বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে খোকন ও শ্যামল

আগের সংবাদ

অনেক প্রস্তুতির ঈদযাত্রায় শঙ্কা : শুরুতেই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, অতিরিক্ত দামে বাসের টিকেট বিক্রি

পরের সংবাদ

ট্রেনের টিকেটের জন্য হাহাকার : ঝক্কি এড়াতে আগে ভাগে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে, কাল থেকে সব পথেই মানুষের চাপ বাড়বে

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : ঈদ মানেই যেন ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ- যার শুরু হয় যানবাহনের টিকেট সংগ্রহের দৌড়ঝাঁপ দিয়ে। এবার বাস লঞ্চের টিকেট পেতে তেমন সমস্যা না হলেও রেলের টিকেট বরাবরের মতোই সোনার হরিণ। কমলপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকেটের জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। গতকাল মঙ্গলবার বিক্রি হয় ৩০ এপ্রিলের টিকেট। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও বেশির ভাগ মানুষকে টিকেট না পেয়েই ফিরে যেতে হয়েছে। উত্তরবঙ্গের টিকেট দুপুর সাড়ে ১১টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণেও টিকেট বিক্রিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে রাজধানীর কোনো বাস কাউন্টার ও টার্মিনালে গতকাল মঙ্গলবারও যাত্রীর চাপ দেখা যায়নি। গাবতলী, মহাখালি ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ছিল অনেকটাই ফাঁকা। এখনো ঈদ উপলক্ষে সব রুটের বাসের কাউন্টারে অগ্রিম টিকেট পাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে, গতকাল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছিল অগ্রিম টিকেট প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের টিকেট বিক্রির চতুর্থ দিনে বিক্রি হয় ৩০ এপ্রিলের টিকেট। এই দিনের টিকেটের চাহিদাই ছিল সবচেয়ে বেশি। সকাল ৮টা থেকে কাউন্টারগুলো খুললেও ১০ মিনিট পর বিদ্যুৎ চলে গেলে টিকেট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে টিকেটপ্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে পড়েন। ২৮ মিনিট পর ৮টা ৩৮ মিনিটে আবার বিদ্যুৎ আসে। কিছুক্ষণ পরপরই টিকেট প্রত্যাশিরা স্টেশন চত্বরের সারিতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিলেন। প্রাইভেট ব্যাংকের কর্মকর্তা মনির হোসেন ঈদে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে গ্রামের বাড়িতে যাবেন পরিবার নিয়ে। নীলসাগর এক্সপ্রেসের টিকেট কাটবেন। তিনি জানান, অনলাইনে টিকেট না পেয়ে গভীর রাতে স্টেশনে এসে লাইন ধরেছেন। বার বার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে টিকেট বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন।
রাজশাহীর সাবিহা আক্তার জানান, রাত ৩টার দিকে সেহরি শেষে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কষ্ট করে দাঁড়ালেও টিকিট পেলে

ভালো লাগবে। কষ্ট সার্থক হবে। টিকেট না পেলে বাড়িতে যাওয়া আরো বেশি কষ্টের ও ভোগান্তির হবে। তিনি বলেন, নারীদের জন্য দুইটি কাউন্টার করায় ভালো হয়েছে।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, দুইবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এখন জেনারেটর চালু আছে। টিকেট প্রত্যাশীরা নিজ নিজ এনআইডি দিয়ে টিকেট কাটছেন। এ কারণে টিকেট বিক্রিতে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। তবে টিকেট যার, ভ্রমণ তার- নিশ্চিত করা যাচ্ছে। কালোবাজারি ঠেকাতেই রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে ঈদের এখনো ৭ দিন বাকি থাকলেও রাজধানীর বাস কাউন্টার ও টার্মিনালগুলো একেবারেই ফাঁকা। কোথাও ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর কোনো চাপ নেই। এখনো সব বাস কাউন্টারগুলোতে ২৯ ও ৩০ এপ্রিলের টিকেটের চাহিদা রয়েছে এবং টিকেটও পাওয়া যাচ্ছে। ট্রেনের টিকেট বিক্রি শেষ হলেই বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে কাউন্টারগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সহসভাপতি ও একতা পরিবহনের মালিক হাজী আবুল কালাম বলেন, বাসগুলো এখনো ফাঁকা, যাত্রীর চাপ নেই। দুই এক দিনের মধ্যেই বাসের যাত্রী পাওয়া যাবে। সবাই সড়কে দূভোগের আশঙ্কা করছে। তবে এবার সড়কের অবস্থা অন্য বছরের চেয়ে কিছুটা ভালো। তবুও উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তির শঙ্কা আছে।
শ্যামলী পরিবহনের বাবুল হাওলাদার জানান, এসি বাসের সব অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। নন এসি বাসের সব রুটের অগ্রিম টিকেট এখনো বিক্রি হচ্ছে। তবে এখনো ঈদের যাত্রী নেই। বৃহস্পতিবার শেষ অফিস করার পর থেকে ঈদযাত্রা শুরু হবে। দুপুরের পর থেকেই লোকজন যাওয়া শুরু করবে। তবে এবার লম্বা ছুটি হওয়ায় লোকজনের কোনো তাড়াহুড়ো নেই।
খুলনা রুটের দ্রুতি পরিবহনের গাবতলীর কাউন্টার মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, এখনো যাত্রীর চাপ নেই। যানজটের ভয়ে সবাই আগে ট্রেনের টিকেট কাটতে যায়। ট্রেনের টিকেট বিক্রি শেষ হলে বাসের টিকেটের জন্য আসে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রা শুরু হবে। এদিনই শেষ অফিস। এইদিন সকাল থেকে যাত্রী পাবো বলে আসা করছি। তবে এখনো আমাদের অধিকাংশ বাসই ১৫ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে।
দিগন্ত পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সৈয়দ মো. ইসলাম বলেন, যাত্রীর কোনো চাপ এখনো নেই। ৪০ সিটের বাস ২০/২২ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর কমলাপুর, আরামবাগ, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ীর বাস কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব কাউন্টার থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, ল²ীপুর, চাঁদপুর রুটের বাস যায়। সায়েদাবাদে হানিফ পরিবহনের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, যাত্রীর চাপ নেই। অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে বাস যাচ্ছে। বেশি ছুটির কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২৯ এপ্রিল থেকে ছুটি শুরু হওয়ায় এদিন ও ৩০ এপ্রিল টিকেটের চাপটা একটু বেশি। এই দুই দিনের ৮০ শতাংশ টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলোও একদম পেছনের সারির।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর লোকজনের ঈদযাত্রাও এখনো শুরু হয়নি। তাই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালও ফাঁকা। লঞ্চের কেবিনের সব অগ্রিম টিকেট গত সপ্তাহে বিক্রি শেষ হয়েছে। এখন ডেকের যাত্রীরা লঞ্চে এসেই টিকেট কাটতে পারবেন। কুয়াকাটা-২ লঞ্চের মালিক আবুল কালাম খান বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রা শুরু হবে। এই দিন থেকেই যাত্রীর চাপ বাড়বে। কেবিনের টিকেট বিক্রি আগেই শেষ হয়েছে। যাত্রীর চাহিদা থাকলে ডবল ট্রিপের জন্যও আমরা প্রস্তুত আছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়