মুম্বাইয়ে ভবনধসে নিহত ১৯

আগের সংবাদ

বানভাসিদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

পরের সংবাদ

নদনদীর পানি বাড়ছে : ফের বন্যার আশঙ্কা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : উজানের ঢলে আবারো বাড়তে শুরু করেছে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নদনদীর পানি। নীলফামারীতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। এতে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজ রক্ষায় ৪৪টি সøুইসগেট খুলে দেয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জে সুরমা ও নেত্রকোনায় ধনু নদের পানিও বাড়ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে যে কোনো সময় বিপৎসীমা ছাড়াতে পারে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
নীলফামারী : উজানের ঢলে আবারো বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। এক সপ্তাহ ধরে পানি কমলেও গতকাল বুধবার সকাল থেকে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। সকাল ৯টায় নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার সংযোগস্থলে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার (যা বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার নিচে)। পানির চাপ মোকাবিলায় ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, সকাল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। এতে ব্যারাজ রক্ষায় ৪৪টি সøুইসগেট খুলে দেয়া হয়েছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে যে কোনো সময় বিপৎসীমা ছাড়াতে পারে। পানি কমার সম্ভাবনা দেখছি না। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
লালমনিরহাট : ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে সানিয়াজান নদীর পানি বেড়ে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন

প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়েছেন ১ হাজার ২০০ পরিবার। ঘর থেকে বের হতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। অন্যদিকে ফের বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানিও।
গতকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে সানিয়াজান নদীর পানি বাড়তে থাকে। ফলে হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া, বড়খাতা ও গড্ডিমারী ইউনিয়নে সানিয়াজান নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। অনেক পরিবার রান্না করতে না পেরে শিশু সন্তান নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে ফকিরপাড়া ইউনিয়নের দালালপাড়ায় গুচ্ছগ্রাম যাওয়ার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। গুচ্ছগ্রামের ৪০টি পরিবার ঘর থেকে বের হতে পারছে না। পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লালচান হোসেন বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে সানিয়াজান নদীর পানি বাড়ছে। এতে আমার ঘরবাড়িসহ এ ওয়ার্ডে প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন জানান, হঠাৎ সানিয়াজান নদীর পানি বেড়ে এলাকার কয়েকশ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলোর ত্রাণ সহায়তা খুবই প্রয়োজন।
পানিবন্দি রমনীগঞ্জ গ্রামের মোজাম্মেল হক (৫৫) বলেন, রান্নাঘরে পানি আসায় চুলা জ্বালানোর কোনো ব্যবস্থা নাই। সকাল থেকে বিস্কুট খেয়ে দিন পার করছি। গরু-ছাগল নিয়ে বাঁধের রাস্তায় অবস্থান করছি।
ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন বলেন, ফকিরপাড়া ইউনিয়নের চার ওয়ার্ডে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ত্রাণ সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদৌলা বলেন, উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সানিয়াজান নদীর পানি বেড়েছে। তবে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, উপজেলায় কী পরিমাণ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পরিবারগুলোর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে ত্রাণ সহায়তার আবেদন করা হয়েছে। ত্রাণ সহায়তা পেলে দ্রুত পানিবন্দি পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : গত এক সপ্তাহ সুনামগঞ্জে কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বানভাসিরা ছিলেন কিছুটা স্বস্তিতে। অনেকে বাড়িঘর ঠিকঠাক করে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে ফিরতে শুরু করেছিলেন নিজ বাড়িতে। এরই মাঝে গত সোম ও মঙ্গলবার দিনে এবং রাতে বৃষ্টি হয়ে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফের বন্যার আশঙ্কায় পড়েছেন হাওরবাসী। একই সময়ে ভারতের উজানে মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ায় সুনামগঞ্জের ছাতক, দেয়ারাবাজার ও তাহিরপুর উপজেলায় ফের নামছে পাহাড়ি ঢল। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে মানুষের মাঝে।
গত দুই দিনে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি বেড়েছে ২২ সেন্টিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, ভারতের উজানে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই এদিকে ঢল নামছে। ভারতের উজানের সঙ্গে সুনামগঞ্জেও বৃষ্টি হওয়ায় নদনদীর পানি কিছুটা বাড়ছে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ২৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। দিরাই উপজেলায় পুরাতন সুরমা নদীর পানি আছে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপরে। তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী জাদুকাটার পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গতকাল সকালে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭.৬৬ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার একই সময় এখানে পানির উচ্চতা ছিল ৭.৫৫ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ১১ সেন্টিমিটার। সোমবার সকালে পানির উচ্চতা ছিল ৭.৪৫ সেন্টিমিটার। এই হিসাবে গত দুই দিনে পানি বেড়েছে ২২ সেন্টিমিটার।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে সুনামগঞ্জের সুরমা, জাদুকাটা, চিলাই, খাসিয়ামারা, চেলাসহ জেলার বিভিন্ন নদনদীর পানি কিছুটা বাড়ছে। এতে করে ফের বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন সুনামগঞ্জবাসী।
তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম।
নেত্রকোনা : জেলার প্রধান নদনদীগুলোর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলায় উব্ধাখালী ও খালিয়াজুরী উপজেলায় ধনু নদে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে আতঙ্কে সারা জেলার মানুষ। এমনিতেই সাধারণ মানুষের মাঝে গুঞ্জন চলছিল, নেত্রকোনায় এ মাসের শেষদিকে আবার বন্যা হবে। আবহাওয়ার আগাম সতর্কবার্তা নিয়েও আলোচনা চলছে জনগণের মধ্যে। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, কলমাকান্দার উব্ধাখালী ও খালিয়াজুরী উপজেলায় ধনু নদের পানি বাড়ছে। জেলার পানিবন্দি ৬৩টি ইউনিয়নের ৩৫ হাজার ৪৯৫টি পরিবারের ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত ৩৭ লাখ নগদ টাকাসহ শুকনো খাবার প্রদান ও অন্যান্য জরুরি চাহিদা মেটাতে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়