স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

আগের সংবাদ

হাওর জনপদে স্বাস্থ্যসেবা ‘নেই’

পরের সংবাদ

উচ্ছ¡সিত সবাই প্রশংসায় ভাসালেন শেখ হাসিনাকে

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সেখানে উপস্থিত বিদেশি কূটনীতিকরাও প্রতিক্রিয়া এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সবাই একবাক্যে এই সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন। সাড়ে তিন হাজার আমন্ত্রিত অতিথি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে পদ্মা সেতু অবশ্যই অনেক বড় অবদান রাখবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু অবদান রাখবে।

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যেভাবে দেশ স্বাধীন হয়েছে, একইভাবে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে পদ্মা সেতু আমার কাছে ঈদের চাঁদ দেখার মতো। ছোটবেলায় ৮-১০ বছর বয়সে ঈদের চাঁদ দেখে যেভাবে লাফাতাম, আজকে যদি আমি ছোট থাকতাম তাহলে এই খুশিতে লাফাতাম। এই পদ্মা সেতু শুধু একটা সেতু নয়, শুধু পারাপার নয়, এই পদ্মা সেতু হলো আমাদের সক্ষমতা, আমাদের মর্যাদার প্রতীক।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে জাতির জনকের ইচ্ছা ছিল পদ্মা ও অন্যান্য নদীতে ব্রিজ নির্মাণ করা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ষড়যন্ত্রকারীরা তা হতে দেয়নি। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ বাংলার প্রায় তিন কোটি মানুষের আবেগ অনুভূতি জড়িয়ে আছে। এটা শুধু রড কংক্রিটের সেতু নয়। এই সেতুকে কেন্দ্র করে কল্পিত অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থ প্রত্যাহার করেছে। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় প্রত্যয়ের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলাম, এমন বর্ণিল এবং নান্দনিক আয়োজন আগে কখনো দেখিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী সত্যিই অসাধ্যকে সাধন করেছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমানে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আমার সৌভাগ্য যেদিন দেশ স্বাধীন হয়েছিল, একমাত্র বাঙালি হিসেবে আমি নিয়াজীর (মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক) সামনে গিয়েছিলাম। আর আজকে পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধনে আসতে পেরেছি এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় বাস্তবে রূপ নেয়া পদ্মা সেতু বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান বাড়াবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় এটা হয়েছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের জাদুর কাঠি। এই সেতু স্বনির্ভরতা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তির প্রতীক।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং উপঅঞ্চলের মধ্যে সংযোগ বাড়াবে। এই সেতু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। তিনি গতকাল শনিবার মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে ভারতীয় হাই কমিশনার বলেন, ঐতিহাসিক এই দিনে বাংলাদেশের ভাইবোনদের শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং শুভকামনা জানাই। আমরাও এটি দেখে খুব আনন্দিত। বাংলাদেশ সরকার নানা ‘প্রতিকূলতার’ মধ্যেও এ প্রকল্পটি ‘সফলভাবে’ সম্পন্ন করেছে। আমি এ অঞ্চলে আরো বেশি বাণিজ্য এবং ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে সহজে যোগাযোগ ও ভ্রমণের সুযোগ দেখতে চাই। দুই বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ভারত আগামীতেও পরস্পরের সঙ্গী হয়ে উন্নয়নের পথ চলবে বলে আশা প্রকাশ করেন দোরাইস্বামী।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসবে যোগ দিতে এসে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। আমরা মনে করি পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই সেতু বাংলাদেশের বিশাল অর্জন। এই সেতুর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান হবে, পণ্য অনেক দ্রুত বাজারে চলে আসবে, জীবনযাত্রার মান বাড়াবে এবং দারিদ্র্য কমাবে।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। এ নিয়ে কোনো অনুশোচনা আছে কিনা- জানতে চাইলে মার্সি মিয়াং সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আনন্দের সঙ্গে সামনের দিনগুলো দেখব, পেছনে ফিরে দেখব না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতুর নাম নিজের নামে না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো ‘প্রজ্ঞার’ পরিচয় দিয়েছেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে নিজেকে ‘সৌভাগ্যবান’ বলে মনে করছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। আজকে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উদযাপনে অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ করেছেন উনি সাহসী। উনি জাতিকে যে উপহার দিয়েছেন, আমরা তাকে মাথায় উঠিয়ে রাখব। আমরা গৌরবান্বিত বোধ করছি। প্রধানমন্ত্রী বড় কাজগুলো করেই ফেলেছেন। এখন তাকে দেশের ছোট মানুষগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও পদ্মা সেতুর উন্মোচনে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন। মাদারীপুরের শিবচরে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে আসা স্কুল শিক্ষক আবদুল মান্নান বলেন, আমাগো আর ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। যানজট, ভোগান্তি ছাড়াই অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা যাতায়াত করতে পারব। সুচিকিৎসা করাতে পারব। মাদারীপুরবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান তিনি।
শিবচর ঘাট এলাকায় সংযোগ সড়কে ভ্যানচালক রাসেল বলেন, আমরা সহজেই ঢাকায় যাতায়াত করতে পারব। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আর অপেক্ষা করতে হবে না।
রাজবাড়ী সদর থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা সংগীতশিল্পী মনজুরুল ইসলাম বলেন, অনেক মানুষের মতো আমারও আনন্দ লাগছে। এহনের পর থেকা আমাগো আর ফেরির জন্য এ ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হবে না। এর থেকে আর আনন্দ আমাদের হয় না। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তর থেকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়