সোহেল চৌধুরী হত্যা : শেষ দিনেও দাখিল হয়নি কেস ডকেট

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বন্যায় দিশাহারা মানুষ

পরের সংবাদ

কুষ্টিয়ার পান ও কলাচাষিদের ভাগ্য বদলে দেবে পদ্মা সেতু

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া থেকে : পদ্মা সেতু বদলে দেবে কুষ্টিয়ার পান ও কলাচাষিদের ভাগ্য। সহজলভ্য পরিবহন এবং সাশ্রয়ে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বড় হাট, বাজারে কুষ্টিয়ার পান ও কলা বিক্রি করে বছরে কয়েক লাখ টাকা গোনার স্বপ্ন দেখছেন এখানকার প্রান্তিক চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার উজান গ্রাম ইউনিয়নের বৃত্তিপাড়া কলার হাটে কৃষক শেখ আবু তাহের মিয়া প্রতি কাদি কলা বিক্রি করছিলেন ৭০০ টাকা দরে। আরো বেশি হতো যদি নিজে ঢাকায় নিয়ে বেচতে পারতেন।
কলাচাষি আনারুল ইসলাম জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে কলার আবাদ করেন। প্রতি বছরই তিনি ২০-২২ বিঘা জমিতে চাপা কলার আবাদ করেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থায় দূরত্বের কারণে তার চাহিদা অনুযায়ী লাভ হয় না। কুষ্টিয়া থেকে সহজে কলা নিয়ে পরিবহনে যাওয়ার মতো তার সাধ্য নেই। দূরত্ব অনেক, ঝুঁকিও রয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে তিনিসহ কুষ্টিয়ার কলাচাষিরা আগের দিন কলা কেটে পরদিন খুব ভোর নিজেরাই ট্রাক ঠিক করে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় কলা নিয়ে যেতে পারবেন এবং লাভও পাবেন অনেক বেশি। ঠিক এমনিভাবে সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছেন কুষ্টিয়ার পানচাষিরা। ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ঠাকুর দৌলতপুর এলাকার পানচাষি আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই পান চাষ করি। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কুষ্টিয়ার মিরপুরে হাটে বসে পান পাইকারি দরে বিক্রি করতে হয়। এতে খুব একটা লাভ হয় না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে ঢাকা, চট্টগ্রামে পান নিয়ে যেতে পারলে অনেক বেশি লাভ হতো। কিন্তু রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া, যমুনা সেতু পার হয়ে পান নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৌঁছে তা বিক্রি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তিনি এ বছর দুই বিঘা জমিতে বাংলাপান জাতের পানের চাষ করেছেন। দুই বিঘা জমিতে তার প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ হয়েছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকলে এ লাভের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হতো। কুষ্টিয়া কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক বিষ্ণু পদ সাহা বলেন, মধুপুর কলার হাট থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন প্রচুর কলা যায়। তবে ফড়িয়াদের কারণে তারা ভালো দাম পান না। যোগাযোগের কারণে নিজেরা রাজধানীতে কলা নিয়ে যেতে পারেন না। ফলে হাটে বসেই কলা পাইকারিতে বিক্রি করতে হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে কুষ্টিয়ার চাষিরা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় কলা নিয়ে যেতে পারবেন এবং লাভবানও হবেন। কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলায় ২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়েছিল ভেড়ামারা উপজেলায়।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ ভোরের কাগজকে বলেন, অর্থকরী ফসলের মধ্যে পান একটি লাভজনক ফসল। কুষ্টিয়ার পান সারাদেশের মধ্যে বিখ্যাত ছিল। তবে গত কয়েক বছর আগে পানের বিভিন্ন রোগের কারণে পানচাষিদের লোকসান হয়। অপরদিকে পরিবহন খাতে ব্যয় বেশি হওয়ায় তারা ভালো লাভ পায় না।
পদ্মা সেতু চালু হলে এখান থেকে সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রামে চাষি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ে, কম খরচে পান নিয়ে যেতে পারবে। এতে কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ী সবাই লাভবান হবেন। কুষ্টিয়ার কৃষি অর্থনীতিতে এর একটা সুফল পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়