আবহাওয়ার পূর্বাভাস : অপরিবর্তিত থাকতে পারে দিন-রাতের তাপমাত্রা

আগের সংবাদ

কুমিল্লায় ভালো ভোটের পর ফলাফল নিয়ে উত্তেজনা : রিফাতকে জয়ী ঘোষণা > অজ্ঞাত ফোনের পর হামলা > মনগড়া ফল : অভিযোগ সাক্কুর

পরের সংবাদ

বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত : পানিবন্দি রৌমারীর ৫০ হাজার পরিবার

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় ভারতের আসাম রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যায় দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজলার জিঞ্জিরাম, কালোর নদী ও ধরণী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে ৪০ গ্রামের ৫০ হাজার পরিবার। এদিকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এতে ডুবে যাওয়া রাস্তাঘাট জেগে উঠতে শুরু করেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুড়িগ্রাম : কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি রয়েছেন উপজেলার রৌমারী সদর, শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা ও যাদুরচর ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ।
বন্যায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ভেলায় করে চলাচল করছেন এসব এলাকার মানুষ। অনেকেই কলাগাছের অভাবে প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে ভেলা বানিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছেন। বন্যায় নিমজ্জিত রয়েছে ৯৩৫ হেক্টর জমির ধান, ৯০৩ হেক্টর জমির পাট, ৭৮ হেক্টর জমির তিল ও ১৪৭ হেক্টর জমির শাকসবজির ক্ষেত।
কোমরভাঙ্গী নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক নুর হোসেন বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। টানা বৃষ্টিতে সেই ধান তলিয়ে যায়। পরে পরিবারের সবাই মিলে সেই ধান পানির নিচ থেকে কেটে এনেছি। ভেবেছিলাম পর্যাপ্ত ধান না পেলেও অন্তত বাড়ির সাতটি গরুর খাদ্যের জন্য খড়ের ব্যবস্থা হবে। তবে সেই খড় শুকানোর আগেই বন্যায় তলিয়ে গেল। এখন গরুকে কী খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখব?
যাদুরচর ইউনিয়নের কোমরভাঙ্গী নয়াপাড়া এলাকার শহর আলী বলেন, গরু বিক্রির টাকায় তিন একর জমিতে পাটের চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম পাট বিক্রি করে লাভের টাকায় পুনরায় গরু কিনব। কিন্তু গরুও শেষ, পাটও বন্যায় তলিয়ে গেছে। যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, খেওয়ার চর, আলগার চরসহ বেশ কিছু নিচু এলাকায় টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। চারণ ভূমিতে শুকাতে দেয়া খড় তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি অনেকে কাজকর্ম করতে না পারায় খাদ্য সংকটেও ভুগছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা জোটেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউয়ুম চৌধুরী বলেন, বন্যায় মোট দুই হাজার ৬৩ হেক্টর জমির ফসল আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে ৯৩৫ হেক্টর জমির আউশ, ৯০৩ হেক্টর জমির পাট, ৭৮ হেক্টর জমির তিল ও ১৪৭ হেক্টর জমির সবজি রয়েছে। পানি স্থায়ী হলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রয়োজন তা আরো বাড়ানো হবে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বন্যার্তদের জন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। শুকনো খাবারের প্যাকেট প্রস্তুত করা হচ্ছে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এতে ডুবে যাওয়া রাস্তাঘাট জেগে উঠতে শুরু করেছে। গতকাল দুপুরে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার বিকাল থেকে সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সুনামগঞ্জ পৌর শহরে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া বিভিন্ন রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমেছে। যার ফলে জেলা শহরের সঙ্গে তাহিরপুরের যোগাযোগ সচল হয়েছে। তবে প্লাবিত হওয়া নিম্নাঞ্চল থেকে পানি কমতে কিছুটা সময় লাগবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, সোমবার বিকাল থেকে সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আবারো পানি বাড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়