করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেইজিংয়ে ফের স্কুল বন্ধ

আগের সংবাদ

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৯ দফা নির্দেশনা : ঝুঁকি মোকাবিলায় নজরদারিতে চাকরিচ্যুত পুলিশরা

পরের সংবাদ

শহীদুল্লাহর যাপিত-জীবন

প্রকাশিত: মে ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শহীদুল্লাহ দিশেহারা।
হঠাৎ হঠাৎ পাগলের মতো আচরণ করছে সে। এদিক সেদিক ছুটছে। তার মাথা চরকির মতো ঘুরছে। কখনো কখনো সে বাড়ির খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার কখনো উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকায়। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। চিৎকার দিয়ে কী যেন বলে। কিছুই বোঝা যায় না। কারো বোঝার সাধ্যও নেই। সবই আসলে পাগলের প্রলাপ। তার মাথা ঠিক নেই। সবকিছু এলোমেলো।
দু’দিন আগেও শহীদুল্লাহর সাজানো গোছানো সংসার ছিল! কত কষ্টই না করেছিল সে! মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তিলতিল করে গড়ে তোলে নিজের সংসার। শারীরিক কসরতের মধ্যদিয়ে দিন কাটলেও সেই সংসারে হাসি ছিল, আনন্দ ছিল। হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় সবকিছু তছনছ হয়ে গেল! কেন হলো! কার দোষে তার সংসার পুড়ে ছারখার হলো! কিছুই বুঝতে পারে না সে।
শহীদুল্লাহ মাটিতে না আকাশে তা নিজেও ঠাহর করতে পারছে না। সে কখনো আকাশে উড়ছে; আবার কখনো আছড়ে পড়ছে পাতালে। নাগরদোলায় চড়লে মানুষের যেমন অবস্থা হয়, তার অবস্থা তেমন হচ্ছে। সর্বস্ব হারিয়ে নিরুপায় শহীদুল্লাহর চলার শক্তি নেই; বলারও কোনো শক্তি নেই। কঠিন মর্মবেদনার ছাপ তার মন থেকে শরীরে।
কত আঘাত সইতে পারে মানুষ! শহীদুল্লাহ পঞ্চাশ বছরের জীবনে অনেক আঘাত সহ্য করেছে! আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সে। কথায় বলে না, অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর। অধিক শোকে শহীদুল্লাহ পাথর হয়ে গেছে। ঘরের মেঝেতে বসে সে বুক চাপড়ে কাঁদছে আর বলছে, এই দুনিয়ায় আমার আর কিছুই রইল না! সবই শেষ হয়ে গেল!
শহীদুল্লাহর কথাগুলো কেউ কি শুনেছে! না। কেউ শুনতে পায়নি। তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হয়নি। কথাগুলো এতটাই নিচু স্বরে ছিল যে, তা কেউ শোনার আগেই আকাশে মিলিয়ে গেছে। তুমুল বৃষ্টিতে ধুয়েমুছে গেছে তার জমাট কষ্টগুলো। এরপর কষ্টের শেষ হলে কথা ছিল। কিন্তু শেষ হয়নি। আবার তার বুকের ওপর কষ্টের পাহাড় জমেছে। একের পর এক কষ্ট প্রবল বেগে আঘাত হেনেছে। ছোটখাটো হলে হয়তো সহ্য করা সম্ভব ছিল। কিন্তু সেই কষ্ট কখনো টর্নেডোর মতো, আবার কখনো সাইক্লোনের মতো তাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। প্রতিনিয়ত তাকে তীরবিদ্ধ করেছে। আবার প্রকৃতির নিয়মে সেগুলো বিদায়ও নিয়েছে। তারপর আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। এবারো নিশ্চয়ই শহীদুল্লাহ উঠে দাঁড়াবে। ঘুরে দাঁড়াবার পথ খুঁজে পাবে। তাতে কি শহীদুল্লাহর সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলবে! কষ্টগুলো কি পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে পারবে! সব কষ্ট কি ঝেড়ে ফেলা যায়! হয়তো তাকে বুকে পাথর চেপেই বাকি জীবন পার করতে হবে।
শহীদুল্লাহর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। অতি সাধারণ পরিবারে তার জন্ম। তাদের অল্পবিস্তর জমি আছে। সেই জমিতে যে ফসল ফলে তা দিয়ে সংসার চলে না। বার মাসের নয় মাসই তাদেরকে অন্য কোনো উপার্জনের ওপর নির্ভর করতে হয়। গ্রামে বসে সেই উপার্জনের পথ নেই তার। উপার্জনের জন্য তাকে দেশান্তরি হতে হয়। কিন্তু শহীদুল্লাহর বাবা নিজের ভিটি ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। অনাহারে পেটে গামছা বেঁধে ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকবেন। তবু কোথাও যাবেন না। নিজের বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না তার। যদিও সন্তানদের অনাহারি করুণ মুখগুলো দেখলে তার বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। তখন আবার নড়েচড়ে বসেন। মনে মনে বলেন, বাচ্চাদের মুখে খাবার তো দিতে হবে! তার জন্য আয়ের পথ বের করতে হবে। সেই আয়ের পথ কী?
কোনো উপায় খুঁজে পান না আবদুল হক। তিনি বড় ছেলের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। আবার মনে মনে ভাবেন, ছেলেটা যদি তাড়াতাড়ি বড় হতো! তাহলে আমার কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো! কবে যে বড় হবে!
শহীদুল্লাহদের থাকার ঘরের অবস্থাও সঙ্গীন। কাঁচা ভিটার ওপর দোচালা একটি টিনের ঘর। তার সামনে একটি বারান্দা। বারান্দাটা ছনের ছাউনি। বারান্দার দুই পাশে দুটি চকিতে দুই ছেলে থাকে। ভেতরের ঘরে আরো দুই চকিতে মা-বাবা আর দুই বোন থাকে। বৃষ্টির দিনে ঘরের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে পানি পড়ে। বৃষ্টির দিনে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় থালাবাটি বাসন দিয়ে রাখে। ঘরের দক্ষিণ কোণের জায়গাটুকু কিছুটা নিরাপদ। বৃষ্টিতে ওই কোণাটিই কেবল অক্ষত থাকে। সেই কোণায় বাড়ির সবাই একসঙ্গে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। বেশি বৃষ্টি হলে সেই ঘরে তাদের থাকাই দায়। তারপরও ঘরের কাজে হাত দেন না শহীদুল্লাহর বাবা। হাত দিলেই যদি হুড়মুড় করে পড়ে!
