সেন্ট লুসিয়ায় ধীরে এগুগোচ্ছে উইন্ডিজ

আগের সংবাদ

বিধ্বস্ত শহরে ভূতুড়ে নিস্তব্ধতা : আদালতের নিয়মিত বিচারকাজ বন্ধ > অফিসপাড়া নিথর > বন্ধ হাসন রাজা মিউজিয়াম > পথে পথে ক্ষতচিহ্ন

পরের সংবাদ

‘এমন ঘটনা গোটা বাংলাদেশের অপমান’ : নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অধ্যক্ষ স্বপন বিশ্বাস > নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনা

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনায় প্রতিবাদ ও নিন্দা অব্যাহত রয়েছে। সচেতন মহল বলছেন, এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা গোটা বাংলাদেশের জন্য অপমানের। পদ্মা সেতু নির্মাণ ও দেশের উন্নয়নের অর্জনকে ¤øান করে দেয়। ভোরের কাগজের প্রতিনিধি জানান, এই ঘটনায় গতকাল রবিবার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে জরুরি বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ভোরের কাগজকে বলেন, আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার বাড়িতে পরিবারের লোকজন পুলিশ পাহারায় থাকলেও তারা আমার জন্য দুঃশ্চিন্তায় আছে। আমার কিছু বলার নেই। প্রশাসনের বিষয় প্রশাসন দেখবে। আমি চাই, সত্য প্রকাশিত হোক। ন্যায়বিচার হোক। এলাকায় শান্তি ফিরে আসুক। এলাকায় ধর্মীয় সম্প্রীতি ফিরে আসুক।
পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে এমন ঘটনায় হতবাক ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এই দায় থেকে প্রশাসন কোনোভাবেই নিজেদের মুক্ত করতে পারে না। অপরাধ যদি করে থাকে সেটি শিক্ষার্থীটি করেছে। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে। কিন্তু অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যা করা হলো সেটি আমরা কল্পনাও করতে পারি না। প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এমন ঘটনা ঘটেছে তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা ভোরের কাগজ ছাড়া অন্যকোনো পত্রিকায় এই খবরটি এলো না। পত্রিকাগুলো তাহলে কার পক্ষে কথা বলছে? কোন কাজ করছে? মৌলবাদী শক্তির স্পর্ধা এতটা বেড়েছে, প্রশাসনও তাদের আস্কারা দিচ্ছে। এটি সত্যিই দুঃখজনক। বেছে বেছে সনাতন

ধর্মাবলম্বীদের ওপরই এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলছে। জঘন্য সাম্প্রদায়িক আচরণের মধ্যদিয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে হবে? আমি মনে করি শুধু স্বপন কুমারকে নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জুতো পড়ানো হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের গলায় জুতার মালা পড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই লজ্জিত। অপমানিত বোধ করছি। আমরা এত বিশাল পদ্মা সেতু বানাচ্ছি, বিশাল উন্নয়নের মাইলফলক ছুঁইছি। কিন্তু মানবাধিকারে সূচকে এবং মানব উন্নয়নের সূচকে যে বেদনাদায়ক অধোগতি সেটি দেখে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। কোনো সভ্য সমাজে এমনটা হতে পারে না। সরকারের উচিত, এর বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া। তা না হলে এর সুদূরপ্রসারি প্রতিক্রিয়া হবে।
এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন বলেন, এমন ঘটনা শিক্ষক সমাজের জন্য তো বটেই, গোটা জাতির জন্য অপমানের।
নড়াইলের মির্জাপুর এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হেনস্থার প্রতিবাদে গতকাল রবিবার চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুর সাত্তার এবং জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহীন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা শিশু, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক বিবৃতিতে, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা ও তাকে অধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণ, একই সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের মারপিট করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সাম্প্রদায়িক উসকানি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে তারা অধ্যক্ষকে স্বপদে বহাল করার আহ্বান জানান। যেকোনো সাম্প্রদায়িক উসকানির বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তারা।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কাউকে ঘায়েল করে কোন গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধার, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও উন্মাদনা তৈরির ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জে সংসদ সদস্য সেলিম শিক্ষক ওসমান শ্যামল কান্তি ভক্তকে সবার সামনে চড় মেরেছিলেন এবং কান ধরে উঠবস করিয়ে পুলিশে দিয়েছিলেন। ওই সংসদ সদস্য বা এর সঙ্গে যুক্তদের কোনো বিচার হয়নি। মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে বিজ্ঞান পড়ানোর অপরাধে মারা হয়েছিল, জেলে দেয়া হয়েছিল। সে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কারো বিচার হয়নি। নওগাঁয় হিজাব পরার কারণে একজন শিক্ষার্থীকে মারধরের মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমোদিনী পাল নামের একজন নারী শিক্ষককে হেনস্থা করা হয়। একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলছে। অথচ রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসন কোনো ঘটনার বিচার করছে না। আবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে শিক্ষক হয়রানি, মামলা, আটকের ঘটনা ঘটছে।
প্রসঙ্গত, ওই কলেজের ছাত্র রাহুল দেব ১৭ জুন ফেসবুকে ভারতের নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ‘প্রণাম নিও বস নূপুর শর্মা, জয় শ্রী রাম’ ক্যাপশন দেয়। ১৮ জুন সকালে তাকে কলেজে দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের সহায়তা চান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। কলেজে পুলিশ এসে রাহুলকে নিয়ে যেতে চাইলে ছাত্ররা বাধা দেয়। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ আসে। স্থানীয় লোকজনের সংখ্যাও বাড়ে। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। বিকালে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় উত্তেজিত জনতার চাপে জুতার মালা পরিয়ে রাহুল ও অধ্যক্ষকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়