ভ্যাকসিন নিলে দেশে আসতে লাগবে না করোনা পরীক্ষা

আগের সংবাদ

জ্বালানি যুদ্ধের মাশুল গুনছে বিশ্ব

পরের সংবাদ

পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শিগগিরই : ন্যাটোয় যাবেন না জেলেনস্কি

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দুনিয়া কাঁপানো ইউক্রেন-রুশ যুদ্ধের দুই সপ্তাহ পার হলো। এ পর্যায়ে অচলাবস্থা নিরসনে সুড়ঙ্গেও শেষ আলোর ইশারা দেখছেন আশাবাদীরা। গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, আমরা বনে, মাঠে, বেলাভূমিতে, সড়কে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। এর আগের দিন এবিসি টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আর কোনো ইচ্ছে তার নেই। তিনি বুঝে গেছেন, ইউক্রেনকে স্বাগত জানাতে এখনো প্রস্তুত নয় ন্যাটো।
জেলেনস্কি আরো বলেন, তিনি বুঝেছেন যে ন্যাটো রাশিয়াকে চটাবে না। তারা এই বিতর্কিত বিষয়ের মধ্যে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে। রুশ-অধিপতি পুতিনের অন্যতম দাবি ছিল, ইইউ এবং ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আকাক্সক্ষা ত্যাগ করতে হবে কিয়েভের। তার আরেকটি দাবি, যুদ্ধ শুরুর অব্যবহিত পূর্বে স্বাধীন দেশ হিসেবে পুতিনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক-এর স্বীকৃতি দিতে হবে ইউক্রেনের। জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তবে ইউক্রেনকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে হবে সবার আগে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার তুরস্কে চতুর্থ দফা বৈঠকে বসবে বিবদমান দুপক্ষের প্রতিনিধিরা। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এ ব্যাপারে জানান, তিনি আশা করছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বৈঠকটি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দেবে। অভিযান শুরুর পর দুটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে এটাই প্রথম বৈঠক।
এছাড়া ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেসচুক জানিয়েছেন, যুদ্ধে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে থাকা কিছু অঞ্চলের বেসামরিক মানুষকে পালানোর সুযোগ দিতে ১২ ঘণ্টার জন্য একটি যুদ্ধবিরতি করতে রাজি হয়েছে রাশিয়া। এগুলো হচ্ছে রাজধানী কিয়েভের কিছু অংশ, খারকিভ, চেরনিহিভ, সুমি ও মারিপোল। এসব শহরে কয়েক লাখ লোক খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও ওষুধের সংকটে আটকা পড়েছে।
উত্তরপূর্বের সুমি শহরের মেয়র জানান, লোকজন ইতোমধ্যেই গাড়িতে করে শহর ছাড়তে শুরু করেছেন। তবে রাজধানী কিয়েভের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমে রুশ বাহিনীর আক্রমণের মুখে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। সেখানে ইউক্রেনের চেকপয়েন্টগুলোর ওপর অব্যাহতভাবে মর্টারের গোলাবর্ষণ হচ্ছে। তবে ইউক্রেনের সৈন্যরা বলছে, তারা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং রুশ অগ্রাভিযান ঠেকিয়ে দিচ্ছে। দেশটির দাবি, রুশ হামলায় এ পর্যন্ত ৫২টি শিশু নিহত হয়েছে।
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করছে, তারা কিছু গোপন নথিপত্র হাতে পেয়েছে, যা প্রমাণ করছে যে, রাশিয়া সমর্থিত পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকায় হামলার পরিকল্পনা করছিল কিয়েভ। রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনের ভাষায় লেখা এসব নথিপত্র তারা স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি। তবে সেগুলোতে সামরিক ইউনিটের যুদ্ধ প্রস্তুতির পরিকল্পনার খুঁটিনাটি রয়েছে। অন্যদিকে সিআইএ জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন পরিকল্পনা করেছিলেন, দুই দিনের মধ্যেই কিয়েভ দখল করে নেবেন। তা না পারায় তিনি খুবই রাগান্বিত এবং হতাশ হয়ে আছেন। তাই পুতিন এখন দ্বিগুণ শক্তি বাড়াবেন এবং ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে পর্যুদস্ত করতে সব কিছুই করবেন, তাতে যতই বেসামরিক প্রাণহানি হোক না কেন।
জাতিসংঘ জানায়, যুদ্ধে এ পর্যন্ত ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে শুধু পোল্যান্ডেই আশ্রয় নিয়েছে ১৩ লাখের বেশি মানুষ। এক টুইট বার্তায় সংস্থাটি জানায়, শরণার্থীদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ ইউক্রেনীয়, ১ শতাংশ পোলিশ এবং বাকি ৬ শতাংশ লোক পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ থেকে আসা। অন্যদিকে সুমি শহরে রুশ বিমান হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে বলে খবর মিলেছে, যাদের মধ্যে রয়েছে তিনটি শিশু। ওই হামলায় একটি বাড়িতে নয়জন নিহত হয়। ছয়টি বাড়ি ধ্বংস এবং আরো অন্তত ২০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে রাশিয়ার বিমান ও মহাকাশ প্রযুক্তির ওপর নতুন কিছু নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। ফলে এখন থেকে যুক্তরাজ্যে থাকা রাশিয়ার বিমান আটক করতে পারবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। সেদেশে রাশিয়ার কোনো বিমানের প্রবেশ, অবতরণ বা চলাচল অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া ও ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠরা আরো বেশি অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়বেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। রুশ তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়