আসলে পেটে ভাত জোগাতে যাদের হিমসীম খেতে হয়; তারা ঘরদোর ঠিকঠাক করার কথা ভাববেন কী করে! শহীদুল্লাহর বাবা আবদুল হক অন্য কিছুই মাথায় আনেন না। আনতে পারেন না। তিনি ছেলেমেয়েদের মুখে অন্ন জোগাতে গাধার মতো খেটে চলেন। মাঝেমধ্যে আসমানের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। মনে মনে বিধাতার কাছে প্রার্থনা করেন, হে খোদা! আর কত এই বান্দারে কষ্ট দিবা! আর কত পরীক্ষা নিবা! আর যে পারছি না!
আবদুল হক ছোট্ট ছেলে শহীদুল্লাহর কাঁধে হাত রেখে চোখে পানি ফেলতে ফেলতে বলেন, আমাদের কী কষ্টে কষ্টেই জীবন যাবে! সুখের মুখ কি আমরা দেখতে পাব না!
আবদুল হকের কথাগুলো তার স্ত্রী আছিয়া বেগমের কানে যায়। কথাগুলো শুনে তার চোখে পানি আসে। দু’গাল বেড়ে সেই পানি মাটিতে পড়ে। আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, হায় খোদা! তুমি আমাদেরকে কষ্ট থেকে মুক্তি দাও।
মা-বাবার সেই কথাগুলো শহীদুল্লাহর স্মৃতির আয়নায় ভেসে ওঠে। আর অমনি শহীদুল্লাহ আবেগাপ্লুত হয়। শহীদুল্লাহ তখন এতই ছোট ছিল যে বাবা আবদুল হককে সহায়তা করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তারপরও সংসার নিয়ে সে ভাবত। মা-বাবার কষ্ট তাকে পীড়া দিত। এখনো সেই কথা মনে পড়লে তার চোখে পানি আসে। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে তার।
শহীদুল্লাহ তখন ফাইভ থেকে ক্লাস সিক্সে ওঠে। স্কুলে যাবে নাকি বাবার কাজে সহায়তা করবে তা নিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়ে। স্কুল তাকে ব্যাপকভাবে টানে। চুম্বকের মতো টানে। তার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে সে অনেক বড় হবে। অনেক বড় চাকরি করবে। লেখাপড়া না শিখলে তার বাবার কষ্ট ঘোচাবে কী করে! কিন্তু সে পর্যন্ত কি আবদুল হক বেঁচে থাকতে পারবেন? এই প্রশ্ন শহীদুল্লাহর মনে দানা বাঁধে। তার বাবার কষ্টের বিষয়টা তাকে ভাবিয়ে তোলে। শৈশবের দুর্দান্ত সেই সময়টা কেমন যেন ধুসর হয়ে যায়। একা একা ঘরের কোণে বসে চোখের পানি ফেলে। মনে মনে সে বলে, আমাদের দিন কি এভাবেই যাবে? বদলাবে না!
শহীদুল্লাহ তার মা আছিয়া বেগমের কাছে যায়। তার কাছে সে পরামর্শ চায়। তাকে উদ্দেশ করে সে বলে, মা আপনিই বলেন আমি কী করব? আপনি যে পরামর্শ দেবেন আমি তাই করব মা। বাবার কষ্ট দেখলে আমার কিছু ভালো লাগে না। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। একা মানুষটা সংসারের ঘানি টানছেন। আমি ছেলে হয়ে তার জন্য কিছুই করতে পারছি না। তার ক্লান্ত মুখখানা দেখলে কান্না পায়। আমি সহ্য করতে পারি না মা।
শহীদুল্লাহর মা আছিয়া বেগম বিস্মিত হন। মনে মনে তিনি বলেন, আমার এতটুকু ছেলেও সংসার নিয়ে ভাবে! বাবার কষ্ট তাকে পীড়িত করে!
আছিয়া বেগম ছেলেকে কাছে ডাকেন। আদর করে শহীদুল্লাহকে বললেন, বাবা তুই তোর বাবার কাজে সাহায্য কর। তাতে যদি সংসারটা ভালো চলে তাহলে তাই করা উচিত না! পেটে ক্ষুধা নিয়া কি আর লেখাপড়া হয়!
আছিয়া বেগমের কথাগুলো শহীদুল্লাহর মনে গেথে যায়। সেই থেকেই সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সে স্কুলের বন্ধুদেরও এড়িয়ে চলে। তাদের সঙ্গে দেখা হলে যদি প্রশ্ন করে, কেন সে স্কুলে যায় না? কেন সে তাদেরকে এড়িয়ে চলে? কী জবাব দেবে শহীদুল্লাহ? কী জবাব আছে তার কাছে? তাদেরকে কী বলবে, তার বাবার কাজে সে সাহায্য করছে! স্কুলে না গিয়ে বাবার কাজে সাহায্য করাটাকে তারা কীভাবে নেবে? আসলে এসব প্রশ্নের কোনো জবাব নেই শহীদুল্লাহর কাছে। তাই সে বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে থাকে। বলা যায়, সে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। বন্ধুরা যখন স্কুলে যায় শহীদুল্লাহ তখন সে জমিতে কাজ করে। কৃষি জমিতে ফসল ফলানোর কাজ করে। কখনো রোদে পুড়ছে আবার কখনো বৃষ্টিতে ভিজছে। তার এখন রোদে পোড়া আর বৃষ্টিতে ভেজা জীবন!
শহীদুল্লাহদের জমির পাশের রাস্তা দিয়েই স্কুলে যেতে হয়। বন্ধুরা স্কুলে যায়। শহীদুল্লাহ উদাস দৃষ্টিতে বন্ধুদের স্কুলে যাওয়া দেখে। মনে মনে সে বলে, হায়! এই জীবন নিয়া কেন আমি দুনিয়াতে আসলাম! আমি লেখাপড়া করতে চাই। লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চাই। অথচ আমার নিয়তি আমাকে তা করতে দিচ্ছে না। যে সময় আমার স্কুলে যাওয়ার কথা; সে সময় আমি কৃষি জমিতে কাজ করছি। নিয়তি আমাকে নিয়ে এ কী খেলা খেলছে!
