ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

জিনেক্সট ও জেনারেশন গ্যাপ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিনেক্সট। অর্থাৎ পরের প্রজন্ম। এটা বিজ্ঞাপনের ভাষা। কোনো পণ্যের টার্গেট অর্ডিয়েন্স করা মূলত এই নবীন প্রজন্মকে। ইসপগুল, কোমরের ব্যথার ওষুধ, পেনশন প্রকল্পের মতো কিছু বিজ্ঞাপন ছাড়া বৃদ্ধদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রায় নেই। এরপর গৃহিণীদের জন্য। তেল, সাবান, ওয়াশিং পাউডার বা অল্পবয়সি দেখানোর ক্রিম এসব তাদের জন্য। কিন্তু বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য তা টিভি হোক বা মোবাইল, বাইক বা গাড়ি, জিন্স বা অন্যান্য পোশাক বেশিটাই এই নবীন প্রজন্মকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন প্রস্তুত হয়। দামি জিনিস কেনার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড এখন নির্বাচন করে নতুন প্রজন্ম। তাদের কারিগরি জ্ঞানের কাছে উড়ে যায় বাবা-মার সিদ্ধান্ত। গাড়ি বাবার জন্য হলেও মোবাইল মায়ের জন্য হলেও সিদ্ধান্ত মূলত ছেলেমেয়ের। ফাটা জিন্স হচ্ছে ট্রেন্ড, পোশাকের উন্মুক্ততা হচ্ছে প্রগতিশীলতা। বাবা-মায়ের আপত্তি ধোপে টেকে না। বেশি যুক্তি দিতে গেলে ছেলেমেয়েরা ঠোঁট উল্টে বলে, ওহ, তোমরা বুঝবে না, ইটস আ জেনারেশন গ্যাপ।
প্রায় ৫০ বছর আগেকার হংকং শহরে উন্নয়নের ছোঁয়ায় হংকং শহরের প্রায় ৬৭ শতাংশ পরিবারের অভিভাবক যুক্ত হয়ে পড়েন কর্মক্ষেত্রে। রোজ কর্মব্যস্ত জীবন কাটিয়ে তাদের নিজেদের সময় দেয়া তো দূরে থাক, তারা সন্তানদের জন্যও সময় খুঁজে পেতেন না। এভাবেই ক্রমশ দূরত্ব সৃষ্টি হতে শুরু করে পিতামাতা ও সন্তানদের মাঝে। একেই প্রথম নামকরণ করা হয় জেনারেশন গ্যাপ। এই জেনারেশন গ্যাপ মূলত দ্রুতগতির উন্নতির ফল মাত্র। আগেকার সময়ে উন্নয়ন ঘটত ধীরগতিতে। দুই বা তিন প্রজন্মের জীবনধারার ধরন অনেকটাই কাছাকাছি হতো। কিন্তু বর্তমানে উন্নয়ন ধারা অতি দ্রুতগতির হওয়াতে বিশেষত প্রবীণ বা বয়োজ্যেষ্ঠরা এই ধারার সাথে তাল মিলাতে না পেরে পিছিয়ে পড়ার কারণেই সৃষ্টি হয় গ্যাপ। একেই আমরা জেনারেশন গ্যাপ বা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের পার্থক্যও বলতে পারি। টেকনোলজির মানের দ্রুত উন্নয়নের জন্য অনেকটাই দায়ী।
