ঐক্য পরিষদের বিবৃতি : ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দে ধর্মীয় বৈষম্য অবসান দাবি

আগের সংবাদ

নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা : সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি

পরের সংবাদ

দাম নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের বাজারে কিছুদিন ধরেই চালের দাম চড়া। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। অভিযোগ আছে, মিলাররা ধান-চাল মজুত করে রাখছেন। একইভাবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও মেমোরেন্ডাম এসোসিয়েশনের নীতি অনুমোদনের বাইরে গিয়ে ধান-চালের ব্যবসায় নেমেছে। তারা প্যাকেটজাত করে সেগুলো বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে চালের ক্রয়ক্ষমতা ভোক্তার সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চালের বাজারে অভিযান শুরু করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। রাজধানীসহ সারাদেশেই বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা মার্কেটে অভিযান চালাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এসব অভিযানে চাল ব্যবসার লাইসেন্স আছে কিনা এবং অনুমোদনের বেশি মজুত করা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফুড গ্রেইন লাইসেন্স যাচাইয়ের পাশাপাশি খাদ্যশস্যের ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদও যাচাই করে দেখছেন অভিযান পরিচালনাকারীরা। একই সঙ্গে মিলগেটে কী মূল্যে চাল বিক্রি হচ্ছে, তাও দেখা হচ্ছে।
এ অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি জানান, এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্রুতই পাঠানো হবে এবং এরপর নির্ধারণ করা হবে পরবর্তী করণীয়। গতকাল সোমবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রী ।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। এছাড়াও বৈঠকে এনবিআরের চেয়ারম্যান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব অংশ নেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমাদের মিটিংয়ের বলা হয়েছে, আমরা যে বাজার মনিটরিং করছি, তাতে মূল্য নি¤œমুখী। তারপরও স্থিতিশীল বা আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে, ভোক্তাদের যাতে কষ্ট না হয় এবং কৃষকেরও যেন অস্বাভাবিকভাবে ধানের দাম কমে না যায় সেটাকে ব্যালেন্স করতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এক সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এটা সময় লাগতে পারে সপ্তাহখানেক বা যেভাবে ফাইল গড়াবে। আমরা তো আমাদের দিক থেকে তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করব। তবে এটা হবে সীমিত সময়ের জন্য এবং সীমিত পরিমাণে, যাতে আগামী মৌসুমে কৃষকের ক্ষতি না হয় সেটা বিবেচনা করে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, যেহেতু আমাদের প্রচুর বেসরকারিভাবে গম আমদানি হতো, সেটা খাদ্যে একটি সাপোর্ট দিত। এটা না আসায় মানুষ এখন চালের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। আমাদের উৎপাদন ঠিক আছে, কিন্তু চালের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ার ফলে মজুতদারদের পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীরাও একটু সুযোগ নিচ্ছে। সার্বিকভাবে নজরদারি ও অভিযান চলতে থাকুক, পাশাপাশি আমরা বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করে বাজারে প্রবাহ বৃদ্ধি করলে বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে। এটাই সবার অভিমত এবং সবাই এই সিদ্ধান্তে সর্বসম্মতি জানিয়েছে। আমরা শিগগিরই চাল আমদানি করার বিষয়টি এবং এই মিটিংয়ের রেজুলেশন নিয়ে এখনই সামারি রেডি করব। এরপর এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব, তিনি এনবিআরের কাছে পাঠাবেন। আমরা শুল্কমুক্ত করার প্রস্তাব দেব, তারপর তারা যেভাবে করেন, করবেন। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হয়ে জিও জারি হবে।
এদিকে খোলা বাজার থেকে কিনে প্যাকেট করে বেশি দামে চাল বিক্রি করা ছয় শিল্প গ্রুপের বিষয়ে নেয়া আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। ১ জুন সাংবাদিকদের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, খোলা বাজার থেকে চাল কিনে তা প্যাকেট করে বিক্রি করা যাবে না। ওই সময় দেশের বাজারে চালের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য ছয়টি শিল্প গ্রুপ স্কয়ার, প্রাণ, সিটি, আকিজ, বসুন্ধরা ও এসিআইকে দায়ী করেন মন্ত্রী। এই ছয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চিন্তা করছি যে এই সার্কুলার জারি করা যায় কিনা, যারা প্যাকেট করে চাল বিক্রি করবেন, তারা দেশের বাজার থেকে কিনতে পারবেন না। তারা ৬৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আমদানি করে প্যাকেট করবেন। এটা আলোচনা চলছে। তবে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্যাকেটজাত চাল বিক্রিতে কোনো সমস্যা নেই।
বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যসচিব নাজমানারা খানুম সাংবাদিকদের বলেন, ছয় প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ যারা প্যাকেট করে চাল বিক্রি করছে তাদের বিষয়টি নিয়েও মিটিংয়ে কথা হয়েছিল। বাজারে যে চাল ৫০-৬০ টাকা, প্যাকেটে সেটা ৭০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। আমরা কিনছিও সেটা। এ কারণে আমাদের একটি চিন্তা ছিল যে তাহলে এই প্যাকেটজাত চাল যদি কন্ট্রোল করতে পারি সাধারণ ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে। কিন্তু আসলে আমাদের যেটা আলোচনা হয়েছে, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, অন্যরাও বলেছেন প্যাকেট করে বিক্রি করা যাবে।
খাদ্যসচিব বলেন, বাজারে নানা প্রকার জিনিস আছে যে বেশি দামে কিনতে পারে, সে খাবে। কিন্তু সাধারণ ভোক্তাদের জন্য যাতে একটি নি¤œদর রাখতে পারি, সে কারণে আমরা প্যাকেট বন্ধ করব না কিন্তু যেটা করছি প্যাকেট করেন আর যা-ই করেন, আমাদের যে সার্কুলার আছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ রাখতে পারবেন না। তিনি বলেন, ২০১১ সালের আদেশ আছে, যেটা ২০২০ সালে আমরা কারেকশন (সংশোধন) করে দিয়েছি যে, মিলাররা কতটুকু চাল রাখতে পারবে বা ১১ সালের আদেশ আছে আড়তদার কতটুকু মজুত রাখতে পারবে। এক টনের অতিরিক্ত মজুত রেখে ব্যবসা করতে চাইলে অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়