নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ

আগের সংবাদ

কালো টাকার অবাধ সুযোগ! : বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বিরল উদ্যোগ, কর দেয়ায় নিরুৎসাহিত হবে সৎ করদাতারা

পরের সংবাদ

গুয়াহাটিতে ‘নদী’ সম্মেলন শুরু : আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর তাগিদ

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, গুয়াহাটি (আসাম-ভারত) থেকে : গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র এবং মেকং নদীর তীরবর্তী দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের রাজধানী গুয়াহাটি শহরে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ‘নদী’ সম্মেলন। ভারতের পূর্বমুখী কূটনীতির একটি বড় উদ্যোগ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংযোগ বাড়ানো এবং এই ৩টি নদীর অববাহিকায় অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে আরো সহযোগিতার সৃষ্টি। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ, ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রেখেছেন এই সম্মেলনে।
সম্মেলনের জন্য নির্ধারিত স্থান ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম আসাম রাজ্যটি বর্তমানে বিজেপি শাসিত এবং উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দেখা হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ বাড়ানো লক্ষ্য হলেও চীন এখানে অনুপস্থিত, মিয়ানমারকেও দেখা যায়নি। কিন্তু বাংলাদেশের উপস্থিতি ছিল সরব। ভারতের উপস্থিতি ছিল উচ্চপর্যায়ের। বক্তব্য রেখেছেন থাইল্যান্ডের ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের প্রতিনিধিরা।
অনেক বক্তাই বলেছেন, প্রাচীনকালে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল নদীপথ। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে সেই সব নদী, নদীর অববাহিকা গেছে বদলে। কিন্তু সেই

হারিয়ে যাওয়া নদীর গৌরব নতুন করে কীভাবে উদ্ধার করা যায় সেটাই ছিল আলোচনার বিষয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গুরুত্ব দিয়েছেন এই নৌপথ এবং নৌপথের অববাহিকায় অবস্থিত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নৌপথকে আরো সমৃদ্ধ করার ওপর।
ড. মোমেন বলেছেন, যখন রাস্তা ছিল না, রেল ছিল না, আকাশপথে যোগাযোগ ছিল না- তখন নৌপথ ছিল একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। এই অঞ্চলে এখনো অনেক জায়গা আছে যেখানে সড়ক যোগাযোগ উন্নত নয়, রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়নি, আকাশপথেও যাওয়া যায় না। কিন্তু নৌপথ সেখানে এখনো বিদ্যমান। এক সময়ের স্থলবেষ্টিত হিসেবে পরিচিত উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যগুলোর সঙ্গে নৌপথ সংযুক্ত করে কীভাবে যোগাযোগ বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনা যায় সেটি এখন মূল লক্ষ্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বললেন, নদীর কোনো সীমান্ত নেই, কোনো ধর্ম নেই, কোনো জাতীয়তা নেই- নদী কোনো বৈষম্য করে না। ফলে এই নদীর দ্বারা সংযুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনা অনেকটা সহজ।
নদী একসময় সভ্যতার অংশ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সভ্যতাকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে নদী ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কীভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে যে সমস্ত নৌপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রকল্প, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে যে সমস্ত প্রকল্প, এমনকি মিয়ানমারের কালাদান প্রকল্প ও অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে যে সমস্ত সমৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেন। ‘আসিয়ান’-কে সামনে রেখে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য এবং আসিয়ানের বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য জাপানের বিভিন্ন সহযোগিতার তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি প্রত্যাশা করেন আগামীতে নদী হবে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতিকেও পাল্টে দিতে পারে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং সম্মেলনের উদ্যোক্তা শিলংভিত্তিক থিংকট্যাংক এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের নির্বাহী পরিচালক সব্যসাচী দত্ত উদ্বোধনী পর্বে নদীকে যোগাযোগের প্রধান ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরার আহ্বান জানান। আসামের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে আরো যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ২৮-২৯ মে অনুষ্ঠেয় ন্যাচারাল অ্যালাইজ ইন ডেভেলপমেন্ট এন্ড ইন্টারডিপেনডেন্স (এনএডিআই)-এর তৃতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার গুয়াহাটি পৌঁছান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে জাতীয় সংসদের সদস্য, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান ও বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধি দল এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। সম্মেলন আয়োজনে বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়