ঝড়বৃষ্টি হতে পারে চার বিভাগে

আগের সংবাদ

ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক : সন্তুষ্ট নয় ভোক্তা অধিদপ্তর

পরের সংবাদ

সংঘাত বন্ধে সন্ধি শিগগিরই : আস্থা প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে কিয়েভ ও শেরিনিভে রুশ হামলা বন্ধ রাখতে ঐকমত্য

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : তুর্কি ভাষায় ‘দলমা’ অর্থ হচ্ছে পূর্ণ আর ‘বাচ’ অর্থ বাগান। দলমাবাচ প্রসাদ হচ্ছে তুরস্কের সুদৃশ্য বাগিচাসমৃদ্ধ সবচেয়ে জমকালো প্রাসাদভবন। ১৮৫২ সালে অটোমান সুলতান আবদুলমাচেদ ৩৫ টন স্বর্ণের সমান ওজনের ৫০ লাখ গোল্ড পাউন্ড ব্যয়ে ইস্তাম্বুল শহরে ৪৫ হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এ প্রসাদটি গড়ে তোলেন। এ মুহূর্তে বিশ্বের নজর অবশ্য ভিন্ন একটি কারণে নিবদ্ধ এই প্রাসাদের দিকে। কেননা, গতকাল মঙ্গলবার সকালে শান্তির অন্বেষায় এই দলমাবাচ প্রাসাদেই মুখোমুখি বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন ইউক্রেন আর রাশিয়ার প্রতিনিধিরা।
শান্তি বৈঠকের আগে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, আমরা নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ বলে ঘোষণা দিতে প্রস্তুত। যদিও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দমিত্রি কুলেবা সুস্পষ্ট জানান, জনগণ, ভূখণ্ড আর সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তারা কোনো আপস করবেন না। তবে শেষমেষ ইস্তাম্বুলের ওই তিন ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে রুশ বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তির কাছে বৈঠকে অংশ নেয়া রাশিয়ার উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোমিন অনতিবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত দেন। তিনি জানান, দুই পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের আগে পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে অবিলম্বে ইউক্রেনের কিয়েভ এবং শেরিনিভ শহর থেকে রুশ অভিযান প্রত্যাহার করা হবে।
এদিকে দুই পক্ষের শান্তিকামী অবস্থানকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানান তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ও সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। প্রাথমিক বাধা উতরে গেছি, সংবেদনশীল জটিল বিষয়গুলো নিয়ে আরো আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে আগামীতে, বলেন মেভলুত। বিগত দুই সপ্তাহের মধ্যে এটাই ছিল ইউক্রেন ও রুশ প্রতিনিধিদের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্ত হিসেবে ইউক্রেন ‘নিরপেক্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দেবে নিজেকে। অর্থাৎ, তারা কোনো সামরিক জোট, যেমন, ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। কোনো সেনাঘাঁটি বানাতে পারবে না। তবে এর বিনিময়ে তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়, যার সম্ভাব্য নিশ্চায়ক হিসেবে থাকবে পোল্যান্ড, ইসরায়েল, তুরস্ক এবং কানাডা। এছাড়া রুশ দখলে থাকা ক্রিমিয়া প্রশ্নে ১৫ বছর আলোচনা চলবে। একমাত্র পূর্ণ যুদ্ধবিরতির পরই এ বিষয়টি ফয়সালা করা হবে।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে গত সোমবার জেলেনস্কির হাতে লেখা ‘শান্তির বার্তা’ নিয়ে পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন উভয়পক্ষের স্বীকৃত শান্তিদূত বিশ্বখ্যাত চেলসি ক্লাবের সেলিব্রিটি অধিকর্তা রুশ ধনকুবের ও পুতিনের বন্ধু রোমান আব্রামোভিচ। কিন্তু খবরে প্রকাশ, জেলেনস্কির পত্রপাঠ মাত্র দূতকে উদ্দেশ্য করে গর্জে

ওঠেন পুতিন, জেলেনস্কিকে জানিয়ে দাও, ওদের আমি গুঁড়িয়ে দেব! ফলত, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের মধ্যস্থতায় দোলমাবাচ প্রাসাদে অনুষ্ঠিত ওই শান্তি বৈঠকের পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা ছিল বিস্তর। জেলেনস্কির ওই পত্রে কোনো শান্তি আলোচনার আহ্বান ছিল না। ছিল শুধু রুশ আক্রমণে ইউক্রেনের এ যাবত যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে- তার বিস্তারিত বিবরণ। অন্যদিকে, দূতিয়ালির দায়িত্ব নিয়ে মস্কো-কিয়েভ-তুরস্ক ছোটাছুটির মধ্যেই চলতি মাসের গোড়ার দিকে আব্রামোভিচ ‘বিষক্রিয়ায়’ অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে পশ্চিমা গণমাধ্যমের খবরটি গতকাল উড়িয়ে দেয় মস্কো। খবরটিকে তারা পশ্চিমাদের ‘তথ্য-যুদ্ধের অংশ’ হিসেবে অভিহিত করে।
শান্তিদূত হিসেবে আবির্ভূত হওয়া ‘পুতিনের বন্ধুকে’ তুর্কি টেলিভিশনেও দেখা যায়; টুইটারে অপর একটি ভিডিও ফুটেজে তাকে দেখা যায় এরদোয়ান ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর সঙ্গে কথা বলতে। শান্তি বৈঠকে তার উপস্থিতির বিষয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তরে ক্রেমলিন জানায়, আব্রামোভিচ কোনো সরকারি বার্তাবাহী নন। তিনি কেবল দুপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার দায়িত্বটি পালন করছেন।
এ দিকে ইউক্রেন দাবি করছে, মাসাধিককালের এ যুদ্ধে নির্বিচার রুশ গোলার আঘাতে শুধু মারিপোলেই মারা গেছেন ৭ হাজারের বেশি মানুষ। অন্যদিকে বিদ্যুতের অভাবে নিকষ অন্ধকারে ডুবে আছে কিয়েভের এক লাখ বাড়িঘর। তবে শান্তি বৈঠকের পরপর প্রত্যাশিতভাবেই চাঙ্গা হতে শুরু করেছে বিশ্বের পুঁজিবাজার। লন্ডনে দেড় এবং প্যারিস ও ফ্রাঙ্কফুর্টে ৩ শতাংশ উল্লম্ফন ঘটে সূচকের। বিশ্ববাজারে ৬ শতাংশের বেশি নেমে গেছে অপরিশোধিত তেলের দাম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়