ফিরে তাকানো যাক নব্বইয়ের দশকে যাদের জন্ম, কিশোর বয়সে তাদের সঙ্গে আগের প্রজন্মের ‘গ্যাপ’র দিকে। অভিভাবকদের প্রজন্ম তখন বিশ্বাস রেখেছিলেন অভিজ্ঞতা, চেনা ছকে বাঁধা পথের উপরে। অন্যদিকে আঠারো বছর বয়সিরা তখন বেছে নিয়েছিল প্রতি পদক্ষেপে ঝুঁকি ও নতুন পথের অন্বেষণের আনন্দ। উত্তপ্ত সংঘাত লেগেছিল সেখানেই! বয়সজনিত পার্থক্যের জন্যই অভিভাবকদের তখন মনে হতো, পরের প্রজন্মকে ভুলের থেকে রক্ষা করতে রক্ষণশীলতাই ঠিক পথ। শব্দটির মধ্যেই তো ‘রক্ষা’ ব্যাপারটি রয়েছে! তাই এভাবেই নতুন প্রজন্মকে শেখানো যাবে জীবনের পাঠ। এদিকে সেই রক্ষণশীলতা নতুন প্রজন্মের দমবন্ধ করে দিত একেক সময়ে। ফলে তীব্র হতো পারস্পরিক সংঘর্ষ, গভীর হতো ফাটল।
এবার ফিরে আসা যাক বর্তমান প্রজন্মের মা-বাবা ও তাদের সন্তানদের সম্পর্কের কথায়। এখন বাবা-মায়েরা যত না অভিভাবক, তার চেয়েও বেশি বন্ধু। এই পরিবর্তন অত্যন্ত ইতিবাচক। এর কারণ আগে যৌথ পরিবারে বাবা মায়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি শিশুর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত পিসি, কাকা বা মামাদের ভূমিকা। তারাই হয়ে উঠতেন বন্ধু। কখনো কখনো সেই তালিকায় যুক্ত হতেন পাড়ার পিসি বা দাদাও। ফলে বাবা-মায়েদের মধ্যে একটা অভিভাবকসুলভ গাম্ভীর্য সব সময়েই থেকে যেত। কিন্তু এখন এই অণুপরিবারের যুগে পরিবারের কাঠামোই পাল্টে গিয়েছে। কোথাও গিয়ে কয়েক দশক আগের অথরিটারিয়ান পেরেন্টিংয়ের জায়গায় বাবা-মা হয়ে উঠছেন মেন্টর। ভরসা রাখছেন অথরেটেটিভ পেরেন্টিংয়ে। ফলে সন্তানের সঙ্গে যেমন সুসম্পর্ক বজায় থাকছে, তেমনই সন্তানের সার্বিক বিকাশের দিকে নজর দিতে পারছেন তারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও কালের নিয়মে তৈরি হচ্ছে ফারাক। কিন্তু কেন তৈরি হচ্ছে এই ফারাক? যেহেতু এখন বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্ক অনেক সহজ ও খোলামেলা, কোথাও গিয়ে সন্তানের উপরে বাবা-মায়ের অতিরিক্ত অধিকারবোধ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তাদের মনে হচ্ছে, ‘আমি তো বন্ধুই। আমি তো বকব না। তাহলে সব কিছু আমাকে বলবে না কেন!’ এই অধিকারবোধ জন্ম দিচ্ছে অযাচিত কৌতূহল ও হেলিকপ্টার পেরেন্টিংয়ের। সেখান থেকেই সন্তানের সঙ্গে শুরু হচ্ছে একটা ঠাণ্ডা লড়াই। যে লড়াইয়ে বাবা-মায়ের সামনে সন্তান একেবারে চুপ করে যাচ্ছে। একসঙ্গে বসে ডিনার সারলেও সন্তান মুখ গুজে রয়েছে ফোনে অথবা পছন্দের গ্রাফিক নভেলে।
এখনকার শিশু-কিশোরদের হাতের মুঠোয় বিশ্ব! তারা যেমন স্মার্ট, তেমনই বয়স অনুপাতে পরিণত। প্রযুক্তির ব্যবহারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা বাবা-মায়ের চেয়েও এগিয়ে। আর ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির ব্যবহারের হাত ধরেই সূ²ভাবে পাল্টে যাচ্ছে আমাদের চারপাশের সমাজ ও সংস্কৃতি। কথোপকথনে প্রবেশ করছে ‘ট্রোল’, ‘বিটিএস আর্মি’-র মতো শব্দ। ইউটিউবের সাহায্যে জেনে ফেলছে তারা