শহীদুল্লাহর মনের দুঃখ মনের মধ্যেই চাপা পড়ে থাকে। কাউকে সে বলতে পারে না। কাকে বলে সে? বলার যে কেউ নেই। সে রাতভর মুখে বালিশ চেপে কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলে। রাতের পর রাত তার কেটে যায় নির্ঘুমে।
শহীদুল্লাহর কঠিন শ্রম-ঘামে ভাগ্যের চাকা কিছুটা ঘুরলেও সংসারের টানাপড়েন অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। যেভাবে সংসার চলছে তাকে চলা বলা যায় না। এতে শহীদুল্লাহর দুশ্চিন্তা আরো বাড়ে। সংসারের হালচাল দেখে মাঝেমধ্যেই সে হা-হুতাশ করে। সে মনে মনে ভাবে, কী করলে সংসারটা ভালোভাবে চলবে। ঢাকায় গেলে কি কোনো কাজ জুটবে? সবাই তো বলে, ঢাকা শহরে নাকি টাকা ওড়ে। শুধু ধরতে জানতে হয়। ধরার কৌশল জানতে হয়। এর মানে কী! টাকা কি আকাশ থেকে পড়ে? তা না হলে টাকা ওড়ে কেমনে?
শহীদুল্লাহ তার মা’র সঙ্গে পরামর্শ করে। তাকে সে বলে, মা আমি বরং ঢাকায় যাই।
ছেলের কথা শুনে মার বুকটা হাহাকার করে ওঠে। অতটুকু ছেলেকে ঢাকায় পাঠিয়ে যদি তাকে হারাতে হয়! ভয় আর শঙ্কা তার মনে মধ্যে দানা বাঁধে। তিনি ছেলেকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে আদর করেন। তারপর বলেন, না বাবা। তোর ঢাকায় যাওয়ার দরকার নাই। ঢাকায় গেলে মানুষ হারাইয়া যায়। জনমের মতো হারাইয়া যায়। কোনো দিন তাকে ফিরে পাওয়া যায় না। আমি তোরে হারাইতে চাই না বাবা! না খেয়ে থাকলেও তোকে হারাতে পারব না। মরলে সবাই একসঙ্গে মারবো।
শহীদুল্লাহ বিস্ময়ের সঙ্গে বলে, এসব আপনি কী বলেন মা! সত্যই কি মানুষ হারাইয়া যায়! কেন হারায়? কেন তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না?
জানি না বাবা। ঢাকায় গেলে মানুষ দেশে ফেরে না। মা-বাবাকে ভুলে যায়। পরিবারকে ভুলে যায়। ঢাকায় পাঠাইয়া আমি তোরে হারাইতে চাই না বাবা।
উদাস দৃষ্টিতে মার দিকে তাকিয়ে থাকে শহীদুল্লাহ। তারপর বলে, আমি কোনো দিন ভুলব না মা। কোনো দিন ভুলব না। ক্ষুধার জ¦ালা আমার যে সহ্য হয় না মা! আপনি আমাকে যেতে দেন। আমি ঢাকায় গিয়া ভালো একটা কাজ নিবো। ভালো মায়নাওয়ালা কাজ। যাতে আমরা সবাই মু’মুঠো খেতে পারি।
তুই ছোট মানুষ। এই বয়সে তোরে কে কাজ দিবো?
আমাদের পাশের বাড়ির জয়নাল আছে না! ও বলছে, আমারে একটা কাজ নিয়া দিবো।
সত্যই কি জয়নাল তোরে কাজ দেয়ার কথা বলছে? সত্যই কি সে কাজ দিতে পারবে? যদি না পারে? তখন কী হবে?
বলছে তো পারবে। ও কি আমার সঙ্গে মিথ্যা বলবে? তাছাড়া মানুষে তো বলে, ঢাকা শহরে টাকা ওড়ে। শুধু ধরতে জানতে হয়।
তুই এইসব কী বলছিস বাবা? মানুষের কথা বিশ্বাস করছিস? ওই সব বইলা তোরে লোভ দেখায়। বুঝছিস?
আমারে লোভ দেখাইয়া লাভ কি?
লোভ দেখাইয়া ঢাকায় নিয়া তোরে বেইচ্যা দিবো।
না মা। বেচতে পারব না। জয়নাল আছে না?
আরে জয়নালই তো তোরে বেচবো।
শহীদুল্লাহ বিস্ময়ের দৃষ্টিতে আছিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে, মায় যে কী কয়! জয়নালের কি সেই সাহস আছে? বুদ্ধিতে আমার লগে পারব?
ছেলের কথা শুনে আছিয়া বেগম কিছুটা সাহস পান। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি আর ছেলের উদ্দেশে আমতা আমতা করে বললেন, আচ্ছা দেখ। যদি কাজ পাওয়া যায়! আর যদি কোনো কাজ না পাস? তাইলে কী করবি?
এতবড় ঢাকা শহর! লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় থাকে। সবাই তো কিছু না কিছু কাজ করে। করে না?
হ। তা তো করেই। তয় তোর মতো ছোট মানুষের কাজ জোটে কি না সন্দেহ আছে।
এসব আপনি কী বলেন মা? আমাদের মতো ছোট মানুষেরও অনেক কাজ। মা, আপনি শুধু অনুমতি দিন। আমি একটা কাজ সত্যি সত্যিই জোগাড় করে নিবো।
আছিয়া বেগম একদৃষ্টে শহীদুল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকেন। ততক্ষণে শহীদুল্লাহ তার খুব কাছে গিয়ে বসে। আছিয়া বেগম আবার ছেলের দিকে তাকান। তার ভেতরে দ্বিধাদ্ব›দ্ব কাজ করছে। নানা দুশ্চিন্তা তার মাথায় ভর করছে। যদি ছেলের কিছু হয়! যদি দুষ্টলোকের পাল্লায় পড়ে! যদি তারা তাকে দেশের বাইরে পাচার করে দেয়! বলা যায় না; অপরাধীচক্রের সঙ্গেও ঢুকে যেতে পারে। মনের ভেতরে নানা প্রশ্ন। একের পর এক প্রশ্ন তার মাথায় তীরের মতো বিদ্ধ করতে থাকে। অনেক ভাবনাচিন্তার পর আছিয়া বেগম সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বললেন, বাবা সত্যিই তুই যাবি? তোর ভয় লাগে না?
