ভুল ব্যক্তিকে সাজা : ঢাকা মহানগর দায়রা জজসহ সংশ্লিষ্টদের অপসারণ চেয়ে রিট

আগের সংবাদ

কৃষি ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি : প্রধানমন্ত্রী > পরিবেশ রক্ষা করে কারখানা ও অবকাঠামো নির্মাণ করুন

পরের সংবাদ

কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ৭ জনের প্রাণহানি : স্পিডবোট ডুবিতে নিখোঁজ তিন, বাড়িঘর-ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় আঘাত হেনেছে কালবৈশাখী ঝড়। এর তাণ্ডবে বিভিন্ন স্থানে গাছ চাপা পড়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ের সময় স্পিডবোট ডুবে মারা গেছে এক শিশু, নিখোঁজ রয়েছে দুই শিশু ও এক নারী। এছাড়া বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে মারা গেছেন এক ব্যবসায়ী। গতকাল বুধবার সকালের এই ঝড়ে অনেক বাড়িঘর, গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
চট্টগ্রাম : ফটিকছড়িতে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে রীনা আকতার (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে কাঞ্চননগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ঝরঝরি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। রীনা আকতার ওই এলাকার শাহ আলমের স্ত্রী। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. এনামুল হক বলেন, সকালে কালবৈশাখী ঝড়ে বাড়ির ওপর একটি গাছ উপড়ে পড়ে। এতে চাপা পড়েন রীনা আকতার। উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কতব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে সীতাকুণ্ডে কালবৈশাখীর কবলে পড়ে একটি স্পিডবোটডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স›দ্বীপ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন জানান, সকাল ৯টার দিকে সীতাকুণ্ড থেকে স›দ্বীপের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া একটি স্পিডবোট কালবৈশাখীর কবলে পড়ে গুপ্তছড়া ঘাটের কাছাকাছি এসে উল্টে যায়। স্পিডবোটে ২০ জনের মতো যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে ১৬ জনকে জীবিত এবং নুসরাত জাহান আলিফা (১৩) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় দুই শিশুও এক নারীসহ তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। অন্যদিকে লোহাগাড়ায় গাছের নিচে চাপা পড়ে

