সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা : স্বামী-স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার ৭

আগের সংবাদ

সিন্ডিকেটে জিম্মি মধ্যপ্রাচ্যগামীরা > বিমান ভাড়া নেয়া হচ্ছে তিন গুণ, অনুরোধ রাখছে না এয়ারলাইন্স : বিমান প্রতিমন্ত্রী

পরের সংবাদ

টিকা কেন্দ্রে বেজায় ভিড় বিশৃঙ্খলা রোধে লাঠিচার্জ : ২৬ ফেব্রুয়ারি টার্গেট লাখো শ্রমজীবী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : অনলাইনে নিবন্ধন কিংবা এসএমএস প্রাপ্তির জটিলতায় অনেকেই নিতে পারছিলেন না করোনা প্রতিরোধী টিকা। চলমান টিকা কর্মসূচিতে প্রথম ডোজ টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে বলে ১৫ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। এর পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি কোভিড-১৯ টিকাবিষয়ক বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক ডা. মো. শামসুল হকও একই কথা জানান। পাশাপাশি তিনি বলেন, নিবন্ধন করার পরও কেউ টিকার জন্য এসএমএস না পেয়ে থাকলে তার অপেক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রতিটি কেন্দ্রকেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সবাইকে যেন এসএমএস দিয়ে দেয়া হয়। কোনো এসএমএস এখন আর আটকে থাকবে না। যদি কেউ বাকি থাকে, তাহলে সরাসরি টিকা কেন্দ্রে চলে আসবেন, আমরা টিকা দিয়ে দেব। টিকা নিতে এলে সঙ্গে একটা কার্ডও আমরা দিয়ে দেব, যেটি সার্টিফিকেট হিসেবে কাজ করবে। ২৬ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম আমরা বন্ধ রাখব। তখন দ্বিতীয় ও বুস্টার (৩য়) ডোজের কার্যক্রম চালু থাকবে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসার পরই টিকা কেন্দ্রগুলোতে টিকা প্রত্যাশীদের ভিড় বাড়তে থাকে। টিকা কেন্দ্রের ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানকার দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীদের। শুধু তাই নয়, ভিড় বেড়ে গিয়ে টিকা প্রত্যাশীদের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিপেটাও করতে হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশের টিকা কেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটে।
সরজমিনে দেখা গেছে, টিকার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন শত শত মানুষ। সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিচ্ছেন টিকা প্রত্যাশীরা। অধিকাংশই টিকার নিবন্ধন ছাড়াই টিকা নিতে এসেছেন। আবার কেউ কেউ আগে থেকেই নিবন্ধন করে এসএমএস নিয়ে টিকা দিতে এসেছেন। তারা চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে। যারা টিকার এসএমএস ছাড়া টিকা নিতে এসেছেন তারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা নিতে না পারায় কেন্দ্র থেকে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও নিবন্ধন না করে যারা টিকা পাচ্ছেন তাদের মধ্যে যেমন সন্তুষ্টি দেখা গেছে। অন্য দিকে নিবন্ধন ছাড়াই করোনা টিকা প্রাপ্তির ঘোষণার পরও অনেক কেন্দ্রে টিকার এসএমএসও চাওয়া হচ্ছে। আবার নিবন্ধনের এসএমএস পাওয়ার পরও দীর্ঘ লাইনের কারণে টিকা না পাওয়ায় অসন্তোষও রয়েছে টিকা প্রত্যাশীদের।
কবি নজরুল কলেজের মাস্টার্সের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী বিশাল শীল। তিনি জানান, করোনার টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করার পর দীর্ঘ দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কোনো এসএমএস আসেনি তার।
বিশাল বলেন, দুই মাস কেটে গেলেও টিকার জন্য এসএমএস আসেনি। এ অবস্থায় যখন জানলাম ২৬ ফেব্রুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন কিছুটা চিন্তায়ই পড়েছিলাম। তবে সরকার যেহেতু বলেছে টিকা কেন্দ্রে গেলেই টিকা দেবে সেই আশ্বাস নিয়েই টিকা কেন্দ্রে গিয়েছি। টিকা পেয়েছি।
অপরদিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে টিকা প্রত্যাশীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, টিকা দিতে গেলে তাদের কাছে এসএমএস চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে তাদের বলা হয়, এসএমএস যাদের এসেছে আগে তাদের টিকা দেয়া হবে। যাদের এসএমএস নেই তাদের পরে দেয়া হবে।
সাভারের ঘটনায় টিকাপ্রত্যাশী নাজিমুদ্দীন বলেন, আমি খুব সকালে টিকা নিতে এসেছিলাম। দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকা নেয়ার জন্য ভিড় করে। লাইনে দাঁড়ানো মানুষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এ সময় সামনের দিকে থাকা লোকদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। এই ঝামেলার জন্য আমি টিকা না নিয়েই ফিরে এসেছি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, এখানে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে মানুষ টিকা নিতে এসেছেন। যেহেতু টিকা নিতে এখন নিবন্ধন-আইডি কার্ড লাগে না সেহেতু হাজারো মানুষ এসেছে। এত মানুষ হলে বিশৃঙ্খলা একটু হবেই। আমাদের অনেক কর্মী আহত হয়েছে, ৩ জন এখনো ভর্তি আছে। এ ছাড়া প্রকাশ না করলেও পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে পুলিশ সদস্যরা সুন্দরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার ১ দিনে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়া কার্যক্রম উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি ১ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হবে। ওই দিন টিকার প্রথম ডোজের ওপর গুরুত্ব বেশি দেয়া হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম ডোজের ওপর গুরুত্ব কম দেয়া হলেও পরবর্তীতে এর স্বাভাবিক টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে। তবে সীমিত পরিসরে। কেননা তখন অনেক মানুষকে দ্বিতীয় ও বুস্টার (৩য়) ডোজের টিকা দিতে হবে। তাই ২৬ ফেব্রুয়ারির পর ২য় ও বুস্টার ডোজ গুরুত্ব পাবে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি টিকাদানের মূল লক্ষ্য শ্রমজীবী মানুষ। কারণ তাদের অনেকেই এখনো টিকা নেননি। সব ইউনিয়নে টিকা দেয়া হবে। কেন্দ্রের নাম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানিয়ে দেয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা পেলেই ১২ বছরের কম বয়সি শিশুদেরও টিকা দেয়া হবে।
শ্যামলী ২৫০ বেডের টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, আগের চেয়ে মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ বেড়েছে। তাই কেন্দ্রে ভিড়ও বেড়েছে। পর্যাপ্ত টিকা আছে। টিকা প্রত্যাশীদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় এখন ৩টা পর্যন্তও টিকা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি এক দিনেই সারাদেশে ১ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার লক্ষ্য প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকারের হিসাবে এখনো দেশের এক থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ টিকার বাইরে আছে। বাদ পড়া এসব মানুষকে টিকার আওতায় আনতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জনবল, কেন্দ্র বাড়ানোসহ মাঠপর্যায়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই বাড়ানো হচ্ছে। ১২ বছরের ঊর্ধ্ব সব নাগরিক টিকাকেন্দ্রে এলেই তিনি টিকা পাবেন। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি- সবাইকে এই ক্যাম্পেইনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়