রাজধানীর ফুটপাত থেকে নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বাংলা নববর্ষে আসছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বায়োপিক

পরের সংবাদ

দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কাল : উৎপাদনে সফল, সরবরাহে ত্রæটি

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : অবশেষে শতভাগ বিদ্যুতায়নে সরকার সফল হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা ৪৭ শতাংশ থেকে শতভাগে পৌঁছে গেছে। শহরের পাশাপাশি দেশের সব গ্রামে গ্রামে আজ বিদ্যুৎ। চরাঞ্চল থেকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কোনো জনগোষ্ঠীই বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বাদ পড়েনি। বর্তমান সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মুজিব জন্মশতবার্ষিকীতে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ১২ বছরে ৫৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন বাস্তবায়ন করেছে। এর আগে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতায়ন হয়। আগামীকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন। একই সঙ্গে তিনি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন।
কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য পেলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দুর্বলতা এখনো রয়েই গেছে। সরবরাহ লাইনের দুর্বলতার কারণে গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সরকারের উদ্যোগ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে তিনি বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সবাই তৎপরতা শুরু করেন। প্রতিটি গ্রাম, প্রত্যন্ত চরাঞ্চল ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা চিহ্নিত করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু হয়। চরাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় গ্রিডের সাহায্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব না হওয়ায় সাবমেরিন ক্যাবল ও সোলার মিনিগ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রক্রিয়া সহজ করা হয়। বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ হয়ে গ্রাহকের দ্বারে দ্বারে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য ছুটে গেছেন। কয়েক বছর আগেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদনের পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো গ্রাহকদের। কিন্তু দেশের প্রায় সব জায়গায়ই ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা হচ্ছে। যমুনা, তিস্তার দুর্গম চরাঞ্চল, ফরিদপুরের চরাঞ্চল, স›দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, আশুগঞ্জ, নিঝুম দ্বীপ, রাঙ্গাবালির

মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পাওয়া ছিল স্বপ্নের মতো। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকাগুলোর মানুষ বিদ্যুতের কথা ভাবতেও পারেনি। অথচ এসব এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে আজ বিদ্যুৎ। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, ¯্রডো ও ইডকলের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে।
যেভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে : আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে কাজ শুরু করে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে বড় বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭টি। কিন্তু ১২ বছর পরে দেশে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২১ লাখের বেশি। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৮টি। এর পাশাপাশি সোলার প্যানেলের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ময়মনসিংহ ও টেকনাফে বড় প্রকল্প নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে। একদিকে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো এবং অন্যদিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংযোগ দেয়ার মধ্য দিয়েই সরকারের টার্গেট পূরণ করেছে। আগামীতে উৎপাদনে আসছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প। বিদ্যুতের অর্ধশতাধিক প্রকল্প এখনো চলমান রয়েছে।
সরবরাহ ব্যবস্থা দুর্বল : বিদ্যুতের উৎপাদন ৫ গুণ বাড়লেও বিতরণ ব্যবস্থা এখনো সেই হারে শক্তিশালী হয়নি। দুর্বল বিতরণ ব্যবস্থার কারণে গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বর্তমানে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। গত ১২ বছরে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিদিন ২০ হাজার ৫৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমানে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ১৩ হাজার ২১৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৬ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটারের বিতরণ লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎসেবা দেয়া হচ্ছে। বিতরণ ও সঞ্চালনায় দুর্বলতার কারণে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা সমস্যা আছে। সিস্টেম লস এখন সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে। গ্রিড সাবস্টেশনের প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা আছে, কিন্তু সব জায়গায় বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। ২০২৪ সাল নাগাদ এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমরা মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করেছি। ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ আমাদের এখন ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। গত ১২ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫ গুণ বেড়েছে। আরো ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এখন শতভাগ মানুষের কাছে সরকার বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমরা পালন করেছি। আমাদের অঙ্গীকার পূরণ হয়েছে। শহর-নগরের পাশাপাশি দুর্গম পাহাড়ি ও চর এলাকার মানুষের কাছেও আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেখানে লাইন টেনে গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হয়নি, সেখানে সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করতে অনেক বাঁধা পেরোতে হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তা, ইচ্ছা ও পরিকল্পনার ফসল, আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। এই সেক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরবরাহ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই সবাই একটি টিম হিসেবে কাজ করেছে। এ কারণেই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এ অর্জন সফল হয়েছে।
এখন কীভাবে টেকসই এনার্জি পাওয়া যাবে তা নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ চলছে। গ্রাহকের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে দুর্বল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিদ্যুৎব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনায় ইআরপি, স্ক্যাডা, স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট প্রিপেইড মিটার, ভূগর্ভস্থ ক্যাবল ব্যবস্থা, ভূগর্ভস্থ উপকেন্দ্র, জিআই ট্রান্সফরমার সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ এখন চলমান। দেশীয় জ্বালানি ব্যবহারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এজন্য বাপেক্সকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কয়লা ও গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রণোদনা দেয়া অব্যাহত রয়েছে। আগামী দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উৎস হতে পারে নারায়নযোগ্য জ্বালানি। এছাড়া বায়ু বিদ্যুৎ, ওশান রিনিউয়েবল এনার্জি, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, সৌর বিদ্যুৎ ইত্যাদি আগামীর জ্বালানি মিশ্রণে ব্যাপক অবদান রাখবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়