না মা। আমার কোনো ভয় নাই। জয়নালকেও আমি বারবার বলছি, ঢাকায় গিয়ে আমি যেন কোনো বিপদে না পড়ি। জয়নাল আমারে কথা দিছে। ওই আমারে দেখে রাখবে।
আছিয়া বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। শহীদুল্লাহ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বললো, আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি মা। আমি কোনোদিন আপনাদের কথা ভুলব না। আমি কোনো দিন হারিয়ে যাবো না। যেখানে থাকি, যেমনই থাকি আপনাদের কাছে ফিরে আসব। মারা গেলেও আমার লাশটা আপনাদের কাছে আসবে।
আছিয়া বেগম শহীদুল্লাহর মুখ চেপে ধরে বললেন, খবরদার! ওসব কথা মুখেও আনবি না। তারপর তিনি ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন।
সংসারের টানাপড়েন অবস্থা কাটানোর জন্য শহীদুল্লাহ নিজের লেখাপড়ায় ইতি টেনে ঢাকা উদ্দেশে রওয়ানা হলো। যাওয়ার সময় মা বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করে। তার কাছ থেকে দোয়া নেয়। তারা শহীদুল্লাহর মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন। তারা বলেন, আল্লাহ যেন শহীদুল্লাহর মনের আশা পূরণ করেন।
শহীদুল্লাহ মনে মনে বলে, হে আল্লাহ! ঢাকায় গিয়েই যেন আমি একটা চাকরি পাই। আমাকে প্রতি মাসে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হবে। তা না হলে বাড়ির সবাইকে না খেয়ে মরতে হবে। আল্লাহ তুমি দয়া করো। আমি একটা কাজ চাই। শুধু একটা কাজ!
শহীদুল্লাহকে নিয়ে জয়নাল ফকিরাপুলে তার মেসে ওঠে। তারপর গোসল খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নেয়। বিকালে শহীদুল্লাহকে নিয়ে বের হয় ঢাকা শহর দেখতে। তাকে সে ঢাকা শহর ঘুরিয়ে দেখায়। মতিঝিল, গুলিস্তান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মগেট, বনানী, গুলশান ঘুরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসে। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে দু’জন গল্প করে। গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে জয়নাল তাকে নিয়ে যায় পত্রিকা অফিসে। সেখানে তার চেনাজানা একজন লোক ছিল। তার নাম রফিকুজ্জামান। তিনি দৈনিক অবজারভার পত্রিকার জেনারেল ম্যানেজার। বড্ড মেজাজী মানুষ। কিন্তু মনটা একেবারেই নরম। ভীষণ দয়ালু মানুষ। কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। মানুষকে সহায়তা করতে পারলে তিনি ভীষণ খুশি হন। এমন ধরনের মানুষ দুনিয়াতে খুব কম পাওয়া যায়।
জয়নাল জানে রফিকুজ্জামানের হাতে অনেক ক্ষমতা। তার দুই হাতই বেশ লম্বা। উনি চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন। তাকে ভালো করে ধরতে পারলে শহীদুল্লাহর চাকরি হবে। জয়নাল শহীদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে রফিকুজ্জামানের কাছে যায়। তার কাছে গিয়ে জয়নাল হঠাৎ রফিকুজ্জামানের পা জড়িয়ে ধরে। রফিকুজ্জামান কোনো মতে পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন, কিরে! তোর আবার কী হয়েছে? তুই এমন করছিস কেন?
স্যার! আমারে একটা উপকার করতে হইব। এই যে ছেলেডারে দেখতেছে! ওর নাম শহীদুল্লাহ। ওর বাড়ি আমাগো বাড়ির পাশেই। লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল। কিন্তু পড়ালেখা করতে পারল না। সংসারে খুব টানাটানি। আপনি যেই কাজ দিবেন সেই কাজই সে পারবে। কোনো রকম উল্টাপাল্টা করব না। স্যার, আমারে তো আপনি চেনেন! আমি কেমন তা তো আপনি জানেন! আমার চাইতেও শহীদুল্লাহ অনেক ভালো ছেলে।
রফিকুজ্জামান খুব ভালো করে শহীদুল্লাহকে দেখলেন। তারপর বললেন, শহীদুল্লাহ তুমি পত্রিকা অফিসে কাজ করতে পারবে?
শহীদুল্লাহ নিচু গলায় বলে, কী কাজ?
পিওনের কাজ।
পিওনের কাজ কী?
এই ধরো চা টানা এনে দেয়া। পত্রিকার ফাইল গুছিয়ে রাখা। অফিসকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। এসব আর কী।
জি পারব।
তাহলে তুমি কাজ থেকেই কাজে লেগে যাও। বাকিটা আমি দেখছি।
শহীদুল্লাহর চেহারায় খুশির ঝিলিক। সেই খুশি জয়নালের চেহারায়ও ছড়িয়ে। তাদের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দেখে রফিকুজ্জামানের ভীষণ ভালো লাগছে। তিনি ওদের দুজনকে কিছুক্ষণ ধরে দেখছেন। কিছুক্ষণ পর শহীদুল্লাহকে উদ্দেশ করে বললেন, তোমার কখন থেকে ডিউটি জানো?
জি না।
সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা। প্রতিদিন সময় মতো অফিসে আসতে হবে। দেরি করা যাবে না। সপ্তাহে একদিন ছুটি পাবে। শুক্রবার অথবা শনিবার।
জি আচ্ছা।
পরদিন সকাল ১০টায় শহীদুল্লাহ অবজারভার অফিসে আসে। রফিকুজ্জামানের কক্ষের সামনে গিয়ে সে উঁকি দিয়ে দেখে। তিনি তখনো অফিসে আসেননি। তার পাশের কক্ষে বসে সানাউল্লাহ। তিনি তাকে কাছে ডেকে বললেন, এই ছেলে! তুমি কার কাছে এসেছ?
শহীদুল্লাহ নিচু গলায় বলে, এই রুমে যে বসে সেই স্যারের কাছে।
ওই স্যার আসতে আজকে দেরি হবে। তুমি পরে এসো।
শহীদুল্লাহ কোথায় যাবে? ঢাকা শহরে সে নতুন। কিছুই চেনে না। প্রথম দিন জয়নাল তাকে শহর ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। কিন্তু কিছুই তার চেনা হয়নি। সে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। সানাউল্লাহ আবারও বলেন, কী হলো? দাঁড়িয়ে আছো যে!
শহীদুল্লাহ কোনো কথা বলে না। সে রফিকুজ্জামানকে নিয়ে ভাবে। কিছুক্ষণ পর সে সানাউল্লাহকে উদ্দেশ করে বলে, স্যার যে আমাকে ১০টায় আসতে বললেন!
