ঢাকায় সিপিবির সমাবেশ কাল

আগের সংবাদ

টার্গেট এবার রাজপথ দখল : পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ ও প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি

পরের সংবাদ

সচেতনতায় কমবে বজ্রপাতে মৃত্যুহার

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দিন যাচ্ছে জনসংখ্যার আধিক্য যেমন বাড়ছে তেমনি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনাজনিত কারণে অকালে প্রাণ হারানোর চিত্রও বাড়ছে। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে আছে বন্যা, খরা, জলোচ্ছ¡াস কিংবা ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ। তবে লক্ষ্য করার বিষয় ইদানীং বজ্রপাতে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেড়ে গিয়েছে। ১০-১৫ বছর আগেও এই নিয়ে খুব একটা আলোচনা হতো না। কিন্তু সম্প্রতি ৪-৫ বছরে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে যা মানুষকে ভাবাচ্ছে। আপনারা যখন এই লেখা পড়ছেন তখনো কেউ জমিতে কাজ করতে গিয়ে কিংবা ছাদে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে অকাল মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশে বজ্রপাতে অকাল মৃত্যুর তালিকা যদি বের করি তাহলে চিত্রটা এমন যে প্রতি বছর কম করে হলেও দেড়শ মানুষ বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করছে। ফিনল্যান্ডের বজ্রপাতবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার হিসাবে, বাংলাদেশে ২০১৫-২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৪০ লাখ বা তার বেশিসংখ্যক বজ্র্রপাত মেঘ থেকে ভূমিতে নেমে আসে। ২০১৯ সালে তা প্রায় ১০ লাখ কমে যায়। সর্বশেষ গত দুই এক বছরে সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখের কিছু কম। ভাইসালার হিসাবে, বজ্রপাতে ২০২১ সালে ১৪৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা আগের দুই বছরের চেয়ে কিছুটা কম। বজ্রপাতের ক্ষেত্রে একটি অস্বাভাবিক বছর ছিল ২০১৬ সাল। ওই বছর প্রায় ৪৩ লাখ বজ্রপাত হয়। মারা যান প্রায় ২৬৩ জন মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১১-২০২১ সাল পর্যন্ত এই এক দশকে মোট ২ হাজার ৭৮৫ জনের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়। তাহলে এটা মেনে নেয়াই যায় বজ্রপাতও এক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা বন্যা, খরা, জলোচ্ছ¡াসের মতো জীবন নাশকারী।
আমাদের দেশে বজ্রপাত সাধারণত বর্ষা মৌসুমের আগমনী বার্তা দিয়ে থাকে। বজ্রের গর্জন আর টিপটিপ বৃষ্টি জানান দেয় বর্ষা এসে গেছে। বজ্রপাত সম্পর্কে বহুল প্রচলিত একটি কথা আমরা জানি সেটা হলো মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে বজ্রপাত হয়ে থাকে। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে আরো কিছু ব্যাখ্যা জেনে নেয়া যাক। ‘ভূপৃষ্ঠের পানি যখন বাষ্প হয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে তখন মেঘের নিচের দিকে ভারী অংশের সঙ্গে জলীয়বাষ্পের সংঘর্ষ হয়। এর ফলে অনেক জলকণা ইলেকট্রন ত্যাগকৃত হয়ে ধনাত্মক চার্জে পরিণত হয় এবং অনেক জলকণা সে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক চার্জে পরিণত হয়। এরপর ডিসচার্জ প্রক্রিয়া ৩ ভাবে হয়ে থাকে। (১) একই মেঘের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের মধ্যে। (২) একটি মেঘের ধনাত্মক চার্জের সঙ্গে অন্য মেঘের ঋণাত্মক, আবার অন্য মেঘের ধনাত্মক চার্জের সঙ্গে ওই মেঘের ঋণাত্মক চার্জের মধ্যে এবং (৩) মেঘের পজিটিভ আধানের ও ভূমির মধ্যে। একে ক্লাউড টু গ্রাউন্ড ডিসচার্জিং বলে। এ চার্জিত জলীয়বাষ্প মেঘে পরিণত হলে মেঘে বিপুল পরিমাণ স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হয়। এ সময় অপেক্ষাকৃত হালকা ধনাত্মক চার্জ মেঘের ওপরে এবং অপেক্ষাকৃত ভারী ঋণাত্মক চার্জ নিচে অবস্থান করে। মেঘে এই ২ বিপরীত চার্জের পরিমাণ যথেষ্ট হলে ডিসচার্জ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ডিসচার্জিংয়ের ফলে বাতাসের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক স্পার্ক প্রবাহিত হয়। এ বৈদ্যুতিক স্পার্কের প্রবাহই ‘বজ্রপাত’ নামে পরিচিত। কিন্তু সব বজ্র ভূপৃষ্ঠে পড়ে না। শুধু ক্লাউড টু গ্রাউন্ড ডিসচার্জিংয়ের ফলে সৃষ্ট বজ্রই ভূপৃষ্ঠে পড়ে। যার প্রভাবে একসঙ্গে অনেক মানুষ মারা যেতে পারে।
বজ্রপাত সাধারণ হাওর এলাকায় বেশি হয়ে থাকে। এর ধর্ম হচ্ছে মাটি থেকে উঁচু কোনো কিছুতে পতিত হওয়া। যেহেতু ফাঁকা জায়গায় গাছ থাকে না, সেখানে মানুষের দেহই মাটি থেকে ওপরে এজন্য মানুষের ওপরেই বজ্র আঘাত হানে। এ যাবৎকালে যত প্রাণহানি ঘটেছে তার ৭০ শতাংশ মানুষ ক্ষেত-খামারে কৃষি কাজ করার সময় মারা গেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বেশি বেশি বজ্রপাত হচ্ছে। তার ওপর লম্বা গাছ কাটার ফলে মানুষের ওপরেই বজ্র পতিত হচ্ছে আর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে। অনিরাপদ স্থানে থাকার কারণেই অকালে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। উঁচু দালানের ওপর থাকলে দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে হবে। রাবারের জুতা এবং বিদ্যুৎ পরিবাহী এমন কিছু ব্যবহার করা যাবে না বজ্রপাতের সময়। এ সময় টিভি, ফ্রিজ এবং অন্য সবকিছুর সুইচ বন্ধ করে রাখতে হবে। প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। যেমন তাল গাছ, নারিকেল গাছ এবং যেগুলো দ্রুত লম্বা হয়। এতে মৃত্যুহার অনেকাংশে কমে আসবে। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে এর আগে বজ্রপাত প্রতিরোধে সারাদেশে প্রায় ১৩ লাখ তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে এর যে কয়টি টিকে আছে, তা নগণ্য। সরকারি-বেসরকারিভাবে তদারকি না করলে গাছ রক্ষা সম্ভব নয়। মোট কথা, মানুষকে বজ্রপাতের বিষয়ে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।

মাহমুদুল হাসান মিল্টন
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়