ভারতের গমে রুবেলা ভাইরাস : অর্ধলাখ টন ফেরত দিল তুরস্ক

আগের সংবাদ

কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন : ভোরের কাগজের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার দাবি

পরের সংবাদ

হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন : হজযাত্রীদের কাছে দোয়া চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : এবারের হজ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে হজযাত্রীদের কাছে বাংলাদেশের মানুষের জন্য দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা আল্লাহর মেহমান হয়ে হজ পালন করতে যাচ্ছেন, তাদের কাছে এটুকুই আবেদন করব, আপনারা বাংলাদেশের জনগণের জন্য দোয়া করবেন। সেই সঙ্গে আমি আমার যে আপনজন হারিয়েছি, তাদের জন্যও দোয়া করবেন। গতকাল শুক্রবার হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও হজ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আশকোনার হজ ক্যাম্পে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। এ সময় ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী শক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হাসান, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দুই বছর হজে যাওয়া বন্ধ ছিল। এখন করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে, তাই হজে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এই সুযোগ করে দেয়ার জন্য সৌদি বাদশাহকে ধন্যবাদ জানাই। হাজিরা যাতে সুষ্ঠুভাবে ইবাদত করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নেয়া সরকারের কর্তব্য। আমি হাজিদের অনুরোধ করব, আপনারা দেশের মানুষের পাশাপাশি এই করোনা ভাইরাসের মতো প্রাদুর্ভাব থেকে যাতে বিশ্ব রক্ষা পায়, মানব জাতি রক্ষা পায়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণও যাতে রক্ষা পায়, সেই দোয়া করবেন।
হজ যাত্রা সহজ করার জন্য বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি বিমানে করে হাজিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ডেডিকেটেড সার্ভিস দেয়া হচ্ছে। হজযাত্রীদের সৌদি আরবের নিয়মকানুন ও আইন মেনে চলতে হবে। হজে সবাই আইন মেনে চলবেন। কারণ ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি দেশের মানসম্মান রক্ষা করাও সবার কর্তব্য। ইসলাম শান্তি, পবিত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। এই ধর্মের সম্মান বজায় রাখা আমাদের কর্তব্য।
হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেই পথে যাতে এগিয়ে যেতে পারি। দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে সব নাগরিক অধিকার ও সুন্দর জীবন পায়, সেই জন্য দোয়া করবেন।
সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার হজ ও ওমরা আইন-২০২১ প্রণয়ন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজ যাত্রীরা যাতে কোনোরকম হয়রানি ছাড়া হজে যেতে পারেন, হজ পালন করতে পারেন। তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। ভবিষ্যতেও আল্লাহর ঘরের মেহমানদের যারা হয়রানি বা প্রতারণা করবে তাদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কম খরচে হজ পালনের জন্য জাতির পিতা কম খরচে হিজবুল বাহার জাহাজ কেনেন। সমুদ্র পথে হজযাত্রী পাঠাতেন। তিনি মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেন। তার কূটনৈতিক দূরদর্শীতায় ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বাড়ান। তাবলিগ জামায়াতের জন্য কাকরাইলে জমি দান করেন। তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। প্রথম আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন, ঘোড়া দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন। বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কুরআন তেলাওয়াতের প্রচলন করেন। একজন খাঁটি মুসলমান হিসেবে তিনি ইসলামের নামে স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে এক ঐতিহাসিক বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমরা ইনসাফের ইসলামি বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হজরত নবী করিম (সা.)-এর ইসলাম, যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’
বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সব ধর্মের মানুষের জন্য আমরা নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। দেশে সব ধর্মের মানুষ সুন্দর সহঅবস্থানে থেকে যার যার ধর্ম চর্চা করছে। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে ধর্মকে অপব্যবহার করে এক শ্রেণির ইসলামের লেবাসধারী ব্যক্তি দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে। তারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কখনো তাদের প্রশ্রয় দেবে না। তাই আসুন, আমরা ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী শক্তিকে প্রতিহত করি।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী আশকোনা হজ ক্যাম্পে থাকা একজন হজ যাত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি, আপনাদের মনের আশা পূর্ণ হবে। অনেক ভালো লাগলো আপনাদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু আমি দুঃখিত আসতে পারলাম না। করোনার কারণে আমাকে অনেক জায়গায় যেতে দেয়া হয় না। তবে যত দূরেই থাকি না কেন, এটা মনে রাখবেন, আপনারা আমার অন্তরে আছেন। পরে দেশবাসীর কল্যাণে মোনাজাত করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়