সানাউল্লাহ শহীদুল্লাহর দিকে তাকালেন। ওর মলিন চেহারা দেখে তার মায়া হলো। তিনি পত্রিকার ফাইলের দিকে চোখ রাখতে রাখতে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে বসে থাকো।
শহীদুল্লাহ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর রফিকুজ্জামান এলেন। শহীদুল্লাহকে দেখে বললেন, ওহ! তুমি এসেছো? তুমি কাজ শুরু করে দাও।
শহীদুল্লাহ কী কাজ করবে বুঝতে পারে না। সে এদিকে সেদিক তাকায়। রফিকুজ্জামান নিজের টেবিলের ফাইলপত্র গোছাতে গোছাতে বললেন, তুমি একটা কাজ করো। আমার জন্য চা নিয়ে এসো। তারপর তোমার কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছি। শুরু হয় শহীদুল্লাহর চাকরিজীবন। পিওনের কাজ করে সে। তারপর পত্রিকার পেস্টিংয়ের কাজে সে সহযোগিতা করে। আস্তে আস্তে সে পেস্টিংয়ের কাজ শেখে। এভাবে তার দুতিন বছর কেটে যায়।
শহীদুল্লাহ এক সময় পেস্টার হিসেবে কাজ পায়। মাসে যা বেতন পায় তার বেশির ভাগই সে বাড়িতে পাঠায়। বাড়ির লোকদের যাতে অনাহারে থাকতে না হয় সেজন্য সে নিজে খুব কষ্ট করে। খেয়ে না খেয়ে দিন গুজরান করে।
এভাবে কিছুদিন বেশ ভালোই কাটছিল শহীদুল্লাহর। কিন্তু হঠাৎ কী এক অদ্ভুত রোগে তার বাবা মারা যায়। অসময়ে মারা যাওয়ার কারণে সংসারের পুরো বোঝা চাপে শহীদুল্লাহর ঘাড়ে। সংসারের বোঝা না যেন জগদ্দল পাথর। সেই পাথর টেনে নেয়া কি অতো সোজা! তারপরও বিরামহীনভাবে সে সংসারনামক জগদ্দল পাথরটি ঘাড়ে চেপে এগিয়ে চলছে। এতে তার মা বাবার কষ্ট আপাতত কিছুটা লাঘব হয়েছে। তবে তাদের দুশ্চিন্তা কাটেনি। মাঝেমধ্যেই অজানা আতঙ্কে বুকটা থরথর করে কেঁপে ওঠে।
শহীদুল্লাহ রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের খরচ জোগায়। সে মনে মনে ভাবে, বাবার অনুপস্থিতি পরিবারের কাউকে টের পেতে দেয়া যাবে না। যত কষ্ট হোক তা সে করবে। সে বিকেলে অফিসের ছুটির পর রাস্তার পাশে গার্মেন্টের কাপড় বিক্রি করে। রাত ১০টা পর্যন্ত এই কাজে ব্যস্ত থাকে সে। বেতনের টাকা পুরোটাই সে বাড়িতে পাঠায়। আর হকারি করে যা আয় হয় তা দিয়ে নিজের পেট চালায়। এভাবে কিছুদিন চলার পর শহীদুল্লাহ তার ছোট ভাই মহিবুলকে ঢাকায় নিয়ে আসে। তাকেও হকারি কাজে সম্পৃক্ত করে। সে দ্রুতই হকারি ব্যবসা রপ্ত করে ফেলে। দিনে দিনে তার আয়-রোজগার বাড়তে থাকে। সেও প্রতি মাসে কিছু টাকা পরিবারকে দিতে শুরু করে। এতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্য আসে পরিবারটিতে।
আছিয়া বেগমের মুখে বহুকাল পর হাসি ফুটে ওঠে। কতকাল তিনি হাসেননি তা তার মনে নেই। অনেক দিন আগে শহীদুল্লাহর জন্মের পর তিনি তাকে কোলে নিয়ে হেসেছিলেন। ছেলে জন্ম দেয়ার খুশিতে খুব হাসছিলেন। সেটাই ছিল তার জীবনের শেষ হাসি। তারপর প্রকৃতি যেন তার হাসি কেড়ে নিয়েছিল। ইচ্ছা করলেও হাসতে পারেননি। এখন তার চিৎকার দিয়ে হাসতে ইচ্ছা করছে। দুই ছেলের রোজগারে সংসারে সুখের মুখ দেখলেন তিনি। এর চেয়ে আনন্দ আর কী আছে! সেই আনন্দের মধ্যেই তিনি একদিন শহীদুল্লাহকে বললেন, বাবা তোর বিয়ের বয়স হইছে। এইবার বিয়ে কর বাবা?
শহীদুল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে বলল, ও কথা মুখে আনবেন না মা। বিয়ে করলেই এই সংসার তছনছ হয়ে যাবে। বিয়ের পরই শুরু হবে আপনার বিরুদ্ধে বদনাম গাওয়া। তারপর ভাইবোনদের বিরুদ্ধে বলতে থাকবে। আলাদা হওয়ার জন্য সারাক্ষণ আমাকে ফুসলাবে। ওসব আমার সহ্য হবে না মা!
এসব তুই কী বলিস! তাই বলে কি বিয়ে করবি না! তুই যদি শক্ত থাকিস, তাহলে ফুসলিয়ে কিছু করতে পারবে?
মা, মেয়েটি যখন স্ত্রী হয়ে আসবে তখন কি আমি তার কথা না শুনে পারব? আপনার কথা বাবা না শুনে পেরেছে?
তা ঠিক আছে। স্ত্রীর কথা তো শুনতেই হবে। তবে ভালোমন্দ বুঝে কাজ করতে হবে। সব কথা শোনা যাবে না। তুই যদি শক্ত থাকিস তাহলে ফুসলিয়ে সে কী করবে?
তারপরও মা। কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে থাকবে। তারপর এক সময় মনে হবে, সে নিশ্চয়ই ভালোর জন্যই বলছে। তখন হুট করে যদি একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসি! সেই ভুল কি শোধরাতে পারব? সংসারের যে অবস্থা, এখন আমার বিয়ে করা ঠিক হবে না। একটা পর্যায় পর্যন্ত যাক। তারপর না হয়…
এ নিয়ে তোকে আর কিছু বলতে হবে না। আমি দেখি কী করা যায়!