জিল্লুর রহমান (৪২) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় উপজেলার পুটিবিলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জিল্লুর রহমান উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের নারিশ্চা দক্ষিণ পাড়ার উলা মিয়ার ছেলে। চুনতি ইউনিয়নের নারিশ্চা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তৈয়ব উল্লাহ বলেন, জিল্লুর রহমান পেশায় একজন কাঠ ব্যবসায়ী। সকালে বৈশাখী ঝোড়ো হাওয়ায় তার কেনা কয়েকটি গাছ ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়া গাছ সরাতে গিয়ে এর নিচে চাপা পড়েন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেড ডুবে গেছে। নৌযানটিতে থাকা পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বন্দরের চার্লি অ্যাংকারেজে এ ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লা : কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ চাপায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার যাত্রী বৃদ্ধ শিশু মিয়া (৬০) নিহত হয়েছেন। নিহত শিশু মিয়া উপজেলার পূবধইর পূর্ব ইউনিয়নের খোশঘর গ্রামের মৃত নায়েব আলীর ছেলে। এ দুর্ঘটনায় ৩ বছরের শিশুসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৭ টার দিকে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার রামচন্দ্রপুর-শ্রীকাইল সড়কের সলফা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন-উপজেলার সরের পাড় গ্রামর সিএনজি চালক আবুল কাসেমের ছেলে সবুজ মিয়া (২৫), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্চারামপুর থানার নীলখী গ্রামের কাওছার মিয়ার মেয়ে ফাতেমা (১৮), নিহত শিশু মিয়ার দুই মেয়ে নার্গিস বেগম (৩৫) ও জলেখা বেগম (৩৮) এবং নাতি হোসাইন (৩)।
স্থানীয়রা জানান, সকালে সিএনজি চালিত অটোরিকশাটি আমিননগর থেকে রামচন্দ্রপুর-শ্রীকাইল সড়ক দিয়ে মেটংঘর এলাকায় যাচ্ছিল। সলফা গ্রামে পৌঁছলে এটি কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে। এ সময় সড়কের পাশে থাকা গাছ ভেঙ্গে সিএনজি চালিত অটোরিকশার উপর পড়লে গাছের নিচে চাপা পড়েন অটোরিকশাসহ সব যাত্রী। এতে সিএনজিতে থাকা শিশু মিয়ার ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এবং চালকসহ পাঁচ যাত্রী আহত হয়। আহতদের মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু হোসাইনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। অন্যদের মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে এবং একজন নিহতের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) : মৌসুমের প্রথম কাল বৈশাখী ঝড়ে বগুড়ার নন্দীগ্রামে গাছের ডাল ভেঙ্গে মাথায় পড়ে রেজাউল হোসেন এজু (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ঝড়ে বোরো ধান ও আমসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে নন্দীগ্রাম উপজেলার উপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের কবলে পড়ে মারা যাওয়া রেজাউল হোসেন নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রামের মৃত এছার উদ্দিনের ছেলে।
ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান জানান, ভোরে ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে রেজাউল ও তার স্ত্রী বাড়ির উঠানে গোবর দিয়ে তৈরি করা লাড়কি ঘরে উঠানোর কাজ করছিলেন। এসময় সজিনা গাছের একটি মোটা ডাল ঝড়ে উড়ে এসে রেজাউলের মাথায় পড়ে। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ল²ীপুর : জেলার রায়পুরে কালবৈশাখী ঝড়ে নারিকেল গাছচাপা পড়ে রুহুল আমিন (৬৩) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের মধ্য কেরোয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রুহুল আমিন ওই গ্রামের হানিফ মাঝি বাড়ির বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঝড় শুরু হয়। এ সময় রুহুল আমিন বাড়ির পাশের দোকানে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে প্রচণ্ড ঝড়ে নারিকেল গাছ পড়ে তার ওপর। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাড়িতে তার দুই ছেলে রয়েছে। তারা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।
কেরোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর বেগম রেখা বলেন, খবর পেয়ে পরিষদের সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। হাসপাতালে নেয়ার পথেই তিনি মারা যান। থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে মরদেহ দাফনের অনুমতি নেয়া হয়েছে।
বজ্রপাতে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীর মৃত্যু : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে ফসল, ঘরবাড়ি এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে করে গতকাল সকাল ৮টা থেকে এ রিপোর্ট লেখার সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল। ঝড়ো হাওয়ায় কয়েকটি ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ। বোরো ধান, ভুট্টা, সূর্যমুখী ফুল, আম ও ইটভাটার কাঁচা ইটের ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে উপজেলার বড়তাকিয়া বাজারের ব্যবসায়ী হোসেন সওদাগর ওরফে কসাই হোসেন মারা গেছেন। তার নাতি খান মো. মোস্তফা বলেন, সকালে বজ্রপাতের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমার দাদা কসাই হোসেন মারা গেছেন।
জানা গেছে, কাল বৈশাখী ঝড়ে মিরসরাই সদর ইউনিয়ন, দূর্গাপুর, ওয়াহেদপুর, কাটাছরা ইউনিয়ন সহ কয়েকটি জায়গায় ব্যাপকভাবে গাছপালা উল্টে গেছে। অনেক বাড়িতে ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে গাছপালা ভেঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী সাইফুল আহমেদ বলেন, কাল বৈশাখী ঝড়ে বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় তারের উপর বড় বড় গাছ পড়েছে। প্রায় ১০টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ভেঙ্গে যাওয়া খুঁটি পরিবর্তন গাছ সরিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
রাজধানী : টানা দাবদাহের পর গতকাল সকালের বৃষ্টিতে দারুণ স্বস্তি পেয়েছে রাজধানীবাসী। সকাল ছয়টা থেকে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠা আকাশ পৌনে সাতটার দিকেই শুরু করে বর্ষণ। সঙ্গে ছিল বজ্রপাত, কালবৈশাখী। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। এ আচমকা বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কিছুক্ষণ থমকে যায় রাজধানীবাসীর।
এদিন সকাল আটটা পর্যন্ত সোয়া এক ঘণ্টায় রাজধানীতে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কালবৈশাখীর ঝড়ে অনেক অনেক স্থানে গাছ ভেঙ্গে পড়ে। ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে ঝড়-বৃষ্টি কমে যায়। তবে সারাদিন থেমে থেমে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়েছে। আবহাওয়ার অফিস জানায়, ঝড়ের সময় রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়