দৈনিক ওঠানামার মধ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

আগের সংবাদ

জনগণের সাহসেই পদ্মা সেতু : বন্যার দুর্ভোগ ও ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার > বিএনপির নেতা কে? সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

চরফ্যাশনে শেষ ঠিকানা হারাতে বসেছে ২শ দরিদ্র পরিবার : খাস জমি প্রভাবশালীদের নামে রেকর্ড

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি : চরফ্যাসনের মাঝের চর আবাসন প্রকল্পে আশ্রিতদের ১৭ একর জমি চিহ্নিত দালালদের নামে দিয়ারা রেকর্ড করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে ওই প্রকল্পে আশ্রিত ২শ পরিবার সরকারের দেয়া ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঝুঁকিতে পড়েছে। জরিপকর্মীদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে প্রভাবশালীরা ওই জমি দিয়ারা রেকর্ড নিয়ে আবাসন প্রকল্পে আশ্রিত পরিবারগুলোকে উচ্ছেদের হুমকি দিতে শুরু করেছেন। আশ্রিত দরিদ্র পরিবারগুলো এখন নিজেদের ঠিকানা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
গত রবিবার দুপুরে আশ্রিত পরিবারের নারী-পুরুষরা উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে অবস্থান নেন। জানা যায়, ২০০৬ সালে গৃহহীন দরিদ্র পরিবারগুলোর পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় চরফ্যাসন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের মাঝের চর গ্রামের মাঝের চর আবাসন প্রকল্পে ২শ পরিবারকে আশ্রয় দেয়া হয়। আশ্রিত পরিবারগুলোকে ৮ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত কবুলিয়তসহ ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে দরিদ্র পরিবারগুলো ওই আবাসন প্রকল্পে বসবাস করে আসছে।
মাঝের চর আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা আবদুর রহিম বেপারী, জান্টু বেপারী, মো. ইসমাইল সর্দার, মো. হবি সিকদার. শফি প্যাদাসহ আশ্রিতরা জানান, ২০০৬ সালে সরকার মাঝের চর আবাসন প্রকল্পে ২শটি ঘর নির্মাণ করে ৮ শতাংশ জমির দলিলসহ ঘরগুলো ২শ পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়েছে। সেই থেকে ওই জমিতে তারা বসবাস করছেন। সম্প্রতি উপজেলাজুড়ে খাসজমির দালাল হিসেবে পরিচিত হালিমাবাদ গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে সিলভার হোসেন, চরফ্যাসন পৌরসভার মহিউদ্দিন ওরফে খতিয়ান মহিউদ্দিন, উত্তর মঙ্গল গ্রামের হালিমা খাতুন ওরফে বিডিপি হালিমা, মাঝের চর গ্রামের আব্দুল মালেক এবং চর টিটিয়ার নুরজাহানসহ বেশকিছু খাসজমির দালাল আবাসন প্রকল্পের বিভিন্ন দাগভুক্ত ১৭ একর জমি দিয়ারা রেকর্ড নিয়েছেন। দিয়ারা রেকর্ডীয় মালিক দাবিদার এই চক্র আশ্রিত পরিবারগুলোকে আবাসন ছেড়ে দিতে চাপ প্রয়োগ এবং হুমকি দেয়।
আবাসন প্রকল্পে আশ্রিত ৮০ বছরের বৃদ্ধ মন্নান ফরাজি অভিযোগ করেন, মাঝের চর গ্রামের ওই খাসজমিতে ৪০ বছর ধরে আশ্রিত আছেন তিনি। ২০০৬ সালে সরকার আবাসন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে ৮ শতাংশ জমিসহ একটি ঘর তাকে বুঝিয়ে দেয়। সেই থেকে তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ ওই ঘরেই আছেন। ওই জমি দিয়ারা রেকর্ড নিয়ে আবুল হোসেনরা ৮ শতাংশ জমি ৫০ হাজার টাকা করে দিয়ে তাদের কাছ থেকে দলিল নিতে বলছে।
দলিল না নিলে জমি থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও দিচ্ছে। একই অভিযোগ নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছেন ৮৫ বছরের বৃদ্ধ রাজা মিয়া, ৭৫ বছরের বিধবা ফাতেমা বেগম ও রুপজানের মতো আরো অনেকে। দিয়ারা রেকর্ড নিয়ে মালিকানার দাবিদার এসব খাসজমির দালালদের চাপে পড়ে আশ্রিত পরিবারগুলো সরকার প্রদত্ত বসতবাড়ির শেষ ঠিকানা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে। নিরুপায় পরিবারগুলোর বিপদ আঁচ করতে পেরে গত ১৬ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্যের শরণাপন্ন হন। সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিষয়টি খতিয়ে দেখে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দিয়েছেন। গত রবিবার দুপুরে সংসদ সদস্যের লিখিত ওই নির্দেশের কপি নিয়ে আশ্রিত পরিবারের শতাধিক নারী-পুরুষ উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে অবস্থান নেন। রেকর্ড গ্রহীতা আবুল হোসেন ওরফে সিলভার হোসেন আবাসন প্রকল্পে আশ্রিত পরিবারগুলোর অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেছেন, জমিগুলো খাসজমি হিসেবে পড়ে থাকায় আমরা রেকর্ড নিয়েছি। তাই আশ্রিত পরিবারগুলোকে বলেছি, আদালতের মাধ্যমে তোমরা রেকর্ড সংশোধন করে নাও। তা না হলে আমাদের কাছ থেকে দলিল নিয়ে যাও। দলিল নেয়ার জন্য কোনো টাকা-পয়সা দিতে হবে না। তবে চরফ্যাশনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল মতিন খান বলেছেন, জরিপকালে ভুলবশত চরফ্যাশনের অনেক খাসজমি কিছু কিছু ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়েছে। এলাকাভিত্তিক ব্যক্তি বিশেষের নামে রেকর্ড নেয়া সরকারি খাসজমির তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এসব রেকর্ড বাতিল করার জন্য ৩০ ধারায় আপত্তি দিয়ে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগে ওই ইউনিয়নে জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। এজন্য এসব রেকর্ডের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়