হরেক বিষয়। লেখাপড়াও চলছে অনলাইনে। ফলে সেই প্রযুক্তির হাত ধরে বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে তৈরি হচ্ছে একটা প্রচ্ছন্ন ফারাক! ১৭ বছরের কিশোর রেডিটের মিম দেখে হেসে কুটিপাটি হচ্ছে, বাবা-মা তখনো হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি মিম জিনিসটিতে এত হাসার কী আছে? এটা আর কিছু নয়, প্রযুক্তির ব্যবহার ও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন।
একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের সমাজ সতত বহমান ও পরিবর্তনশীল। ফলে একটা সময়ের পর সামাজিক চিন্তাধারায় ও সংস্কৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবেই। সেই পরিবর্তনের হাওয়ায় তৈরি হবে জেনারেশন গ্যাপ। এই বিষয়টা বাবা-মায়ের কাছে যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় না। আমরা যে সময়ে বড় হয়ে উঠেছি, তখনকার মূল্যবোধের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী প্রজন্মের মূল্যবোধের ফারাক থাকবে… এটাই ভাবনায় আসে না অনেক ক্ষেত্রে। সেখান থেকেই সন্তান ও বাবা-মায়ের সুষ্ঠু বন্ডিং নড়বড়ে হতে শুরু করে। এরপর আছে বাবা-মায়ের অতিরিক্ত কৌতূহল। ‘কে ফোন করেছিল রে? কার সঙ্গে বেরোবি? তোর বন্ধু ঋত্বিকার বয়ফ্রেন্ড আছে না?’… এ রকম আরো অজস্র প্রশ্ন বন্ধু হিসেবেই হয়তো আপনি করছেন, কিন্তু একটা সময়ের পর আপনার সন্তান মনে করছে, আপনি তার ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করছেন না। কখনো-কখনো আবার এই প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে থাকে প্রচ্ছন্ন জাজমেন্ট ও নিষেধাজ্ঞা। সংবেদনশীল কিশোর-কিশোরীটি সেটি বুঝতে পারে… দূরত্ব বাড়িয়ে নেয় ধীরে-ধীরে। কিন্তু আপনি কখনো ভাবেন না যে আপনার বাবা-মা আদৌ খোঁজ রাখতেন কি আপনি কার সঙ্গে মিশতেন? কে আপনার বন্ধু এটুকুই শুধু জানতেন। গোলমেলে বন্ধু হলে বলতেন, অমুকের সঙ্গে মিশো না, ব্যস এটুকুই।
সন্তান জন্মের পর থেকেই বাবা-মায়ের মনে একটা ছাঁচ তৈরি হয় তার বড় হয়ে ওঠার। একটা বয়সের পর সন্তান যখন নিজের মতো করে কেরিয়ার বা লেখাপড়ার সিদ্ধান্ত নিতে চায়… বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বকুনি দিয়ে বা বুঝিয়ে তারা সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে চান তাদের পথেই। ফলে সন্তানের মধ্যে তৈরি হয় অসন্তোষ, দূরত্বও বাড়ে সেভাবেই। খেয়াল করে দেখেছেন যে আপনার বাবা-মা আপনার পড়াশোনা নিয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতেন? আপনি কি পড়েছেন তা মূলত আপনার সিদ্ধান্ত ছিল। বাবা-মা টাকা পয়সা দিয়ে খালাস। শুধু