শহীদুল্লাহ নানা কথা বলে তার মাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। সে বলে, বিয়ে মানেই পরিবারের আরেকটি বোঝা। সেই বোঝা বহর করার শক্তি আমার নেই। তাছাড়া আরেকটি মেয়ে সংসারে আসা মাত্রই তার কিছু অধিকার জন্মায়। সেই অধিকার সে যদি একটু বেশি বেশি ফলাতে যায় তখনই ঝামেলা শুরু হবে। অধিকাংশ বউ-ই ছেলের মাকে মেয়ের দৃষ্টিতে না দেখে ছেলের বউয়ের দৃষ্টিতে দেখে। কখনো কখনো সে মনে করে, শাশুড়িই যত নষ্টের গোড়া। শাশুড়িকে আলাদা রাখতে পারলে সে নিজের মতো করে সংসার সাজাতে পারবে। তাই সে নিয়মিতভাবে শাশুড়ির বিরুদ্ধে কথা বলবে।
শহীদুল্লাহর কোনো কথাই শুনতে চান না আছিয়া বেগম। তিনি আশপাশে মেয়ে দেখা শুরু করেন। শহীদুল্লাহকেও তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু একথা সেকথা বলে শহীদুল্লাহ এড়িয়ে যায়। সে বিয়ে করতে মোটেই আগ্রহী নয়। সে তার মাকে অন্যভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে। সে বলে, এই টানাটানির সংসারে আরেকজন মানুষ এলে তো চাপ আরো বাড়বে। অন্যের মেয়ে ঘরে এনে ঠিক মতো ভরণপোষণ দিতে না পারলে কেন শুধু শুধু বিয়ে করব। তাছাড়া সে যদি বিয়ের পরই বায়না ধরে, তাকে ঢাকায় নিয়ে আসতে হবে! তখন কী করব? তখন তো রীতিমতো বিপদে পড়তে হবে। বউ নিয়ে ঢাকায় থাকতে গেলে বাড়িতে টাকা পাঠানোই মুশকিল হবে।
শহীদুল্লাহর কথা শুনে এবার ভাবনায় পড়লেন আছিয়া বেগম। তিনি কী করবেন কিংবা কী করা উচিত তা নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ভাবেন। নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন করেন। পরিবারের সংকটের কথা ভেবে ছেলেকে বিয়ে করাব না! তা কী করে হয়! ছেলে বড় হয়েছে। বিয়ে তো তাকে করাতেই হবে।

আছিয়া বেগম শহীদুল্লাহকে উদ্দেশ করে বললেন, শোন বাবা। যে মেয়ে আমাদের কথামতো চলবে না সেই মেয়ে আনব কেন? যে আমাদের সংসারের সুখ-দুঃখ বুঝবে তাকেই আমরা বউ হিসেবে ঘরে আনব। অন্য কাউকে না।
আছিয়া বেগমের পীড়াপীড়িতেই শহীদুল্লাহ বিয়ে করতে রাজি হয়। তাদের বাড়ির পাশের গ্রামের কলিমুদ্দিনের মেয়ে আনোয়ারা বেগমকে সে বিয়ে করে। বাসর রাতে শহীদুল্লাহ আনোয়ারাকে তাদের সংসারের সার্বিক অবস্থার কথা জানায়। তাকে সে বলে, সংসারের বোঝা তার কাঁধে। আনোয়ারা যেন এই সংসারকে নিজের সংসার বলে মনে করে। মনের ভুলেও আলাদা হওয়ার কথা না বলে। আনোয়ারার কাছে এটাই তার একমাত্র চাওয়া।
আনোয়ারার কাছে স্বামী দেবতার মতো। স্বামীর সংসার মানে মন্দির। স্বামীর কথা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। শহীদুল্লাহর বাসর রাতের কথাগুলো সে মনে রেখেছে। সে শহীদুল্লাহর মা ও ভাইবোনকে আপন করে নেয়। আনোয়ারাও সবার প্রিয় হয়ে ওঠে। শহীদুল্লাহর আয়-রোজগার বাড়তে থাকে। সুখে শান্তিতেই কাটে তাদের সংসার। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আনোয়ারার কোলজুড়ে সন্তান আসে। ছেলে সন্তান। আনন্দে একেবারে হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা হয় শহীদুল্লাহর।
আনোয়ারা সারাক্ষণ সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। শহীদুল্লাহর মা ব্যস্ত সংসারের কাজ নিয়ে। শহীদুল্লাহর অন্য দুই ভাই তাদের আয়ের টাকা সংসার খরচের জন্য পাঠায়। সবাই মিলেঝিলে সংসারটাকে শান্তির সংসারে পরিণত করে। কারো মধ্যে কোনো রেষারেষি নেই, মন কষাকষি নেই। এভাবেই দিন যায় মাস যায়; বছর গড়িয়ে বছর আসে। শহীদুল্লাহ বোনের বিয়ে দেয়। ভাইয়ের জন্য বউ আনে বাড়িতে। বেশ আনন্দেই কাটে তাদের সংসার।
আছিয়া বেগম মনে মনে ভাবেন, একটা ডুবে যাওয়া সংসারকে যে টেনে তুলেছে তার কথা সব সময় মনে রাখতে হবে। তিনি তার ছেলেমেয়েদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা আমার একটা কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শোন। তোমাদের বড় ভাইকে কোনো দিন ভুলে যেও না। সব সময় মনে রাখবা। সংসারে তার অনেক অবদান। সেই অবদানের কথা মনে রাখতে হবে। সে সংসারটাকে আগলে না রাখলে অথৈ সাগরে হাবুডুবু খেতে হতো আমাদের। এই সংসার টিকে থাকত না।
ছেলে-মেয়েরা আছিয়া বেগমের কথা মেনে চলে। তারা বড় ভাইকে বাপের মতো শ্রদ্ধা করে। শহীদুল্লাহও ছোট ভাইবোনদের সুখ-দুঃখ আনন্দ বেদনায় পাশে দাঁড়ায়। এভাবে বেশ আনন্দেই কাটে তাদের সংসার। কিন্তু সেই আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয় না।
