কুসিক নির্বাচন : ইভিএমে ভোটের প্রক্রিয়া দেখলেন ২১ প্রার্থী

আগের সংবাদ

গোপনে তৎপর জামায়াত : কৌশলে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম > ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের ছক

পরের সংবাদ

চালের দাম বাগে আনতে নানা পদক্ষেপ সরকারের

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : বাড়তে থাকা চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার মিলগুলোয় অভিযান চালানোর পাশাপাশি আমদানির কথা বলছে। এতে চালের দাম খুব যে একটা কমবে, তার কোনো নিশ্চয়তা না দিলেও সরকার বলছে, আমদানির অনুমতি দিলে বাজারে অন্তত চালের সংকট থাকবে না। এতে চালের দাম কমে আসবে। গতকাল মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয় ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধেয়ে আসা হঠাৎ বন্যায় ধানের ক্ষতি হয়েছে। এতে ধান উৎপাদন কম হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ার কথা কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে স্বীকার করা হচ্ছে না। ফলে এই মৌসুমে ঠিক কী পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে, তার পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে না। অন্যদিকে যে ধানই উৎপাদন হয়েছে, তা বাজার থেকে সরাসরি কিনে নিচ্ছে এসিআই, আকিজ, ফ্রেশ, সিটি গ্রুপের মতো কোম্পানিগুলো। অথচ এই কোম্পানিগুলো আগে চাতাল কিংবা অটো রাইস মিল থেকে ধান কিনত। কিন্তু এবার তারা সরাসরি বাজার থেকে কিনে নেয়ায় চাষীরা চাতালে কিংবা অটোরাইস মিলে কম ধান বিক্রি করতে পারছেন। এ কারণে চাতাল কিংবা অটোরাইস মিলগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল বাজারে ছাড়তে পারছে না। এছাড়া সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলেছে, খাদ্যের সংকট হবে। এই কথার পর কিছু মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে চাল কিনে রেখে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে চালের বাজারে কিছুটা সংকট রয়েছে।
সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্বখাদ্য সংস্থা খাদ্যের সংকট হবে বলার পর থেকেই একশ্রেণির মানুষ চাল কিনে মজুত করছে। এমন প্রেক্ষাপটে মানুষকে সাহস দিতে হবে। বলতে হবে, এটা দুর্ভিক্ষের দেশ নয়। না খেয়ে কেউ মরবে না।

অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখন বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু করব। তাতেও যদি সংকট নিরসন না হয়, তাহলে আমদানির অনুমতি দেব। সব মিলিয়ে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখাই এখন অন্যতম কাজ বলে জানান তিনি।
এর আগে গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ধান-চালের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়, যেখান থেকে দেশের কোথাও অবৈধ মজুদ হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, কিছুদিন আগে তেলের (ভোজ্যতেল) বিপরীতে যেভাবে অভিযান করা হয়েছে, ওই রকম অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদি কেউ এভাবে (নিয়ম-নীতি ভেঙে) আনঅথরাইজড চালের ব্যবসা করে বা মজুদ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রিসভায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি বোরো মৌসুমে ধানের কাক্সিক্ষত ফলন হলেও বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ধান চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলছে। বড় বড় মিল ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভালো মুনাফার আশায় ধানের মজুদ শুরু করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর বোরো মৌসুমের ধান বাজারে আসার পর চালের দাম কমতে শুরু করলেও এবার ঘটছে উল্টোটা। নতুন ধান বাজারে আসার পর থেকে চালের দামও বাড়তে শুরু করেছে বলে খুচরা বিক্রেতারা দাবি করছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। আর মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে নতুন ধান উঠলেও দাম চড়া। গত বছরের তুলনায় প্রতি মণ ধানে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুনতে হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর খাদ্যমন্ত্রী মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন। ওইদিনই বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। আজ ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। গত সোমবার হয়ে যাওয়া বৈঠকে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার ভোরের কাগজকে বলেন, মিলাররা কারসাজি করে চাল বাজারে সরবরাহ করছে। এতে বাজারে চালের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে দামও বাড়ছে। কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ওই বৈঠকে বলেন, বড় বড় মিলগুলোয় অভিযান শুরু হবে। প্রয়োজনে মিল বন্ধ করে দেয়া হবে নতুবা চালের একটি দাম নির্ধারণ করে দেয়া হবে, যে দামে মিলগেট থেকে চাল বিক্রি করতে হবে।
এদিকে মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সারাদেশে ধান ও চালের অবৈধ মজুদ খুঁজে বের করতে ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ মাঠে নামবে খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। পাশাপাশি অবৈধ মজুদ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এনএসআই, র‌্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকেও চিঠি দেয়া হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমান জানান, ঢাকা কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোয় যাবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি টিম। খাদ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি টিমও পাশাপাশি কাজ করবে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অভিযান চলবে। অবৈধ মজুদের উৎস জেনেই অভিযান হবে জানিয়ে মজিবুর রহমান বলেন, বিপণন পর্যায়ে কোন দোকানে কতটুকু মজুদ রাখা যাবে, সেটা আইনে বলা আছে। যদি অবৈধ মজুদ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি জানান, ১৯৫৬ সালের এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্টে বলা আছে কোন পর্যায়ে কতটুকু মজুদ রাখা যাবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে এবং ২০২১ সালে দুটি আদেশ জারি করা হয়। সেই আলোকেই অভিযান চলবে। অভিযানের সার্বিক দেখভালের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হচ্ছে বলে জানান খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়