পরীক্ষার পরে জিজ্ঞাসা করতেন, পাস করেছিস? পাস করলে সামনের মিষ্টির দোকান থেকে গোটা দশেক রসগোল্লা আসত। আপনি বলতেই পারেন যে সে যুগ আর এ যুগ আলাদা। এখন চাকরির বাজার খুব খারাপ। একটা জিনিস এই সময়ের বাবা-মা যদি ঢুকিয়ে দেন সন্তানদের মানসিকতায় তা হলো তোমায় খেটে খেতে হবে, বাপ-মার সাহায্য ভুলে যাও। তাহলেই দেখা যাবে ছেলে মেয়ে কিছু না কিছু করার তাগিদে দৌড়বে। না হলে ‘পিতার ধনে আমার পূর্ণ অধিকার’।
আগের প্রজন্ম অনেকাংশে স্কুল বা প্রাইভেট টিউশননির্ভর ছিল। এখন ইউটিউবে সার্চ দিলে সব পেয়ে যাই। একটা পাঠের জন্য অনেক দৃষ্টিকোণ পাই। বারবার করে দেখতে পারি বোঝার জন্য, শেখার জন্য। কোনো টিউটর আমাকে এতটা সময় দেবে? আর শুধু টিউব কেন? স্কুলের গুগল ক্লাসরুম রয়েছে। বিষয়ভিত্তিক এক একটা ক্লাস। তোমাদের যুগের মতো স্যারের নোট ফটোকপি করার ঝামেলা নেই। স্কুলটিচাররা ক্লাসরুমে নোট আপলোড করে দেন, তুমি ডাউনলোড করে নাও। টিচারকে প্রশ্ন করতে পারো, তিনি সময় মতো উত্তর দিয়ে রাখবেন। ডিসকাশনও করে নিতে পারো কো-স্টুডেন্টদের সঙ্গে। অসংখ্য এজুকেশনাল সাইট রয়েছে। বিষয়ভিত্তিক সাইট রয়েছে। কোনো একটাতে ঢুকে পড়ে, জেনে নাও যত প্রাণ চায়। অনেক সাইট, স্টুডেন্টের ক্ষমতা ক্যালকুলেট করে সেই অনুযায়ী ইনফরমেশন দেয়। কিন্তু সংঘাত এখানেই, কি বলছেন পূর্ব প্রজন্ম? এ ভাবে মানুষের জ্ঞানও তো শুধুমাত্র ইনফরমেশন ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল, বায়বীয়। একটা বইয়ের যে স্পর্শ, অক্ষরগুলোর ওপর দিয়ে আঙুল বোলানোর যে তৃপ্তি তা তোরা পাচ্ছিস কোথায়? জানিস নতুন বই হাতে এলে আমরা প্রাণ ভরে তার গন্ধ নিতাম। এই যে আমার ঘর ভর্তি স্তূপাকৃতি বই, আমার তিলে তিলে গড়ে তোলা লাইব্রেরি তোরা তো কেউ ফিরেও দেখিস না। হোর্হে লুই বোর্হের ‘দ্য লাইব্রেরি অব বেবেল’ তো পড়িসনি। লাইব্রেরি হচ্ছে ব্রহ্মাণ্ড। বোর্হে তার সর্বজনীন লাইব্রেরির একটা বিবরণ দিয়েছেন ঐ গল্পে। লাইব্রেরিতে অসংখ্য বই, অসংখ্য পৃষ্ঠা এবং সম্পূর্ণ অর্থহীন পৃষ্ঠাগুলোও থাকবে। মানে যার মধ্যে প্রত্যেকটি বাক্যাংশ এবং প্রতিটি শব্দ যা লেখা হয়েছে এবং যা লেখা হতে পারে। মানব সভ্যতা বেঁচে থাকবে ওই লাইব্রেরিতে।
আরে দ্যুত। তোমাদের সময় জ্ঞান কী ছিল? বায়বীয় ছিল না? অক্ষর মানেই তো অ্যাবস্ট্রাকশন। শিক্ষকের ভালোবাসা কিংবা ক্রোধের ছোঁয়া, হিউম্যান টাচ, যত হিউম্যান বিয়িংকে পড়াশুনায় সতৃষ্ণ করেছে, তার চেয়ে ঢের বেশি সংখ্যককে বিতৃষ্ণ করে তুলেছে। আর তোমাদের আইডল মাও-জে-দং বলেননি প্রয়োগবিহীন জ্ঞান অর্থহীন? তোমাদের সময়ে ফিজিক্সে মাস্টার্স করে কতজন ব্যাংকে চাকরি করছে তার ডেটা আছে? আসলে জানতেই না পড়াশুনা ছাড়াও আরো কিছু করার আছে। আমাদের জেনারেশন এটুকু অন্তত জানে- যা ভালো লাগে তা অর্জন করতে কী করতে হয়। জীবন এখন তোমাদের মতো ওয়ান ডায়মেনশনাল নয়, মাল্টি ডাইমেনশনাল।