কথায় বলে না, বিপদে বন্ধুর পরিচয়! শহীদুল্লাহ সেটা আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে। সে বিপদে পড়ার পর বুঝতে পারে, এই দুনিয়ায় কেউ কারো নয়। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। শহীদুল্লাহ যতদিন সংসারে দিতে পেরেছে ততদিন সে ভালো ছিল; সবার প্রিয় ছিল। সবাই তাকে পিতার মতো শ্রদ্ধা করত। সেই মানুষটার পাশে আজ কেউ নেই।
হঠাৎ এক কঠিন অসুখে পড়ে শহীদুল্লাহ। সে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিছুদিন চিকিৎসা চলার পর টাকার অভাব দেখা দেয়ায় চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। শহীদুল্লাহ ভাইবোনের কাছে টাকা ধার চায়। কিন্তু তারা অপারগতা প্রকাশ করে। তারা বলে, তাদেরই সংসার চলে না। টাকা দেবে কোত্থেকে! সবাই শহীদুল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
সন্তানদের এই আচরণে ভীষণ কষ্ট পান আছিয়া বেগম। তিনি বড় ছেলে শহীদুল্লাহর জন্য দুই হাত তুলে দোয়া করেন। শহীদুল্লাহর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ছুটে যায় তার বাবার কাছে। স্বামীর চিকিৎসার জন্য তার কাছে সাহায্য চায়। কিন্তু তিনি সাহায্য দিতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন, আনোয়ারা বেগমকে তিনি যে জমি দিয়েছেন তার বিনিময়ে তিনি টাকা দিতে পারেন। আনোয়ারা তাতেই রাজি হয়। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে ছুটে যায় ঢাকায়। সেই টাকা দিয়ে শহীদুল্লাহর চিকিৎসা করা হয়। এক পর্যায়ে সে ভালো হয়ে ওঠে।
শহীদুল্লাহ আবার জীবন সংগ্রাম শুরু করে। যোগ দেয় নতুন চাকরিতে। অল্পদিনের মধ্যেই শহীদুল্লাহর চাকরিতে পদোন্নতি হয়। বেতন বাড়ে। বড় বাসা ভাড়া নেয়। সে তার মাকেও ঢাকায় নিয়ে আসে। ছেলেমেয়েকে স্কুলে ভর্তি করায়। শহীদুল্লাহর সংসার জীবন আনন্দময় হয়ে ওঠে।
কিছুদিন যেতে না যেতেই শহীদুল্লাহর বোন অসুখে পড়ে। তার সংসারেও তেমন সচ্ছলতা ছিল না। সে বাধ্য হয়েই বড় ভাইর কাছে সাহায্য চায়। শহীদুল্লাহ নির্বিকার বসে থাকতে পারল না। সে বোনের সাহায্যে এগিয়ে গেল। তার চিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার তা করল। অনেক টাকা খরচ করেও তার বোনকে বাঁচানো গেল না।

কথায় বলে, বিপদ যখন আসে চারদিক থেকে আসে। শহীদুল্লাহর বিপদও চারদিক থেকে আসতে শুরু করল। একবোন মারা যাওয়ার পর আরেক বোন অসুখে পড়ল। সেই বোনও চিকিৎসার জন্য শহীদুল্লাহর কাছে হাত বাড়ালো। বড় ভাই কি আর ছোট ভাইবোনদের বিপদে বসে থাকতে পারে! শহীদুল্লাহও বসে থাকতে পারল না। সহযোগিতার হাত বাড়াল সে। যতটা সম্ভব বোনের চিকিৎসার খরচ দিল। কিন্তু বোনকে কিছুতেই বাঁচাতে পারল না। পরপর দুই বোন হারানোর শোক বুকে চেপে জীবনের তাগিদে নিজেকে নিয়োজিত করল। এ যেন এক রুঢ় বাস্তবতা। সবকিছু হারানোর পরও জীবনকে টেনে নিতে হয়। তার জীবনটা এমন যেন নিয়তির কাছে পরাস্ত, বিধ্বস্ত!
এরপর আরেক বাস্তবতার মুখোমুখি হয় শহীদুল্লাহ। তার ছেলে সলিমুল্লাহ লেখাপড়া শেষ করতে না করতেই চাকরি পেয়ে যায়। সেটা তার জন্য সুখবরই বটে! চাকরির শুরুতেই ছেলেটি খুব ভালো করে। দ্রুত চাকরিতে উন্নতি ঘটে। কঠিন দুঃখের মধ্যে এ যেন এক পসলা বৃষ্টি! শহীদুল্লাহ আনন্দে উদ্বেলিত হয়। কিন্তু এই আনন্দ কতদিন থাকে তা নিয়েও তার মনের মধ্যে সংশয় জাগে। সে মন খুলে কারো সঙ্গে কথা বলে না। হাসে না। সব সময় বিপদের ভয়।
শহীদুল্লাহর ছেলে সলিমুল্লাহ একদিন তাকে বলল, তার অফিসের এক সহকর্মী শাহনাজ খুব ভালো একটা মেয়ে। তাকে সে ভালোবাসে। শাহনাজকে সে বিয়ে করতে চায়।
শহীদুল্লাহ দেখল, মেয়েটি সুশিক্ষিত এবং ভালো চাকরি করে। তাছাড়া সলিমুল্লাহ নিজে পছন্দ করেছে। এই বিয়েতে অনাপত্তি জানানোর কিছুই নেই। পরে বেশ জাঁকজমকভাবেই বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পরও কিছুদিন বেশ ভালোই কাটে। কিন্তু শহীদুল্লাহর কপালে যেন সুখ সয় না।
অল্প কিছুদিন পরেই সলিমুল্লাহর সঙ্গে শাহনাজের মতবিরোধ দেখা দেয়। সলিমুল্লাহ তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। সঙ্গত কারণেই সে বাপের বাসায় থাকতে চায়। আর শাহনাজ চায় তার বাপের বাসায় থাকতে। কারণ সেও তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তাকে অনেক কষ্ট করে তার মা-বাবা লেখাপড়া করিয়েছে।

শেষপর্যন্ত সংসার টেকানোর স্বার্থে শাহনাজের দাবি মেনে নেয় সলিমুল্লাহ। মা-বাবার আপত্তি সত্ত্বেও শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ওঠে সে। সেখানে তাদের সংসার জীবন ভালোই কাটে। বিয়ের দেড় দুই বছরের মাথায় শাহনাজের কোলজুড়ে ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। এরপর তাদের সম্পর্ক আরো নিবিড় হয়। সন্তানের কারণে তাদের সম্পর্কের বন্ধনটা আরো মজবুত হয়। তাই বলে কি মা-বাবাকে ভুলে যেতে হবে!
