ণ রাস্তা ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য। স্থানীয় ও বহিরাগত কিছু উঠতি বয়সের তরুণ প্রতিনিয়তই চুরি-ছিনতাই, ইভটিজিং ও মাদকের আসর বসানোর মতো অপরাধ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, এসব অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার এক বা একাধিক কিশোর গ্যাং জড়িত। গত এক বছরে লালবাগ, বংশাল, চকবাজার, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, ওয়ারী, ধোপখোলা ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় এসব কিশোর গ্যাংয়ের হাতে অন্তত ১০ কিশোর নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় কয়েকজন কারাগার ও কিশোর সংশোধনাগারে থাকলেও অন্যরা জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের অপরাধ করছে। গত বছরের ২৮ মার্চ শব-ই-বরাতের রাতে সূত্রাপুরের ফরাশগঞ্জ ঘাট এলাকায় সিগারেট খাওয়া নিয়েজিত কিশোরদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে এক কিশোরের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারায় আরিফ হোসেন অনন্ত নামে আরেক কিশোর। হামলায় আহত হয় নিহতের বন্ধু সাজু আহমেদ ও সোহেল। শাঁখারীবাজার, কলতাবাজার, লালকুঠি, শ্যামবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজারসহ সদরঘাটের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফেরদৌস গ্রুপ, সাজু গ্রুপ, সিনিয়র গ্রুপ, জুনিয়র গ্রুপ, টাইগার গ্রুপ, চিতা গ্রুপ, বড় বাপের পোলাসহ অসংখ্য কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। প্রতিটি গ্যাংয়ে ২০ থেকে ৫০ জনের বেশি কিশোর সদস্য রয়েছে। এদের কেউ স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছে, কেউ বা ভাসমান জনগোষ্ঠীর। এদের কেউ কেউ মাদক মামলার আসামি বা জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে। সন্ধ্যা হলেই পুরান ঢাকার অলি-গলিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে এসব গ্যাং। পাতলা খান লেনের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, রাত হলেই সেখানকার পরিবেশ পাল্টে যায়। প্রায়ই ১০-১৫ জন কিশোর মাদক সেবনের জন্য নির্মাণাধীন ভবনে ওঠে। তাদের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। কলতাবাজার এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী তার মেসের প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার নিয়ে বাসায় ফেরার পথে কবি নজরুল কলেজের পাশে উইনস্টন গলিতে শারীকিভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। ভুক্তভোগী সেই ছাত্রী প্রথমে সূত্রাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি ও পরে মামলা করেন। তবে আসামি শনাক্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়টির নাট্যকলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থীকে দুই মোটরসাইকেল আরোহী কিশোর শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। ল²ীবাজারের অনার্স পড়ুয়া এক ছাত্রীকে লালকুঠিতে ঘিরে ধরে ১০-১২ জন উঠতি বয়সি কিশোর। বংশালের অনেকে বলেছেন, সেখানকার অনেক ভবনের ছাদে ছাদে মাদকের আসর বসে নিয়মিত। বাংলাবাজার ও সদরঘাটে কর্মরত কম বয়সি কিশোর-যুবকরা স্থানীয়দের নিয়ে ছাদে মদ, গাঁজা ও জুয়ার আসর বসায়। মাঝে মাঝেই সুযোগ পেলে বাসার মধ্যে ঢুকে পড়ে চুরি করে। তারা মাদকের টাকার জন্য ছিনতাই করে। গলির ভেতরে কাউকে একা পেলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়