এখন প্রত্যেকে ডুবে আছে তাদের নিজ নিজ মহাবিশ্বে। তারা বাস্তবে একা, কিন্তু আসলে একা নয়। আন্তর্জালের ম্যাজিক রিয়্যালিটিতে। কখন এমন পরিব্যাপ্ত হল ইন্টারনেট? জালের মধ্যে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে একটা সভ্যতাকে! ভার্চুয়াল আর রিয়্যালের মধ্যে দৃশ্যমান ব্যবধান ঝাপসা হয়ে আসছে। একা থাকার সময়টুকুও খেয়ে নিচ্ছে নেট। ইন্টারনেট যুগে একাকিত্বের যন্ত্রণা ঘুচে গেছে। যখনই একা লাগবে, নেট খুলে বসো, গান শোনো, সিনেমা দেখো, নিউজ পোর্টালে ঢুকে পড়ো, ব্রাউজ করো, মেল করো, ই-কমার্সের কাজ সারো ঘরে বসে। সব শেষে বা সব কাজের ফাকে সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল পৃথিবী তো রয়েইছে। পাঁচ হাজার ভার্চুয়াল বন্ধু। সঙ্গে কয়েক সহস্র ফলোয়ার। তোমার একাকিত্বের সময় কোথায়? এখানে ‘কাউকে চেনো না তুমি, তোমাকে চেনে না কেউ, এই তো ভালো…’।
তবু সংঘাত নতুন প্রজন্ম সাথে। পূর্ব প্রজন্ম জ্ঞান দেবে। নতুন প্রজন্ম পাত্তা দেবে না। এটাই কালের নিয়ম। যুক্তিজাল আছে দুপক্ষেরই। ‘আঠারো বছর বয়সি’রা সবসময় বেছে নেয় প্রতি পদক্ষেপে ঝুঁকি ও নতুন পথের অন্বেষণের আনন্দ। এই প্রজন্মই কিন্তু জন্ম দিয়েছিল একটি দেশের, বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর বজ্রনির্ঘোষ ৭ মার্চ এই প্রজন্মকে উদ্বেলিত করেছিল তুমুল ভাবে। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে নতুন প্রজন্মের উদ্যোগে যে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল তারা আজ পুরনো। কিন্তু বাংলাদেশ আজ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হয়ে উঠছে বর্তমান নতুন প্রজন্মের সৌজন্যে। কাল যারা নতুন প্রজন্ম ছিলেন আজ দেশজুড়ে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অসততা, স্বৈরাচার অনেক তীরই তাদের বিরুদ্ধে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে চলছে দুরন্ত প্রতিযোগিতা। নতুন প্রজন্মের লক্ষ্য ‘সব পেতে হবে’। লক্ষ্যের অভিমুখ নিয়ে এদের নিজের মধ্যে কোনো দোলাচল নেই। এরা জানে ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতির বাহকরা ঠিকই বাঁচিয়ে রাখবে ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার। কাজেই পুরোনদের সময় হয়েছে বোঝার যে এই প্রজন্ম তাদের পরম্পরা। এদের সমালোচনা নিছক মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়