মির্জা ফখরুল : খালেদার কিছু হলে দায় নিতে হবে সরকারকেই

আগের সংবাদ

কুমিল্লায় ইসির ‘এসিড টেস্ট’

পরের সংবাদ

‘বাজেট বৃহৎ ব্যবসায়ীবান্ধব’ > অর্থ পাচারকারীদের সুযোগ দেয়া অনৈতিক : সানেম

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটি সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রথম বিষয় তথা পাচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটি গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেল- সানেম। গবেষণা সংস্থাটি বলছে, চুরি ঠেকানোর প্রয়োজন ছিল কিন্তু চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। কীভাবে এটি বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা নেই।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বাজেট পরবর্তী সময়ে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা প্রসঙ্গে যত আলোচনা হচ্ছে, বাজেটের মূল কাঠামো নিয়ে ঠিক ততটা হচ্ছে না। এটা সব দিক থেকেই অনৈতিক। সানেম এ নীতি সমর্থন করে না। তিনি বলেন, টাকা পাচার হলো কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে সেলিম রায়হান বলেন, এ বাজেট বৃহৎ ব্যবসায়ী বান্ধব। কর্পোরেট করে ছাড় দেয়া হয়েছে, যা বড় বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু গত দুই বছরে দেশের ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছে, তারা যেমন পুনরুদ্ধারে খুব একটা সহায়তা পায়নি, তেমনি এই কর ছাড় তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এছাড়া কর্মমুখী মানুষের জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনায় সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেল- সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বাজেটের পর্যালোচনা পেশ করেন সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সায়েমা হক। অনুষ্ঠানে সানেমের গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, তথ্যের ঘাটতি সব সময়ই একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা গেছে। বিশেষ করে কোভিডের সময় তা আরো বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। তখন দেশের বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলো দারিদ্র্য নিয়ে বেশ কয়েকটি জরিপ করেছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেরকম জরিপ বা গবেষণা করা হয়নি। আবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর জরিপ নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সেলিম রায়হানের আহ্বান, সরকার বিশেষ করে বিআইডিএস দেশের অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও

অর্থনীতিবিদদের নিয়ে একটি সম্মেলন আহ্বান করতে পারে। সেখানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের জরিপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে। তারা সেরকম অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অত্যন্ত উৎসাহী বলে জানান সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, করমুক্ত আয়সীমা অন্তত সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা উচিত ছিল। এটি করার সুযোগ এখনো রয়েছে। এছাড়া রেমিট্যান্সে প্রণোদনা প্রত্যাহার করা দরকার। সে ক্ষেত্রে প্রথম বছরে পুরোপুরি প্রত্যাহার না করে ১ শতাংশে নামিয়ে আনা যেতে পারে। ডক্টর সেলিম রায়হান বলেন, সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি যে নীতি রয়েছে এ বাজেট সেই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রাজস্ব খাতে সংস্কার আনা দরকার। এক্ষেত্রে আইনগত এবং খাত নির্ধারণ উভয় ক্ষেত্রে ত্রæটি রয়েছে। গার্মেন্টস খাতে ভর্তুকির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি নিয়ে নতুন করে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কারণ আর কতকাল এ খাতে ভর্তুকি দেয়া হবে, স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।
মূল্যস্ফীতি তথা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় জানিয়ে সেলিম রায়হান বলেন, সরকারের যে ছোট ছোট পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ ছিল তারা সেটি নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভ্যাট, ট্যাক্স কমানোসহ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ বিষয়টিতে দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি বলেন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ কাজে লাগানোর এখনই সময়। এ সুযোগ খুব বেশিদিন থাকবে না। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। ঘাটতি বাজেটের ব্যাংক নির্ভরতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, অতিমাত্রায় ব্যাংক নির্ভর না হয়ে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি লোন আনার বিষয়ে জোর দিতে হবে। পঞ্চবার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাজেটের ভূমিকা রয়েছে। ধাপে ধাপে সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে ধরনের বাজেট প্রণয়ন করা দরকার প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন হয়নি। সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের মতো খাদ্য ঘাটতি সম্পন্ন দেশগুলোর সংকটকালীন মোকাবিলার জন্য খাদ্য মজুত করা জরুরি। কিন্তু বাজেটে এ বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
গবেষণাপত্রে ড. সায়েমা হক বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাস্তবতায় যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার ছিল, সেখানে দেখা গেল, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রকৃত বরাদ্দ কমেছে। এটি সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হবে। কিন্তু এ বছর পেনশন, বৃত্তি ও সুদ বাদে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রকৃত বরাদ্দ এক শতাংশের মতো। এমনকি গত বছরের চেয়েও এবার বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
অধ্যাপক সায়েমা হক বলেন, এখনকার বাস্তবতায় প্রয়োজন ছিল মাথাপিছু সামাজিক ভাতার বরাদ্দ বাড়ানো। একই সঙ্গে আমরা চেয়েছিলাম, ওপেন মার্কেট সেল বা ওএমএসে বরাদ্দ বাড়ানো হোক। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, এবার উল্টো ওএমএসে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। তার পরামর্শ, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ওএমএসে বরাদ্দ যেন কোনোভাবেই কমানো না হয়; কারণ এটা অত্যন্ত জরুরি।
বৈষম্য প্রসঙ্গে সায়েমা হক বলেন, ২০১৬ সালের পর সরকারি পরিসংখ্যান নেই। সেই ২০১৬ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের মোট সম্পদের ৩৮ শতাংশ ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর হাতে পুঞ্জীভূত। আর কোভিডকালে বৈষম্য আরো বেড়েছে বলে জানা যায়, যদিও এ বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যান নেই। এ বাস্তবতায় বৈষম্য কমাতে তিনি কর কাঠামো সংস্কারের পরামর্শ দেন। অর্থাৎ যার যত বেশি সম্পদ, তার ওপর তত বেশি হারে করারোপ করা, ইংরেজিতে যাকে বলে প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন।
শিক্ষা খাতে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার বিষয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণ করা দরকার ছিল। এতে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়া যেত। বাজেটে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে ছোট ছোট প্রোগ্রামের মাধ্যমে তাদের আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়