টিপু হত্যা মামলা : মুসার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আগের সংবাদ

ভিটাহীন সংসার, আকাশ মাথায় : বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে, সিলেট-সুনামগঞ্জে নতুন করে বাড়ছে পানি

পরের সংবাদ

‘আমরা কিলা বাঁচমু কইন’

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শংকর দত্ত, ছাতক (সুনামগঞ্জ) থেকে : ‘বন্যার পানিতে আমরার সব শেষ। এক সপ্তাহ ধইরা পানিবন্দি। আমার কাঁচা ঘরটি ভাইঙ্গা পানিতে ভাইস্যা গেছে। ঘরের লগে হাঁস-মুরগি, কাঁথা-কাপড়ও বন্যায় নিছে। ওখন আমরা কিলা বাঁচমু, কইন আপনারা?’ কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আজহার আলীর ছেলে কৃষক আনসার উদ্দিন। তিনি ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের জাতুয়া গ্রামের বাসিন্দা। বন্যার ভয়াবহতা বাড়তেই পানি বেড়ে বসতঘরে উঠে যাওয়ায় ৩ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থান নেন তিনি। স্থানীয়রা তাদের শুকনো খাবার দিয়েছেন। কিন্তু কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের কোনো খবরও নেননি বলে জানিয়েছেন। সন্তানদের বাঁচাতে তিনি সিলেটের জালালাবাদ থানার সৈয়দপুর গ্রামে শ্বশুড়বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। তার মতো গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ফেলে এসেছেন। দ্বিতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পুরো ছাতক উপজেলা। বেশির ভাগ মানুষের বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে গোলা ভর্তি ধান, হাঁস-মুরগি। নষ্ট হয়েছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। অনেকের ঘর ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। এখনো শত শত পরিবার গবাদিপশু নিয়ে সড়কের উপর রাত কাটাচ্ছেন। মানুষের দেয়া ত্রাণ দিয়ে কোনো ভাবে চলছে। অসংখ্য মানুষ শুধু পানি খেয়ে দিন কাটিয়েছেন। গত ৩ দিন ধরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা শহরে অবস্থান করে বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন। বাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র শ্রেণির হাজার হাজার পরিবার ভাঙাচোরা বসতঘর নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সরজমিন উপজেলার ইসলামপুর, নোয়ারাই, কালারুকা ও ছাতক সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বন্যাদুর্গতরা অনেকেই বাড়ি থেকে পানি নেমে যাওয়ায় নিজেদের ঘর মেরামতের কাজ করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কেউ সরকারি ত্রাণ পেয়েছেন আবার কেউ পাননি। তবে বেসরকারিভাবে সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিনই ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। শহর ও উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে পানি কমছে। তবে এখনো শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পুরো শহরজুড়ে ময়লা-আবর্জনায় চারদিকে পচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শুধু শহর নয়, পুরো প্রতিটি সড়কের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লায় দুর্গন্ধের জনপদে পরিণত হয়েছে। বাসাবাড়ির বেশির ভাগ টিউবওয়েলের পানিতেও দুর্গন্ধ থাকায় এই পানি এখন পান করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হওয়া ধান, বিছানাপত্র, কাপড়চোপড়, ময়লা-আবর্জনা ইত্যাদি পচে এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচও ডা. রাজিব চক্রবর্তী বলেন, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়া রোগীর বেশির ভাগই চর্মরোগের সমস্যায় ভুগছেন। উপজেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে সব মানুষকেই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ট্যাবলেট না পাওয়া গেলে পানি ভালো করে ফুটিয়ে পান করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়