রাজধানীর বছিলায় জুতার কারখানায় আগুন

আগের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : দেড় বিলিয়ন ডলার সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে

পরের সংবাদ

কালাদরাপ ভূমি অফিস যেন ঘুষের স্বর্গরাজ্য : অবরোধ করেও টাকা ফেরত পাননি সেবাপ্রার্থীরা

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : নোয়াখালী সদর উপজেলার ৯ নম্বর কালাদরাপ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা ফিরোজ আলম টাকা (ঘুষ) ছাড়া কোনো কাজই করতেন না। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. মাসুদ আহম্মদ ও ফিরোজ আলমের সমন্বয়ে কালাদরাপ ভূমি অফিস ঘুষবাণিজ্যে স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। এ
দিকে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেও এখনো ফেরত দেয়া হয়নি। ফলে প্রতিনিয়তই স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদে জটলা বাধছেন ভুক্তভোগীরা।
কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত উল্যাহ সেলিম জানান, গত ৩১ মে দুপুরে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বদলির খবর পেয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগীসহ সহ¯্রাধিক মানুষ তার কার্যালয় অবরুদ্ধ করে ঘুষের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তাকে পিটুনি দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সুধারাম মডেল থানার এসআই মনির হোসেনের সহযোগিতায় পাওনাদারের তালিকা করে তহসিলদারের কাছ থেকে পরের দিন ঘুষের টাকা ফেরত দেবে মর্মে মুচলেকা নিয়ে তাকে পুলিশ পাহারায় রাত সাড়ে ১২টায় বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। একই সময় ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা ফিরোজ আলমের কাছেও ঘুষের টাকা পাওনা রয়েছেন বলে উপস্থিত অর্ধশতাধিক মানুষ দাবি করেন। পরে তাদেরও তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
চেয়ারম্যান সেলিম জানান, তহশিলদার মাসুদ আহম্মদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ভুক্তভোগীরা উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। ব্যবস্থা নিতে ফিরোজ আলমের বিরুদ্ধেও লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে।
কালাদরাপ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভুক্তভোগী মফিজ উল্যাহ বলেন, আমাদের ভূমি অফিসে ঘুষের টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না তহশিলদার মাসুদ আহম্মদ ও সহকারী তহশিলদার ফিরোজ আলম।
আমি দেড় বছর আগে সহকারী তহশিলদার ফিরোজ আলমের কাছে একটি জমাখারিজ ও একটি নামজারি খতিয়ানের জন্য গেলে আমার কাছ থেকে তিনি ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে অনেক কষ্টে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ফাইল জমা দিই। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার কাজ হয়নি। ঘুষ দিয়েও কাজ আদায় করতে পারিনি।
ভুক্তভোগী শাহ আলম, আবু তাহের, মাহালাম মাঝি, আনিছ মাঝি, আবুল কালাম জানান, এখানে তহশিলদার মো. মাসুদ আহম্মদ ও সহকারী তহশিলদার ফিরোজ আলমের সমন্বয়ে ঘুষ ছাড়া ভূমি সেবা পাওয়াটা ছিল দুষ্কর। কোনো সেবাগ্রহীতা ভূমি অফিসে গেলে প্রথমে দর কষাকষি করতেন সহকারী তহশিলদার ফিরোজ আলম। পরে তা তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে টাকা লেনদেনের পর ফাইল জমা নিতেন। জমা খারিজ, নামজারি খতিয়ান, খাজনা দাখিলা ও সরকারি জমি বন্দোবস্তসহ ভূমি সংক্রান্ত সব কাজেই মোটা অঙ্কের ঘুষের লেনদেন করতেন মাসুদ ও ফিরোজ। এক কথায় এখানে ঘুষ গ্রহণ যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে।
৩১ মে রাতে কালাদরাপ ইউপি চেয়ারম্যান এবং সুধারাম থানার এসআই মনির হোসেনের কাছে ভুক্তভোগীদের থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করে দেয়া মুচলেকায় তহশিলদার মাসুদ আহম্মদ লিখেন, আমি জনসাধারণের কাজ করব বলে নেয়া টাকা কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় ফেরত দিতে বাধ্য থাকিব ও সত্য বলে স্বীকার করিলাম।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাফিজুল হক বলেন, তাদের দুজনকেই বদলি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আর কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
গত ১ জুন বিকালে তিনি বলেছিলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অভিযুক্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে লিখিত অভিযোগ দিতে। তিনি অভিযোগ দিলে মাসুদ আহম্মদকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়