কুসিক নির্বাচন : ইভিএমে ভোটের প্রক্রিয়া দেখলেন ২১ প্রার্থী

আগের সংবাদ

গোপনে তৎপর জামায়াত : কৌশলে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম > ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের ছক

পরের সংবাদ

আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র > জবাবদিহিতা ছাড়া র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই : পিটার হাস

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে। যাতে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। বিশেষত নির্বাচন প্রক্রিয়াটা হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) এর ফ্লাগশিপ প্রোগ্রাম ‘ডিকাব-টক’-এ যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়া র‌্যাবের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে পদ্মা সেতু ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বাংলাদেশের জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। পিটার হাস আরো বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থে তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আনুষ্ঠানিক না হলেও বাংলাদেশে যে নির্বাচনের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে পত্রিকায় চোখ বুলালেই সেটা দেখতে পাই। তাই নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের দিক থেকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন হচ্ছে কিনা- সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখাটা জরুরি। পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি জনসমক্ষে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র তুলে ধরেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশাপাশি গণমাধ্যম বিষয়ক বেশ কয়েকটি খসড়া আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করতে পারে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন পলিসির মূল বিষয় হচ্ছে বৈশ্বিকভাবে মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং অন্যান্য আইন নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কারো সঙ্গে কোনো আপস নেই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে ঠিক পথে আছে, তা কিন্তু নয়।
র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বিষয়টি এমন নয় যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের একটি তালিকা আমরা দিয়ে দিলাম কী করতে হবে। এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাহিনীটির ওপর যে অভিযোগগুলো আছে, সেগুলোকে আমলে নিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে নিশ্চিত করা। এটা ছাড়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।
শ্রীলঙ্কার পথেই বাংলাদেশ হাঁটছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের পরিস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন। তাই দুই দেশকে একইভাবে মেলানো যায় না। এমনকি শ্রীলঙ্কার থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেক বেশি শক্তিশালী। কারণ, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ স্থিতিশীল। চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ কম পরিমাণ ঋণ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার যে ঋণ নেয়, সেটি অনেক কিছু বিবেচনা করে গ্রহণ করে। তবে, তার মানে এই নয়, বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ নেই। পিটার হাস আরো বলেন, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের বড় অংশ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্ব ব্যাংক ও জাপান। তাই শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক করে দেখার সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে না এমনটা নয়। টাকার অবমূল্যায়ন, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, সামগ্রিকভাবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জনগণের ওপর খরচের বোঝা বাড়বে। মৌলিকভাবে বলতে গেলে শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলো আলাদা।
পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওয়াশিংটনে ২ জুন অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে শ্রম অধিকার, জিএসপি সুবিধা, উন্নয়নবিষয়ক তহবিলের বিষয়গুলোতে আলোচনা হবে। গত ৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো কোনো বন্ধু বাংলাদেশের ছিল না, মন্তব্য করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
পদ্মা সেতু ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন, এড়িয়ে গেলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত : পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ষড়যন্ত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? এছাড়া, যারা পদ্মা সেতুর সমালোচক ছিলেন, বিভিন্ন সময়ে তাদেরও এ সেতু ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেছেন শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে কি আপনি এ সেতু ব্যবহার করবেন- প্রশ্ন করা হলে তার কোনো জবাব না দিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মুচকি হাসেন। এ সময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস বলেন, পদ্মা সেতু শিগগিরই উদ্বোধন হতে চলেছে। ইস্যুটি ইতোমধ্যে পুরনো হয়ে গেছে।
ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়