ঐক্য পরিষদের বিবৃতি : ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দে ধর্মীয় বৈষম্য অবসান দাবি

আগের সংবাদ

নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা : সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি

পরের সংবাদ

আইএলও সম্মেলন চলাকালে বিক্ষোভের নেপথ্যে কারা? ফ্যামিলি কার্ড পাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্মেলন চলাকালে ঢাকার মিরপুরে চার দিন ধরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের নেপথ্যে কারো ইন্ধন বা উসকানি রয়েছে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর করছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। রাজধানীর শ্রম ভবনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আয়োজনে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী ত্রিপক্ষীয় সভায় উপস্থিত শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা চলমান আন্দোলন নিয়ে অসন্তোষ জানান। রাস্তায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ভাঙচুরের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড চালুর উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া আইএলও সম্মেলন শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ অন্যরা দেশে ফিরলে মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে।
সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, শ্রমিকদের মজুরিসংক্রান্ত বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত, সময়মতো সরকার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অগ্রসর না হলে কোনো সফলতা আসবে না।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মজুরি বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক। কিন্তু পোশাক শ্রমিকদের এবার রাস্তায় নামার পেছনে স্থানীয় রাজনীতি থাকতে পারে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগে এ ধরনের অসন্তোষ ভিন্ন ইঙ্গিত বহন করে। গতকাল সোমবার শ্রম ভবনে বৈঠক চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের সঙ্গে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড চালু করার কথা জানিয়েছেন। পাঁচ বছর পর মজুরি পুনর্নির্ধারণ হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মজুরি নির্ধারণ হয়েছিল। ২০২৩ সালে তা পুনর্নির্ধারণ করার কথা। শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল আইএলও সম্মেলন থেকে ১৭ জুন দেশে ফেরার পর মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হেডকোয়ার্টারের আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন চলছে। গত ২৭ মে শুরু হওয়া সম্মেলন চলবে আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত। বিশ্বের ৯৮টি দেশের প্রতিনিধিদল সেখানে অংশ নিয়েছেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএর সহসভাপতি মিরান আলী, সাবেক পরিচালক এএনএম সাইফুদ্দিন, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের

সভাপতি আরদাশীর কবির, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামসুন নাহার, শ্রমসচিব এহছানে এলাহীসহ ৪৩ জন প্রতিনিধি। শ্রমিকদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সেখানে কথাবার্তা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের জন্য এবার গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যু নেই। আইএলও মহাপরিচালক গাই রাইডারের সঙ্গে আলোচনার সময় কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আইএলও মহাপরিচালক গাই রাইডারের সঙ্গে আলোচনার সময় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিক দিয়ে বিশ্বে এক নম্বরে আছে। তারপরও আইএলও সব সময় শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলে। কিন্তু যদি বায়ারদের থেকে ন্যায্যমূল্য না পাই, তাহলে শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়ন করা হবে কীভাবে? বায়াররা সব সময় উৎপাদন খরচের চেয়েও কম মূল্যে তৈরি পোশাক ক্রয়ের চেষ্টা করে। তারা যদি ন্যায্যমূল্য দেয়, তাহলে শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব, নয়তো সম্ভব নয়।
এদিকে গতকাল সোমবার ও আগের দিন রবিবার শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত শ্রমিক নেতারা জানান, আন্দোলনরত শ্রমিকরা কোন সেক্টর বা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কিংবা কোন শ্রমিক সংগঠনের ইন্ধনে তারা আন্দোলন করছেন- এ বিষয়ে তারা অবগত নন। তবে উপস্থিত শ্রমিক নেতারা এ সময় শ্রম আইনের বিধি মোতাবেক সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করে মজুরি বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান। তিনি বলেন, চলমান বিক্ষোভে শ্রমিকরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অগ্রসর না হয়ে, হঠকারী আন্দোলন করছেন, যা কোনো সফলতা বয়ে আনবে না। সভায় সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (যুগ্ম সচিব) মিনা মাসুদ উজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্টেকহোল্ডাররা।
এদিকে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে চতুর্থ দিনের মতো সোমবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। সড়ক থেকে সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মিরপুর ১৩ নম্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। এতে মিরপুর ১৩ ও ১৪ সহ কয়েকটি এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে মারমুখী হয়ে ওঠেন শ্রমিকরা।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. মাহবুব বলেন, শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্রমিকরা রাস্তা ছাড়লে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পুলিশের টিয়ারশেলে রাস্তার পাশে অবস্থিত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়