রাজধানীর বছিলায় জুতার কারখানায় আগুন

আগের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : দেড় বিলিয়ন ডলার সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে

পরের সংবাদ

বর্ণার প্রত্যয় : অগ্নিযোদ্ধা স্বামী জীবনযুদ্ধে জয়ী হবেই

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বাইরে বসে কাঁদছিলেন বর্ণা আক্তার নামে এক তরুণী। পাশে থাকা তার বাবা, বারবার সান্ত¡না দিচ্ছেন কান্না থামাতে। কিছুতেই শুনছেন না বর্ণা। উল্টো বাবাকে বলছেন, ‘ও (স্বামী) বলেছিল আগুন নিভিয়ে এসে ফোন করবে। আর তো ফোন দিল না বাবা? এখন তো ভালো করে কথাও বলতে পারছে না…।’ এটুকু বলেই আবারো কান্না শুরু করেন তিনি। আইসিইউতে থাকা অগ্নিযোদ্ধা রবিন মিয়ার স্ত্রী বর্ণা। শরীরের ৬০ শতাংশ দগ্ধ হলেও স্ত্রীর বিশ্বাস পুরো সুস্থ হয়ে উঠবেন রবিন। এজন্য নার্সদের পাশাপাশি নিজেই শুরু করেছেন সেবা-শুশ্রƒষা।
বর্ণার পাশেই অশ্রæসিক্ত চোখে বসে ছিলেন আরেক অগ্নিযোদ্ধা গাউছুল আজমের চাচা আকবর আলী। কাছে যেতেই বলা শুরু করেন, ‘একমাত্র ভাইপো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। লাইফ সাপোর্টে আছে। আল্লাহ যেন ওর জীবনডা ভিক্ষা দেয়।’ বর্ণা আক্তার ও আকবর আলীর মতো অশ্রæসিক্ত চোখে অপেক্ষায় রয়েছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের স্বজনরা। কেউ কেউ আহাজারি করছেন আবার কেউ অন্য স্বজনদের ফোন করে দোয়া চাইছেন। গতকাল মঙ্গলবার সরজমিন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
রবিন মিয়ার স্ত্রী বর্ণা আক্তার কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ভোরের কাগজকে বলেন, সাড়ে ৩ বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে যোগদান করেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া এলাকার বাসিন্দা রবিন। ১ বছর ৪ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। শনিবার রাতে ডিপোতে আগুন নির্বাপণে যাওয়ার আগেও তার সঙ্গে কথা হয়। রবিন বলেছিল, আগুন নিভিয়ে এসে ফোন করবে। সেই ফোন আর পেলাম না। এখন ওর কত না যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে… এটুকু বলেই কিছুটা ফুঁপিয়ে ওঠেন বর্ণা। তারপর আবার বলেন, যখনই জ্ঞান থাকছে, আমি পাশেই থাকি। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আশা করি ও আবারো সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।
এদিকে সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডিতে দগ্ধ অন্যদের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। তবে এখনো সবাই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। খালেদুর রহমান (৬০) নামে একজনের করোনা পজেটিভ হওয়ায় তাকে করোনা ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, এখন পর্যন্ত ১৯ জন দগ্ধ রোগী এখানে এসেছেন। এখন ১৬ জন ভর্তি আছেন। যে ৪ জন আইসিইউতে ছিল তাদের মধ্যে ফরমানুল ইসলামকে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। তাদের কেউ এখনো শঙ্কামুক্ত নন। তারপরও চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৬২ জন, সিএমএইচে ১৪ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ১২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয়েছে। ঢাকা থেকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ চট্টগ্রামে গিয়েছেন। সেখানে কিছু রোগী বাড়িতে চলে যাওয়ার মতো। চোখে সমস্যা রয়েছে এমন ৬ জনকে গতকাল সেখান থেকে ঢাকায় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়েছে।
খালেদুরের মেয়ের জামাই মিনহাজুর রহমান জানান, বিএম ডিপোতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতেন খালেদুর। পরিবার নিয়ে থাকেন চট্টগ্রামের মোজাফ্ফর নগর। তার শরীরের ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। করোনা শনাক্ত হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলের পুরনো বার্ন ইউনিটে (করোনা ইউনিট) স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল সকালে ইনস্টিটিউটে দগ্ধদের দেখতে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, যারা আহত হয়েছে তাদের সুস্থতা কামনা করছি। যাদের গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর হতাহতদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা যেন দায়িত্বে অবহেলা করে কারোর কাঁধে দোষ চাপাতে চেষ্টা না করি। আর এটি নাশকতা কিনা সেটিও তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করা হোক।
তিনি আরো বলেন, রোগীরা চিকিৎসার ব্যাপারে সন্তুষ্ট। ফায়ার ফাইটাররা যে আন্তরিকতার সঙ্গে ফাইট করে গেছে তা প্রশংসনীয়। কন্টেইনারে যে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রয়েছে তা পানির সংস্পর্শে এলে আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে। এটি ফায়ার ফাইটারদের আগেই জানিয়ে দেয়া উচিত ছিল। এতে তারা আরো প্রটেকশন নিয়ে কাজ করত। এখানেও তারা দায়িত্বে গাফিলতি করেছে। এমন মানবিক বিপর্যয় কাম্য নয়। ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে সেজন্য এখনই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়