সলিমুল্লাহর অবস্থা সে রকমই হয়েছে। মা-বাবা দাওয়াত করলেও সে যায় না। কোনো খোঁজখবর রাখে না। তাদের অসুখ-বিসুখের খবর শুনেও সে নির্লিপ্ত থাকে। দেখা-সাক্ষাৎ করার নামও নেয় না। কিন্তু তাতেও আক্ষেপ নেই শহীদুল্লাহর। তার এক কথা, ছেলে ভালো থাকুক।
হঠাৎ একদিন শহীদুল্লাহর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার খুব যে বয়স হয়েছে তা নয়। তারপরও বয়সের অসুখে তিনি কাবু। অন্য কোনো রোগ নেই বলে ডাক্তাররা শহীদুল্লাহকে জানিয়েছেন। তাহলে কিসের অসুস্থতা?
শহীদুল্লাহ মনে মনে ভাবে, জীবনের শুরুতেই অভাব অনটনে, দুশ্চিন্তায় যে শরীর ভেঙেছে তা আর ঠিক হয়নি। অকালে বাবাকে হারিয়ে মনের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাতেও অনেক ক্ষয় হয়েছে শরীর। তাছাড়া একের পর এক সন্তান হারানোর শোক তো আছেই। হয়তো এই পৃথিবী তাকে আর টানে না। প্রতিনিয়ত পরজগত তাকে হাতছানি দিচ্ছে।
ছেলের বেশি টাকা খরচ হোক তা হয়তো চাননি আছিয়া বেগম। হাসপাতালে নেয়ার দুদিনের মাথায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। শহীদুল্লাহর কান্না তখন কে দেখে! সে কান্নাকাটি করে আর বলে, মা তুমি আমাকে একা রেখে কোথায় গেলা? এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব! আমার যে সবই শেষ হয়ে গেল!
শহীদুল্লাহর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম তাকে সান্ত¡না দেয়। তাতে কি আর মন শান্ত হয়! তারপরও তো জীবন থেমে থাকে না। জীবন জীবনের নিয়মে এগিয়ে চলে। এগিয়ে নিতে হয়। এখানেই যদি শেষ হতো তাহলেও হয়তো নিজেকে সান্ত¡না দিতে পারত। কিন্তু শহীদুল্লাহর সামনে যে আরো বড় অঘটন অপেক্ষা করছিল তা কে জানত!
শহীদুল্লাহর মা ইহজগত ত্যাগের মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তার ছেলে সলিমুল্লাহর বাসায় আগুন লাগে। কোথা থেকে কীভাবে আগুন লেগেছে তা কেউ জানে না। সেই আগুনে ফ্ল্যাটের আসবাবপত্রই পুড়ে ছাই হয়নি; ঘটনাস্থলেই মারা যায় ছোট্ট শিশু রায়হানুল্লাহ। আগুনে সলিমুল্লাহ এবং তার স্ত্রী শাহনাজও দগ্ধ হয়। তাদের শরীরের প্রায় সত্তরভাগ পুড়ে যায়। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। তাদেরকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসক দল ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছে। রাতদিন পরিশ্রম করছে।
একমাত্র নাতির মৃত্যুসংবাদ শুনে শহীদুল্লাহ দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। আমার রায়হান! আমার রায়হান! বলে সে হাসপাতালের দিকে ছুটতে থাকে। সে পাগলের মতো প্রলাপ বকতে বকতে হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় সে। সলিমুল্লাহ ও শাহনাজের আত্মীয়-স্বজনদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়।

শহীদুল্লাহ বুকে পাথর চেপে রায়হানুল্লাহর লাশ নিয়ে নরসিংদীর গ্রামে যায়। নাতির লাশ দাফন করে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয় সে। ঢাকায় ফিরতে না ফিরতেই সে খবর পেল, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে পুত্রবধূ শাহনাজ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। একদিনের মাথায় দু’দুটো মানুষ লাশ হয়ে গেল! গ্রামের শুধু মানুষজনই নয়, গাছপালা তরুলতা মাঠঘাটও যেন শোকে মুহ্যমান। প্রকৃতি যেন শহীদুল্লাহর জন্য মাতম করছে। সেই মাতমের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে চারদিক থেকে শহীদুল্লাহর দুই কানে আছড়ে পড়ছে।
শহীদুল্লাহ এত শোক কী করে সইবে! সৃষ্টিকর্তাই হয়তো শোক সইবার শক্তি তাকে দেবে। সে চোখের জল ফেলতে ফেলতে শুধু বলল, হে বিধাতা, কেন আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছ! আমাকে তুমি এ কোন পরীক্ষায় ফেললে!
ছেলের বউয়ের লাশ কাঁধে নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে গ্রামে যায় শহীদুল্লাহ। সন্তানের পাশে দাফন করা হয় শাহনাজকে। পরদিন সে ঢাকায় ফিরে আসে। ছুটে যায় হাসপাতালে। শহীদুল্লাহর বংশের শেষ বাতিটিও নীভু নীভু জ¦লছে। বিধাতা বাঁচিয়ে না রাখলে আর কোনো আশা নেই!
হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে পারেনি শহীদুল্লাহ। তার আগেই হাসপাতাল থেকে তার মোবাইল বেজে ওঠে। রিংটোনের শব্দে বুক কেঁপে ওঠে তার। অস্থির ভঙ্গিতে ফোন ধরে সে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, হ্যা লো..
আমি ঢাকা মেডিকেল থেকে বলছি। আপনি কি শহীদুল্লাহ?
জি.. জি..কে বলছেন! আমার ছেলের কী খবর! কেমন আছে! ভালো আছে তো!
আমি খুবই দুঃখিত। আপনার ছেলে সলিমুল্লাহ কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে!
ছেলের মৃত্যু সংবাদ শোনামাত্র শহীদুল্লাহ একটা পাথরের মূর্তিতে পরিণত হলো। তার হাত থেকে মোবাইলটি পড়ে চৌচির হয়ে গেল। অনেকক্ষণ সে ঠায় দাঁড়িয়েই ছিল। তারপর কী ঘটেছে তা শহীদুল্লাহ জানে না। জানার কথাও না। জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়েছিল সে। লোকজন ধরাধরি করে তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। অনেকক্ষণ পর জ্ঞান ফেরে তার। আবার সে চিৎকার দিয়ে ওঠে। আমার ছেলে কোথায়! আমার ছেলে!
ছেলের লাশ শহীদুল্লাহর কাঁধে। ভয়ংকর ভারী সেই লাশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়