আরো ৩১ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি

আগের সংবাদ

জলে ভাসা সিলেট এক বিচ্ছিন্ন জনপদ : ১২২ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা > আশ্রয়ের খোঁজে অসহায় মানুষ > বন্যার্তদের উদ্ধারে নৌবাহিনী, যুক্ত হচ্ছে হেলিকপ্টার-ক্রুজ

পরের সংবাদ

বিএনপির চোখে পদ্মা সেতু : সরকারের গলাবাজির অস্ত্র বলছেন নেতারা

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির অবস্থান সব সময় ছিল সমালোচনামুখর। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার পর বিএনপি সোচ্চার ছিল দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে, যা এখনো চলমান। দলটি বলছে, সরকার এই সেতু করতে পারবে না, করলেও সেটা জোড়াতালির সেতু হবে। এই সেতুতে না উঠতে নেতাকর্মীদের সাবধানও করেছিলেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এমন মুহূর্তে সেতু নিয়ে কী ভাবছে বিএনপি নেতারা- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সাধারণ মানুষ।
২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক রিস্ক আছে। এ নিয়ে সে সময় তুমুল সমালোচনার জবাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তার (খালেদার) বক্তব্যটা ছিল এমন- ‘একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের ওপরে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে সেটা টিকবে না। তিনি ভুল বলেননি। বরং তিনি দেশপ্রেমিকের কাজ করেছেন। তোমরা এখনো এলার্ট হও, চেঞ্জ দ্য ডিজাইন এবং সেটা সঠিকভাবে নির্মাণ হতে হবে।
খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের প্রায় ৫ বছর পর দৃশ্যমান হয়েছে পদ্মা সেতু। আগামী ২৫ জুন সেতুটি উদ্বোধনের পর ২৬ জুন থেকে সেতু দিয়ে চলবে যানবাহন। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রায় ১৪ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের ‘গলাবাজির’ সবচেয়ে বড় অস্ত্র এখন পদ্মা সেতু। এই পদ্মা সেতু থেকে সরকার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে সম্পদ করছে। তাই পদ্মা সেতু নিয়ে মোটেও আগ্রহ নেই বিএনপির। জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পদ্মা সেতু জনগণের টাকায় হয়েছে। কারো পকেটের টাকায় হয়নি। তাই পদ্মা সেতু নিয়ে কারো একক কৃতিত্বের দাবি হাস্যকর।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এত ব্যয়বহুল সেতু নেই, ৩০

হাজার কোটি টাকা কোথায় খরচ হলো জানতে চাই। পদ্মা সেতুর প্রথম ভিজিবিলিটি রিপোর্ট করে বিএনপি ১৯৯৫/১৯৯৪ সালে। সেই সময় ভিজিবিলিটি রিপোর্ট অনুসারে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। আর এখন সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকার হিসাব চাই।
পদ্মা সেতুকে কীভাবে দেখছে বিএনপি- এ প্রসঙ্গে আলাপকালে দলটির সিনিয়র নেতারা জানান, এই সেতু নিয়ে সরকারের সবচেয়ে বড় গর্বের জায়গা হলো নিজের টাকায় তৈরি হচ্ছে পদ্মা সেতু। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, ঋণের টাকায় কোনো কিছু তৈরি করা মানে কি নিজের টাকায় তৈরি করা নয়? ঋণের টাকা তো দেশকেই পরিশোধ করতে হয় এবং একটা দেশকে ঋণ দেয়া হয় সেই ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা

দেখেই।
সেই হিসাব মতে, পদ্মা সেতুর মতো এত বড় একটি প্রকল্পের জন্য দেশের পক্ষে অনুকূল ও লাভজনক শর্তে ঋণ না পাওয়া সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা। কিংবা হতে পারে সরকার সেটার খোঁজে ইচ্ছা করেই আর যায়নি। সম্পূর্ণ নিজের অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করার এক বড় ঝুঁকি সরকার নিয়েছে ভেবেচিন্তেই। বিশ্বব্যাংক বা কোনো স্বনামধন্য, বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান যদি এ প্রকল্পে যুক্ত থাকত, তাহলে সেতুর ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহি থাকতো। ইচ্ছেমতো দুর্নীতি করা তখন আর সম্ভব হতো না।
বিএনপি নেতাদের দাবি, ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় যেদিন যমুনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে, সেদিন তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকেছিল। একটি সেতুর নির্মাণ ব্যয়, দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো, প্রতিটি ধাপে মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়ে বিরোধী দলের প্রশ্ন তোলা এক বিষয় আর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন হরতাল ডাকা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। একটি করা হয় সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আর অন্যটি ঈর্ষা, বিদ্বেষ আর বুকের জ¦ালার এক অপূর্ব নিদর্শন। তবে ঈর্ষা ও বিদ্বেষের এই নজিরের পরেও ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই ফিতা কেটে সেই সেতু উদ্বোধন করতে আওয়ামী লীগ এতটুকু লজ্জিত হয়নি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশেষভাবে বলার কিছু নেই। এই সেতু নির্মাণে যে খরচ হয়েছে তা দিয়ে আরো চারটি সেতু করা যেত। এ টাকা দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে আরো অনেক কিছু করা যেত।
পদ্মা সেতু নিয়ে দেশে এখন সার্কাস চলছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, অনেক সার্কাস দেখেছি, শুনেছি। কিন্তু দেশে এখন চলছে পদ্মা সেতু সার্কাস। সরকারের কত কথা; অথচ এ পদ্মা নদীর উপরে একটা সেতু অনেক আগেই করেছে বিএনপি। তার নাম লালন শাহ সেতু। তখন তো এত হইচই হয়নি। গোলক ধাঁধা নিয়ে দেশের মানুষ পদ্মা সেতু দেখতে চায় না।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সরকারের আমন্ত্রণের গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি থাকুক, এটা সরকারই চায় না। বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির অংশ নেয়ার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পায়নি বিএনপি।
খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড বলেন, আমাদের চেয়ারপারসনকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্যের পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দলটির বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুস রহমান বলেন, বিষয়টি জুতা মেরে গরু দানের মতোই। নির্বাহী কমিটির সদস্য বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, পদ্মা সেতুর মতো জাতীয় ইস্যুতে অবশ্যই বিএনপি থাকতে চায়। কিন্তু সরকার সেই পরিবেশ নষ্ট করেছে।
সেতু নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা নানা সমালোচনা করলেও দলটির তৃণমূল নেতারা এটিকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে দেখছে। এজন্য সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। দল এবং মতের ঊর্ধ্বে থেকে অনেকেই সেতু নিয়ে নিজেদের উচ্ছ¡াসও প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গত ১৮ মে পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি লেখেন, এক মাস ৭ দিন পর হারিয়ে যাবে আমাদের চিরচেনা পথের অনেক কিছু। স্মৃতিতে অ¤øান হয়ে থাকবে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মা নদী পারাপারের মাওয়া-কাঁঠালবাড়ী ঘাট। উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশার পদ্মা ব্রিজ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়